বাংলা সিনেমার জগতের একজন অতীব জনপ্রিয় মুখ তিনি। তার অভিনয় আজও একইভাবে মনে গেঁথে আছে দর্শকদের। কখনও তিনি পতিব্রতা স্ত্রী কখনও আবার করুণাময়ী মা। পর্দায় তার অভিনয় দেখে বারবার মুগ্ধ হয়েছে দর্শকরা। খুব কম সময়ের মধ্যেই অভিনয়ের দক্ষতার কারণে উনিশের দশক অর্থাৎ সুচিত্রা সেন, সুপ্রিয়া দেবীর আমলে প্রথম সারির অভিনেত্রীদের মধ্যে নিজের নাম নথিভুক্ত করেন তিনি। কিন্তু বয়সকালে কেমন আছেন পর্দার বড় বউ সন্ধ্যা রায় (Sandhya Roy)?
ষাটের দশক থেকে আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে এক নাগাড়ে বাংলা ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করে গেছেন সন্ধ্যা রায়। তবে শুধু নায়িকা হিসেবেই নয়, পরবর্তী সময়েও নায়কের মায়ের ভূমিকাতেও চুটিয়ে অভিনয় করে গেছেন তিনি। তবে কর্মজীবনে এত সফল একজন অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত জীবনটা সুখের ছি’ল’না ছোটবেলা থেকেই। ১৯৪১ সালে ১১ এপ্রিল নবদ্বীপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়। কিন্তু তারপরই তার পরিবার চলে যায় বাংলাদেশের যশোর জেলায়।
মাত্র ৭ বছর বয়সেই তিনি মাথার উপর থেকে হা’রি’য়ে’ছে’ন পিতার ছায়া। মাত্র ৯ বছর বয়সেই মাতৃস্নেহ থেকেও ব’ঞ্চি’ত হন তিনি। এরপর তার ঠাঁই হয় মামা বাড়িতে। সেখানেও চরম অ’ভা’ব, অ’ন’ট’নে’র মধ্যেই শৈশবের দিনগুলো কাটিয়েছেন অভিনেত্রী। অ’র্থা’ভা’বে’র কারণেই তিনি চালিয়ে যেতে পারেননি লেখাপড়া। পরবর্তী সময়ে তার ঠাঁই হয় ব’স্তি’তে। একদিন ব’স্তি’র মেয়েদের সঙ্গে তিনি গিয়েছিলেন মামলার ফল সিনেমার শুটিং দেখতে। সেখানেই তার মুখ দেখে পরিচালক পশুপতিনাথ চট্টোপাধ্যায় তাকে একটি ভি’ড়ে’র দৃশ্যে অভিনয় করতে সুযোগ দেয়।
সেই প্রথমবার ক্যামেরার সামনে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন তিনি। এরপর ১৯৫৭ সালে অন্তরীক্ষ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান সন্ধ্যা রায়। রাজেন তরফদার পরিচালিত ছবি বিশ্বাস, প্রেমাংশু বোসের সঙ্গে তার অভিনয় মন জয় করেছিল দর্শকদের। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। একের পর এক সিনেমায় তিনি উপহার দিয়েছেন দর্শকদের। গঙ্গা, মায়ামৃগ, রক্তপলাশ, ঠগিনী, বাঘিনী, দর্পচূর্ণ, শ্রীমান পৃথ্বীরাজ, মনিহারা, সাত ভাই চম্পা, বাবা তারকনাথ, গণদেবতা, সূর্যতপা, নিমন্ত্রণ, ভ্রান্তিবিলাস, অমরগীতি, ফুলেস্বরী, দাদার কীর্তি, পলাতক সহ ৬০টিরও বেশি বাংলা ছবিতে কাজ করেছেন তিনি।
তবে শুধু টলিউড নয়, তিনি কাজ করেছেন বলিউডেও। যার সিনেমাগুলোর মধ্যে আসলি নকলি, পূজা কি ফুল, অপরিচিত ছিল উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও সত্যজিৎ রায়, তপন সিনহা, অঞ্জন চৌধুরী থেকে তরুণ মজুমদার, প্রায় সমস্ত জনপ্রিয় পরিচালকের সঙ্গেই কাজ করছেন তিনি। বাংলা এবং হিন্দি সিনেমার সঙ্গে সঙ্গে তিনি কাজ করেছেন যাত্রা এবং থিয়েটারেও। ১৯৬৭ সালে অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায় বিখ্যাত পরিচালক তরুণ মজুমদারকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন।
বেশ কিছু বছর সুখে সংসার করার পর উড়িয়া অভিনেত্রী মহাশ্বেতা রায়ের সঙ্গে তরুণ মজুমদারের স’ম্প’র্কের গু’ঞ্জ’নে ভেঙে যায় সন্ধ্যা রায়ের সংসার। তবে আইনত বিচ্ছেদ হয়নি কখনও। কিন্তু সেইদিন থেকে আজও একাকি জীবন কাটিয়ে আসছেন সন্তানহীন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়। একসময় তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিলেও সেইসব এখন অ’তী’ত। ২০২২ সালের জুলাই মাসে প্র’য়া’ত হন স্বামী তরুণ মজুমদার। স্বামীর মৃ’ত্যু’তে খুব ভেঙে পড়েছিলেন সন্ধ্যা রায়। চোখে জল নিয়ে শো’ক প্রকাশ করেছিলেন তিনি। অভিনেত্রীর ৮২ তম জন্মবার্ষিকীতে তাকে জানায় স্বশ্রদ্ধ প্রণাম।