শৈশবের স্মৃতিতে উদয়শঙ্কর কোনও তারকা নন তিনি শুধু বাবা। বাড়িতে মানুষের ভিড় দেখলে ছোটবেলায় মনে হত সব বাবাকেই যেন এত মানুষ দেখতে আসে। অথচ তাঁর আচরণে কখনও ছিল না তারকা সুলভ দূরত্ব বা আড়ম্বর। বাবা মা আমাদের বড় করেছেন সবচেয়ে সাধারণ ভাবে একেবারে মাটির কাছাকাছি থেকে। দাদা হস্টেলে পড়লেও আমি সারাক্ষণ ওঁদের সঙ্গে ঘুরেছি নানা শহর গ্রাম দেখেছি অনেকে বলেছেন এতে পড়াশোনার ক্ষতি হয়েছে কিন্তু আমি জানি এভাবেই জীবনকে কাছ থেকে অনুভব করেছি আর সেটাই আজ আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
আমার বাবা মা কখনও বাড়ি জমি গাড়ি রেখে যাননি রেখে গিয়েছেন মূল্যবোধ। বাবা বারবার শিখিয়েছেন কখনও টাকা আর নামের পিছনে ছুটবি না ভাল মানুষ হলে সব কিছু নিজে থেকেই আসবে আর লোভ করলে সবই দূরে সরে যাবে। বাবার কখনও অনুষ্ঠানে ভরা দিন আবার কখনও দীর্ঘ বিরতি আর্থিক টানাপড়েন এসেছেও কিন্তু কোনও দিন আমাদের টের পেতে দেননি। সচ্ছলতা আর অনটনের মাঝেও যে সমতা ধরে রাখা যায় বাবা মা সেই পাঠই আমাদের শিখিয়েছেন বলে আজ আমার চাহিদা খুবই সামান্য।
বাবা মৃত্যুর ঠিক আগে আমার মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন জীবন যাই হোক নাচ ছাড়িস না অর্থ আসুক বা না আসুক নাচকে ছাড়বি না। অভিনয়ের প্রতি টানটাও ওঁর থেকেই এসেছে তাই নাচ আর অভিনয়ের কাছে ফিরলে আমি সবচেয়ে শান্তি পাই। ছেলেদেরও শিখিয়েছি মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা রাখার শিক্ষা যা বাবা মা আমায় দিয়েছিলেন। যদি মেয়ে থাকত তাকেও একই কথা বলতাম কারণ মানুষের প্রতি সম্মানটাই আসল।
বাবার জন্মদিনে শান্তিনিকেতনের সৃজনী শিল্পগ্রামে হয়ে গেল উদয়শঙ্কর নৃত্য উৎসব যেখানে রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে বাইশটি নৃত্যদল অংশ নিলেন। বাবা সবসময় বলতেন নাচে প্রাণ থাকতে হবে এই শিল্পের ভেতর জীবনকে বোঝার কত শিক্ষা লুকিয়ে থাকে তা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বুঝেছি। উদয়শঙ্করের নৃত্যশৈলী শেখাতে গিয়ে উপলব্ধি করেছি জীবন আর নাচ একে অপরের সঙ্গে কী গভীরভাবে জড়িয়ে আছে এবং যা জীবনে করব না তা নাচেও থাকা উচিত নয়।
আরও পড়ুনঃ ‘মোটা দাদাই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে…আমাদের জন্য খুব কঠিন এটা!’ সব্যসাচীর আচমকা বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্তে ভেঙে পড়লেন সায়ক! সাময়িক সিদ্ধান্ত নাকি গভীরে রয়েছে পারিবারিক কোনও টানাপোড়েন? কিসের আভাস দিলেন সায়ক?
আজও আমি বাবাকে নতুন করে চিনছি ওঁকে বোঝার এই যাত্রার শেষ নেই। নাচ আমাদের মনকে এক সুতোয় বেঁধে রাখে মনকে পরিষ্কার করে মানুষকে আরও ভাল হতে শেখায় আর অনুপ্রেরণা দেয়। আমার ছাত্রীরা আজ শিক্ষক হয়ে এই নৃত্যধারা এগিয়ে নিচ্ছেন আমার দুই পুত্রবধূও এই শৈলী ধারণ করছেন। ঈশ্বর যেন আমার হাতে ওদের শেখান সেই অনুভূতি নিয়েই আমি এগিয়ে চলেছি কারণ এই নাচ শুধু শিল্প নয় এটি এক ধরনের সাধনা।






