কেমন কাটত তারকাদের নববর্ষ? শুনলে নস্টালজিক হবেন আপনিও

Stars Shared Their Thoughts On Nababarsha: নববর্ষ মানে বাঙালির আবেগ, কা’লবৈশাখী, বৃষ্টি ভেজা নাচ, ক্যালেন্ডার আর মিষ্টির প্যাকেট। সম্প্রতি প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমে নববর্ষ পালন নিয়ে নিজেদের মনের কথা তুলে ধরতে উপস্থিত ছিলেন অপরাজিতা আঢ্য (Aparajita Adhya), শন বন্দ্যোপাধ্যায় (Sean Banerjee), দেবোত্তম মজুমদার (Debottam Majumdar), ঈপ্সিতা মুখোপাধ্যায় (Ipshita Mukherjee) এবং অনুষা বিশ্বনাথন (Anusha Bishwanathan)নববর্ষের (Nobo Borsho) বিশেষ আড্ডায় কিন্তু সময় মতো একে একে হাজির হলেন সবাই কারণ তাদের মনে যে বাঙালির উৎসব তাদের নিজেদের উৎসব পুরো তাই যে অন্তর এর অ’নু’ভূ’তি সেই গল্পই করবেন তাঁরা।
ক্যামেরা চালু হওয়ার আগেই অপরাজিতা  আঢ্য তাঁর দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছিলেন। ঈপ্সিতা ও অনুষা তত ক্ষণে একে অপরের ছবি তুলতে ব্য’স্ত ছিল। নতুন ধারাবাহিকের শুটিং ফ্লোর থেকে শন আসবেন। তাঁর অপেক্ষা শুরু হতে না হতেই হাজির তিনি।দেবোত্তম যে ভাল গান গাইতে পারেন, সে কথা ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই জানেন। দেবোত্তমের গলায় গান বেঁধে  ‘তুমি ডাক দিয়েছ কোন সকালে’ শুরু হল আড্ডা।
আড্ডার শুরুতেই প্রথম প্রশ্ন অতিথিদের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়, সমাজমাধ্যম এবং ব্য’স্ত জীবনের মাঝে বাংলা নববর্ষের কি আলাদা কোনও গুরুত্ব রয়েছে? অপরাজিতা আঢ্য কিন্তু বিশ্বাস করেন, সমাজমাধ্যমের যুগে যে কোনও উৎসবেরই আলাদা গুরুত্ব রয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষকে দেখানোর জন্যই হোক বা অন্য কোনও কারণে, বছরের বিশেষ দিনগুলোর গুরত্ব হা’রি’য়ে যায়নি। কিন্তু সমাজমাধ্যমের চাপে দিনগুলোর তাৎপর্য এবং মাধুর্য্য যেন হা’রি’য়ে গিয়েছে।’’ পয়লা বৈশাখের দিন ছেলেবেলাকে মিস্‌ করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘বড়মার হাতের লুচি এবং মুগের ডালের কথা খুব মনে পড়ে। বাবা-মাকে মিস্‌ করি। আর বন্ধুদের সঙ্গে হালখাতা।’’ কথাপ্রসঙ্গেই কে ক’টা মিষ্টির প্যাকেট পেল এবং অধুনা লু’প্ত’প্রা’য় বাংলা ক্যালেন্ডারের কথা উল্লেখ করলেন তিনি।
নববর্ষ মানে শুধুই যে বাঙালির স্মৃ’তিমেদুরতা, সে কথা মানতে নারাজ অপরাজিতা। তাঁর মতে, এখনও কিছু মানুষের কাছে বছরের বিশেষ দিনগুলো নিয়ে উন্মাদনা বেঁচে রয়েছে। কথাপ্রসঙ্গেই অপরাজিতা বললেন, ‘‘এ বছর আমি তো লাল পাড় সাদা শাড়ি পরব। দীর্ঘ দিন পর আমরা বন্ধুরা দেখা করছি।’’ জানালেন, শৈশবে পাড়ার প্যান্ডেলে সবাই মিলে অনুষ্ঠানের কথা। বললেন, ‘‘কালবৈশাখী আসত। ঝড়ে প্যান্ডেল উ’ড়ে যেত। আমরা মঞ্চে নাচতাম। আর যে সব ছেলেরা আমাদের পছন্দ করত, তারা ভি’জে ভি’জে অনুষ্ঠান দেখত।’’ অপরাজিতার কথা শুনে তখন আড্ডায় হাসির রোল উঠে।
আড্ডায় উঠে আসে বাংলা ভাষা নিয়ে নান মত। বাঙালি বড্ড বেশি আবেগপ্রবণ বা স্মৃতিমেদুরতায় ভোগে  মানলেন না অনুষা। তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর যুক্তি, ‘‘স্মৃতিমেদুরতা মানে তো ভালোবাসা। সারা বিশ্বে ভাষার প্রতি ভালোবাসা থাকে। তার মানেই স্মৃতি। তাই আবেগ থাকলে তো ক্ষতি নেই।’’ বাংলা ভাষা এখন নাকি কোণঠাসা? ঈপ্সিতা বললেন, ‘‘কাজের ভাষা হিসেবে সারা ভারতে ইংরিজি ভাষার গুরুত্ব বেশি। অনেক বাঙালিই ভাষাকে হেয় করেন। সেটা ঠিক নয়।’’ দেবোত্তমের যুক্তি, ‘‘একাধিক ভাষা শিখতে তো দোষ নেই! কিন্তু শিকড়ের ভাষাকে অ’ব’জ্ঞা করাটা দুঃ’খ’জন’ক।’’ যেমন অপরাজিতা তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে বললেন, ‘‘তামিলনাড়ুতে গিয়ে দেখেছি যে, মাতৃভাষার প্রতি ওঁদের আলাদা একটা স’ম্মা’ন রয়েছে। আমি ছোট থেকেই বাংলা মাধ্যমে পড়েছি। শুরুতে আমারও ইংরেজি বলতে অ’সু’বি’ধা হত। পরবর্তী কালে কাজের জন্য আমাকেও শিখতে হয়েছে।’’ তবে কলকাতায় যদি কেউ তাঁর সঙ্গে অ’হে’তুক ইংরেজিতে কথা বলেন, তাঁকে কিন্তু অপরাজিতা বলেন, ‘‘দাদা, ইংরেজি ভালো বুঝতে পারি না। বাংলায় বলুন।’’
আলোচনার শেষ লগ্নে উঠে এল এই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, বাঙালি কি ‘বেঁচে’ আছে? অনুষা এ রকম কোনও নে’তি’বা’চক ম’ন্ত’ব্য সমর্থন করতে নারাজ। শন বললেন, ‘‘কাশ্মীর হোক বা লন্ডন, ঘুরতে গিয়ে আমি বাঙালি খুঁজে পেয়েছি। তাই বাঙালি আছে।’’ বাঙালিয়ানাকে বাঁচিয়ে রাখতে বাংলাদেশের অবদানকেও বাড়তি প্রাধান্য দিলেন অনুষা। ঈপ্সিতার কথায়, ‘‘রবীন্দ্রনাথ এখনও আমাদের মধ্যে রয়েছেন এবং থাকবেন। আর তাঁর অ’স্তি’ত্ব মানে তো বাঙালিও রয়েছে।’’ অন্য দিকে, বাঙালির চেহারা বা তার পোশাকের বিবর্তনের দিকটি ধরিয়ে দিতে চাইলেন দেবোত্তম। তিনি বললেন, ‘‘বাঙালিকে হয়ত আমরা চিনতে পারি না। কিন্তু ভীষণ ভাবে রয়েছে। যে কোনও উৎসব আমরা সমান গুরুত্ব দিয়ে পালন করি। সকলকে আপন করে নেওয়ার গুণও বাঙালির সব থেকে বেশি।’’

আরো পড়ুন:বিরাট খবর! চু’পি’সা’রে গাঁটছড়া বেঁধেছেন ‘যোগমায়া’র নায়ক সৈয়দ আরেফিন! তার হিন্দু স্ত্রীকে চেনেন?

বাঙালি কি সত্যিই কাঁ’ক’ড়ার জাত? বয়োজ্যেষ্ঠ হিসাবে সকলের মনের কথাটা যেন উঠে এল অপরাজিতার বক্তব্যে। তিনি যেমন মেনে নিলেন বাঙালি কাঁ’ক’ড়ার জাত, তেমনই বিপরীত যুক্তিও খাড়া করলেন। জোর গলায় বললেন, ‘‘পৃথিবীর সব জাতিই কাঁ’কড়া’র জাত। আমাদের জনসংখ্যা বেশি বলে হয়তো সমস্যাগুলো বেশি প্রকট হয়। এর বেশি কিছুই নয়।’’ দো’ষ-গুণ নিয়েই বাঙালি। হারিয়ে যাওয়া সময়কে বুকে আগলেই বাঙালি।