‘গরমে তোষক ভিজিয়ে শুয়েছি! রিক্সা ভাড়া দেওয়ারই টাকা ছিল না সেখান থেকে কলকাতায় পড়তে এসেছি নিজের জেদে!’ নারী দিবসে মিমির উড়ানকে সম্মান আমাদের!
টলিপাড়ার অত্যন্ত পরিচিত মুখ মিমি চক্রবর্তী। শিশু থেকে বৃদ্ধ এমন কেউ নেই যে চেনে না অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীকে। সম্প্রতি সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকারে অনেকগুলি বিষয় তুলে ধরেছেন অভিনেত্রী। তিনি জানিয়েছেন “আমি জলপাইগুড়ির মেয়ে, এমন একটি জায়গা সেখানে মানুষ স্বপ্ন দেখত না, কারণ ওখানকার মানুষ জীবনকে অন্যভাবে বোঝে। দশটা-পাঁচটার চাকরি, পাড়ায় আড্ডা, ভাতঘুম এরই মধ্যে সাজানো তাদের জীবন। ছোট থেকেই এই গড়পত্তার জীবন আমার একদম পছন্দ ছিলনা। দিদি পড়াশোনা গান নাচ নিয়ে থাকত আর আমি ব্যাডমিন্টন, কবাডি খেলে বেড়াচ্ছি। তবে কেউ আসত না আমার খেলা বা জয় দেখতে, এমনকি মা বাবাও না।”
তিনি এও বলেছেন “মা বাবার চিন্তার কারণ ছিলাম আমি। সবাই বলত এরকম মেয়ে হলে মেয়ের বিয়ে দিতে পারবে না। আমি খালি বিশ্বাস রেখেছিলাম ভগবানের ওপর। তিনি রাস্তা দেখবেন। বড়পিসির মেয়ের বিয়েতেই প্রথম কলকাতায় এসেছিলাম। ইচ্ছে ছিল কলকাতার কলেজে পড়ার কিন্তু মা বলেছিল “জলপাইগুড়িতে কলেজ যাওয়ার রিক্সা ভাড়া দিতে পারছি না আর কলকাতা, অসম্ভব। আমারও জেদ, দুইদিন না খেয়ে ছিলাম ফলে শেষে তারা বাধ্য হন। প্রতিবেশীরা বলেছিলেন এখানকার কলেজের ফর্ম তুলে রাখ আবার তো ফিরতেই হবে। বাবাও সঙ্গে এসেছিলাম। প্রথমেই শর্ত, পিসির বাড়ির কাছে কলেজে ভর্তি হতে হবে, মেয়ে বলে কথা। আসলে মেয়েদের পক্ষে কিছুই সোজা হয়না।”
অভিনয় জগতে কাজ শুরু কিভাবে? কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা? তিনি জানিয়েছেন “আমি অভিনয় শুরু করেছিলাম চ্যাম্পিয়ন ধারাবাহিক থেকে। সেটাও সহজ ছিল না অনেক নতুন মুখ এসেছিল অডিশনের জন। এখনও মনে পড়ে আমরা সবাই সাজতে ব্যস্ত, তখন তিনজন নাম করা অভিনেতা আসে আমাদের মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিয়ে বলেছিলেন এরা সব বেরিয়ে যাবে তারপর আমরা সাজবো। আমাদের সবাইকে চল্লিশ ডিগ্রি তাপমাত্রায় বাইরে দাড় করিয়ে রেখেছিল।”
“এখনকার অভিনেতা অভিনেত্রী হলে হয়তো পারতো না এখন তো সকলেরই একজন ম্যানেজার থাকে, বাউন্সার থাকে। তবে লোকেদের কথা তাতেও থামেনি অনেক শুনেছি, হবে না, পারবে না কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। এখন তো মানুষ কত তাড়াতাড়ি আত্মহত্যা করে ফেলে দেখলেও খারাপ লাগে। একসময় আমরাও গেছে, তোষকের মধ্যে জল ঢেলে ঘুমিয়েছি গরমের থেকে বাঁচার জন্য। তোয়ালে ভিজিয়ে শুনেছি। এই ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই বলতে শুনেছি আমি, গ্রামের মেয়ে কিছুই করতে পারবে না, অভিনয় হবে না এর দ্বারা। যদিও আজ তাদের মুখ দেখতে পাওয়া যায়না।” বলেছেন অভিনেত্রী।
সবটা ঘটনা কি শুধু মহিলা শিল্পী হওয়ার কারণে আপনার কি মনে হয়? তিনি জানিয়েছেন “আমি সবটাই করেছি। নিজের জন্য, নিজের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য। মেয়ে বলে পিছিয়ে যেতে হবে আমি মানি না। আজও ইন্ডাস্ট্রিতে মেয়েদের কম পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। সমস্ত মহিলা শিল্পী যদি এর বিরুদ্ধে কথা বলে তাদেরই সমস্যাটা ঠিক করা সম্ভব কিন্তু এখানে কেউ এক হয়ে কাজ করতে রাজি নয়। আজ দেখছি একে অপরের মুখ দেখেনা কাল আবার দেখছি একে অপরের গলা জড়িয়ে ঘুরছে, এইসব আমার দ্বারা হয়না। তাই পার্টি, উল্লোর আমি থেকে দূরে থাকি। বই, কাজ, পোষ্য নিয়েই আমি খুশি। আমার যেসব বন্ধুবান্ধব আছে তারা সারাজীবন থাকবে। জানি টলিউডে টাকা কম তবে দু‘লাখ টাকায় কাজ করতে পারব না। বলিউডে এসব হয়না।”
তিনি এও বলেছেন “সবাই দেখি একই প্রশ্ন করে মিমি বিয়ে করছে কবে? আমিই একমাত্র যে প্রশ্ন তুলি কিন্তু লাভ কি? আমি ১০ লাখে অ্যাড করতে চাইছে ঠিকই আর একজন ১ লাখে করে দেবে। সবাই চায় আমাকে বা আমাদের ক্যাটরিনার মতো দেখতে লাগুক, কিন্তু তার সিকিভাগও দেয়না ইন্ডাস্ট্রি। মুম্বাইয়ের প্রযোজনা সংস্থা ক্যাটরিনার বিশেষ খাওয়ারের খরচা দেয় কিন্তু এখানে…? লোকেরা নিজেরাই কম পয়সায় চালাতে পারেনা, আবার আমাদের নিয়ে ট্রোল…। মোটা মেয়ে, কালো মেয়ে, বুড়ো মেয়ে। শাহরুখ খান এখনও নায়ক আর মাধুরী দীক্ষিত…? এইতো অবস্থা।”
আরো পড়ুন: জলসায় বিরাট খবর! একসঙ্গে ফিরছেন শন, প্রতীক, দেবচন্দ্রিমারা! টিআরপিতে এবার হবে রমরমা!
“আমি বলবো না আমি ভুল করিনি, আমিও পরনির্ভর হতে চেয়েছিলাম কিন্তু আঘাত পেয়ে আমিও বদলেছি। মেয়ে হিসেবে নয়, এখন মানুষ হিসেবে বাঁচি। এখনও সমাজে মেয়েরা মার খায়। আমি মনে করি মেয়েদের শেখাতে হবে হাত ভালোবাসার মানুষের হলেও গুড়িয়ে দাও। অসম্মানিত হলে চিৎকার করে বলো। অর্থ উপার্জন করে নিজের জন্য জমাও। আমি জানি মা বাবা ছাড়া আমার আর কেউ নেই তবে এটা আমার দুর্বলতা নয়, আমার শান্তি” জানিয়েছেন অভিনেত্রী।