নিঃসন্দেহে মহানায়ক ‘উত্তম কুমার’ (Uttam Kumar) ও ‘সুপ্রিয়া চৌধুরী’র (Supriya Choudhury) সম্পর্ক বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায়। যদিও তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে রয়েছে দ্বিমত, তবুও যাঁরা এই দুই তারকাকে কাছ থেকে চেনেন, তাঁদের কাছে এই প্রেম কোনও সাধারণ প্রেম ছিল না। ব্যক্তিগত জীবন ও পেশার মেলবন্ধনে এই দুই মানুষ একে অপরের প্রতি যে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পোষণ করতেন, তা তাঁদের সহশিল্পীদের চোখেও পড়ে গিয়েছিল বহুবার। সেই কারণেই ‘সুচিত্রা সেন’ (Suchitra Sen) থেকে মাধবী মুখোপাধ্যায় (Madhabi Mukherjee) , সকলেই এই সম্পর্ককে শ্রদ্ধার চোখে দেখেছেন।
মাধবী মুখোপাধ্যায় তাঁর আত্মজীবনীতে উত্তম ও সুপ্রিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বের নানা স্মৃতি তুলে ধরেছেন। সে এক রসিকতায় ভরা সম্পর্ক, যেখানে প্রতিযোগিতা ছিল না, ছিল না কে বড় আর কে ছোট তার হিসাব। বরং একসঙ্গে শ্যুটিং করতে গিয়ে তাঁরা সময় কাটাতেন হাসি, গল্প আর খাওয়া-দাওয়ায়। স্মৃতির পাতা থেকে তুলে এনে এমনি এক অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন মাধবী মুখোপাধ্যায় নিজের আত্মজীবনীতে।
ছয়ের দশকের শেষভাগে এক ছবির আউটডোর শ্যুটিংয়ে মাধবী, উত্তম, সুপ্রিয়া ও অনুভা ঘোষ ছিলেন একসঙ্গে। সেই সময়েই ঘটে যায় এক মজার ঘটনা, যেটা আজও মাধবীর স্মৃতিতে অমলিন। একদিন শ্যুটিংয়ের ফাঁকে মাধবী খেয়াল করেন, উত্তম ও সুপ্রিয়া নেই, বরং একটি ঘরে দরজা বন্ধ করে কথা বলছেন, আর পাশের ঘরে রয়েছেন মাধবী ও অনুভা ঘোষ। যদিও মহানায়কের ঘরের দরজা বন্ধ, জানালা ছিল খোলা।
এই দেখেই মাধবীর মাথায় আসে এক মজার বুদ্ধি। তিনি পাশের গাছ থেকে হাতে কিছু নয়নতারা ফুল ছিঁড়ে নিয়ে ছুটে যান জানালার ধারে এবং সেখান থেকে ভিতরে একমনে গল্প করতে থাকা উত্তম-সুপ্রিয়ার দিকে ছুঁড়তে থাকেন ফুল। এই অপ্রত্যাশিত পুষ্পবৃষ্টিতে চমকে যান উত্তম ও সুপ্রিয়া। অবস্থা সামলে ওঠার আগেই মাধবী উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে ওঠেন, “তোমাদের সেবায় তুষ্ট হয়ে পুষ্পবৃষ্টি করছেন স্বর্গের দেবতারা!”
আরও পড়ুনঃ দর্শকদের জন্য দুঃসংবাদ, মাত্র ১০ মাসেই শেষ! স্টার জলসা জনপ্রিয় ধারাবাহিক বন্ধের মুখে!
হঠাৎ এই রসিকতা শুনে হাসিতে ফেটে পড়েন উত্তম ও সুপ্রিয়া দুজনেই। সে মুহূর্তে উপস্থিত সকলেই বুঝেছিলেন, এই তিনজনের সম্পর্ক কেবল সহশিল্পীর ছিল না, বরং ছিল সত্যিকারের বন্ধুত্বে। এই ঘটনাটি আজ হয়তো শুধুই একটি স্মৃতি, কিন্তু আজও, উত্তম-সুপ্রিয়ার জীবনের এমন ছোট ছোট মুহূর্ত আজও বাংলা সিনেমার অনুরাগীদের মনে রেখে যায় এক নির্ভেজাল আনন্দের ছাপ।
