টলিউড অভিনেত্রী ‘পাপিয়া সেন’ (Papiya Sen) -এর জীবন যেন এক কঠিন লড়াইয়ের গল্প। ২০১৮ সালে ক্যা’ন্সারের মতো ভয়ঙ্কর রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর অনেকেই ভেবেছিলেন হয়তো আর তাঁকে পর্দায় দেখা যাবে না। কিন্তু অবিশ্বাস্য মানসিক জোর আর চারপাশের মানুষের ভালোবাসা তাঁকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে। একসময় যখন মনে হয়েছিল এটাই জীবনের শেষ অধ্যায়, তখনই তিনি নিজের ভেতরের শক্তিকে জাগিয়ে তুলেছিলেন। দীর্ঘ চিকিৎসা, অগাধ ধৈর্য আর আত্মবিশ্বাস তাঁকে আজ আবার একদম সুস্থ করে তুলেছে।
তবে এই সুস্থ হয়ে ওঠার পথে তাঁর পরিবার ছিল সবচেয়ে বড় ভরসা। বিশেষ করে দাদা ‘সব্যসাচী চক্রবর্তী’ (Sabyasachi Chakraborty) এবং বৌদি ‘মিঠু চক্রবর্তী’র (Mithu Chakraborty) সঙ্গে তিনি সময় কাটিয়েছেন দেশ-বিদেশ ঘুরে। যখন মিঠু ক্যা’ন্সারে আক্রান্ত হন, তখন আবার একইভাবে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন পাপিয়া। একে অপরের পাশে থেকে কঠিন সময়ে লড়াই করার এই উদাহরণ চক্রবর্তী পরিবারকে আলাদা মর্যাদা দিয়েছে। কোনও সংকটকেই তারা একা মোকাবিলা করেননি।
দুঃসময়েও সবাই সবার পাশে থেকেছেন, আর এটাই পাপিয়ার কথায় তাঁর সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। তবে জীবনের বিরতি শুধু অসুস্থতার কারণে আসেনি। একসময় মেয়ের যমজ সন্তানদের বড় করে তোলার দায়িত্বও একা হাতে নিয়েছিলেন তিনি। স্বইচ্ছায় সাময়িকভাবে কাজ থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন। পরে যখন হঠাৎ করেই ক্যা’ন্সার ধরা পড়ে, তখন লড়াইটা আরও কঠিন হয়ে ওঠে। তবুও কখনও হাল ছাড়েননি। মনের জোরে ভর করে সামনে এগিয়েছেন। জীবনের কঠিন সময়েও পরিবারের পাশে থেকেছেন।
এমনকি অভিনয় থেকে দূরে থাকলেও স্বামী রাজা সেনের ছবির কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, বিশেষত হিসাবনিকাশের মতো জটিল দায়িত্ব সামলেছেন মন দিয়ে। অবশেষে সেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটল, ছোটপর্দায় তাঁর প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে। বহু বছর আগে লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখাতেই তাঁকে শেষবার দেখা গিয়েছিল ‘চোখের তারা তুই’-এ। আর এবার আবারও একই লেখিকার কলমে তৈরি চরিত্রের হাত ধরে ফিরলেন তিনি। জি বাংলার নতুন ধারাবাহিক ‘কনে দেখা আলো’-তে ঠাম্মির চরিত্রে দেখা যাবে তাঁকে।
আরও পড়ুনঃ হৃদযন্ত্রে জটিল সমস্যা! গুরুতর অসুস্থ হাসপাতালে ভর্তি অভিনেত্রী মধুরিমা চক্রবর্তী! বর্তমান অবস্থা স্থিতিশীল নয়, কি জানালেন চিকিৎসক?
এতদিন পর আবার পর্দায় ফেরার অভিজ্ঞতা তাঁর জন্য অন্যরকম। তিনি নিজেও স্বীকার করেন, এত ভালোবাসা আর সম্মান তিনি কল্পনাও করেননি। সহকর্মীদের উষ্ণ অভ্যর্থনা থেকে শুরু করে দর্শকের শুভেচ্ছা বার্তা—সবই তাঁকে আরও আবেগপ্রবণ করেছে। তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় বিস্ময় এই যে, এত দীর্ঘ বিরতির পরও মানুষ তাঁকে ভুলে যাননি। দর্শক আজও আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন তাঁর অভিনয় দেখার জন্য। তিনি প্রমাণ করে দিলেন, যতই জীবনের পথে অন্ধকার আসুক না কেন, ভালোবাসা আর ইচ্ছাশক্তি থাকলে আলোয় ফেরা অসম্ভব নয়।