সোনালি দশক অর্থাৎ সেই নব্বইয়ের দশক। একের পর এক মন ছুঁয়ে যাওয়া ছবি, দর্শকদের উচ্ছ্বাস, রোমাঞ্চ, আর সিনেমার প্রতি এক গভীর প্রেম। তখনই বলিউডে পা রেখেছিলেন এক বাঙালি পরিচালক, যিনি নিঃশব্দে আপন প্রতিভার ছাপ রেখে গিয়েছিলেন। প্রচারের আলোয় কখনও আসেননি, বরং নিজের কাজেই বিশ্বাস রাখতেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বলিউডের অনেক নামি পরিচালকের নাম সামনে এলেও তিনি থেকে গিয়েছিলেন সাধারণ মানুষের মনের কোনায়। সম্প্রতি তাঁকে নিয়ে নতুন করে আলোচনায় মেতে উঠেছিলেন অনেকে। কারণ, তিনি আবার ফিরতে চেয়েছিলেন সেই পুরনো স্মৃতি জাগানো ছবিগুলির সিক্যুয়েল নিয়ে।
অনেকেই হয়তো ভাবছিলেন, ফের একবার সেই পুরনো জাদু ফিরে আসবে বড় পর্দায়। কিন্তু হঠাৎই সব থমকে গেল। জীবনের অনিশ্চয়তা আমাদের বারবার নতুন করে মনে করিয়ে দেয়, কত সহজেই এক মুহূর্তে সব বদলে যেতে পারে। তাঁর এই হঠাৎ বিদায়ের খবর শোকের ছায়া ফেলেছে গোটা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। যাঁরা তাঁকে কাছ থেকে চিনতেন, তাঁরা জানতেন—এই মানুষটির মনে কত স্বপ্ন ছিল এখনও অসম্পূর্ণ।
জানা গিয়েছে, সোমবার সকালে মুম্বইয়ের মাধ এলাকার নিজের বাসভবনে আচমকাই অসুস্থ বোধ করেন পরিচালক পার্থ ঘোষ। তখন বয়স হয়েছিল ৭৫। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, পার্থদা সেদিন সকালে হাঁটার জন্য বাড়ির বাগানে গিয়েছিলেন। হাঁটতে হাঁটতেই বুকের মধ্যে অস্বস্তি শুরু হয়। প্রথমে তাঁকে তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে অন্য একটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার পথে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
‘অগ্নিসাক্ষী’, ‘গুলাম এ মুস্তাফা’, ‘হান্ড্রেড ডেজ়’-এর মতো ছবির স্রষ্টা ছিলেন পার্থ ঘোষ। নব্বইয়ের দশকে বলিউডে তাঁর পরিচালিত ছবিগুলি শুধু বাণিজ্যিক সাফল্য পায়নি, সমালোচকদের কাছেও প্রশংসিত হয়েছিল। ঋতুপর্ণা জানান, পার্থদা ছিলেন মাটির মানুষ। প্রচারের আলোয় নিজেকে আনতে একেবারেই আগ্রহী ছিলেন না। একের পর এক হিট ছবি দিয়েও আত্মপ্রচারের কোনও চেষ্টাই করেননি। নিঃসন্তান এই দম্পতির হঠাৎ এই শোকের খবর তাঁর স্ত্রীকে গভীরভাবে আঘাত করেছে।
আরও পড়ুনঃ বুবলাইয়ের অশান্তিতে জেরবার মুখার্জি পরিবার! বাবার ফটো নিয়ে অযথা আদিখ্যেতা বুবলাইয়ের! স্বতন্ত্র এই ঝামেলা সামলে থেকে যেতে পারবে কি কমলিনীর সংসারে? আগামী দিনে কি হতে চলেছে চিরসখা ধারাবাহিকে?
সবচেয়ে কষ্টের বিষয়—সম্প্রতি তিনি ‘অগ্নিসাক্ষী’ ও ‘হান্ড্রেড ডেজ়’-এর সিক্যুয়েল নিয়ে নতুন করে পরিকল্পনা শুরু করেছিলেন। নতুন প্রজন্মের দর্শকদের জন্য এই কালজয়ী গল্পগুলি আবার তুলে ধরার ইচ্ছে ছিল তাঁর। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর বাস্তবে রূপ পেল না। বলিউডের এই বাঙালি পরিচালকের এমন আকস্মিক প্রস্থানে শোকস্তব্ধ তাঁর সহকর্মী থেকে শুরু করে চলচ্চিত্রপ্রেমীরা।