লক্ষ্মীছানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তিনি! আজ‌ও নিজের সাফল্যের জন্য কৃতজ্ঞতা দেন বাবা-মাকে!

বাংলা বিনোদন জগতের পরিচিত মুখ অভিনেতা নীল সুজন মুখোপাধ্যায় (Neel Mukhopadhyay)। বহু বছর ধরে অভিনয় জগতের সঙ্গে যুক্ত তিনি। ছোটপর্দা থেকে বড়পর্দা, থিয়েটারের মঞ্চে কাজ করেছেন তিনি। অভিনেতা নীল মুখোপাধ্যায় উত্তম কুমারের বিরাট বড় ভক্ত। এর আগে উত্তম কুমারের ছবি রিমেক করেছেন। আর কোন ছবি রিমেকের ইচ্ছে রয়েছে অভিনেতার? নীলের কথায়, “উত্তমকুমারের দুটো ছবি রিমেকে করেছি। ‘পৃথিবী আমারে চায়’, ‘খোকা বাবুর প্রত্যাবর্তন’। খুব বেশি পরিমাণে ‘নায়ক’ বা ‘যদুবংশ’ বা ‘অগ্নীশ্বর’ করতে চাই! সুচিত্রা সেনের সঙ্গে ছবিগুলি যদি বলেন তো, ‘সপ্তপদী’। আমার বাবাও কিন্তু ভীষণ উত্তম ভক্ত, জানেন তো! উত্তমকুমারের সংলাপ বলার ‘টাইমিং’, ‘সেন্স অফ হিউমার’ সবটার।”

লক্ষ্ণীছানা অনুষ্ঠানে বিশাল জনপ্রিয়তা পান নীল‌ (Neel Mukhopadhyay)। ছোটোবেলায় নীল কতটা লক্ষ্ণীছানা ছিলেন, সেকথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, “অনেকটাই। একটু হাতে পায়ে দুষ্টু ছিলাম। অনেক মাথা ফেটেছে, পা কেটেছে। খুবই দৌড়দৌড়ি করতাম। কিন্তু মারাত্মক কিছু হয়নি।” লক্ষ্ণীছানা নীলের সিগনেচার অনুষ্ঠান হয়ে উঠেছিল। এ প্রসঙ্গে অভিনেতা জানান, “ওটা আমার জীবনে বড় ব্রেক। অনুষ্ঠানটা যে এত মানুষ নেবে, ভাবতেও পারিনি। আমার তখন যাত্রার পোস্টারে কী লেখা থাকত জানেন? ‘লক্ষ্মীছানা খ্যাত'”

লক্ষ্ণীছানা অনুষ্ঠানে অনেক বাচ্চা আসতো, তাদের নিয়ে প্রচুর গল্প যেগুলো কেউ জানেই না, অভিনেতা বলেন, “সেন্সর্ড গল্প সব। একটা বাচ্চা একবার বেশ সেজেগুজে এসেছে। ক্যামেরা চলছে। বললাম, ‘তুমি এত সুন্দর সেজেছ, একদম বলিউডের মতো জমা কাপড় পরেছো তো! জানো, বলিউড কোথায়? বলল, ‘হ্যাঁ, বম্বে।’ বললাম, ‘টলিউড জানো?’’বলল, ‘হ্যাঁ, টালিগঞ্জ।’ তারপর বললাম, ‘হলিউড?’বলল, ‘হলদিয়া।'”

অভিনেতা নীল সুজন মুখোপাধ্যায়ের (Neel Mukhopadhyay) বাবা ছিলেন অরুণ মুখোপাধ্যায়। একসময় প্রিয়তম ছাত্রী, ছায়াসঙ্গীকে নিয়ে সে সময় প্রচুর চর্চা হয়। যখন অরুণ মুখোপাধ্যায় অসুস্থ ছিলেন তিনি দরদী ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু পরিবারের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ ছিল না। বাবার প্রিয়তম ছাত্রীকে কিভাবে দেখতেন নীল। নীল বলেন, “আমার একটা নিজস্ব রিজার্ভেশন ছিল ওঁকে নিয়ে। বহু দিন ধরেই ছিল। কিন্তু এখন আমাদের নিয়মিত কথা হয়। সহজ সে সব আদানপ্রদান। কাজেরও সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। সেটা মা চলে যাওয়ার পর নয়। তার আগে থেকেই বলছি। তবে এটাও ঘটনা, আমি একটা সময় অনেক প্রতিবাদ করেছিলাম এবং আমি আমাদের দল ‘চেতনা’ থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। এক বার বলেছিলাম, আমি ফ্রান্সে যাব না। সে নিয়ে বাবার সঙ্গে আমার দূরত্ব তৈরি হয়।”

বাবা অরুন মুখোপাধ্যায় প্রসঙ্গে সাক্ষাৎকারে নীল (Neel Mukhopadhyay) বলেন,” বাবা আমায় জীবনে কতটা দিয়েছে, বলে বোঝাতে পারব না। যদিও এ কথাও বাবাকে এক বার বলতে শুনেছি, ‘তোকে আমি বঞ্চিত করেছি।’ বাবাই কিন্তু আমায় অঞ্জন দত্তর কাছে পাঠান। অঞ্জনদা আমার একটা জীবনের বড় ব্রেক। ‘আলিজিন’ নাটক থেকে। তার পর পর পর কিছু নাটক করলাম।”

আরও পড়ুন: বিচ্ছেদের পর একসঙ্গে কাজ করা যায় না! নিজের সঙ্গে নিজের নিদারুণ লড়াই ছিল! এখন নিজেকে আবার গুছিয়ে নিচ্ছি! অর্ণবের সঙ্গে ডিভোর্স প্রসঙ্গে অকপট ঈপ্সিতা

নীল মুখোপাধ্যায় (Neel Mukhopadhyay) একবার মদ্যপ অবস্থায় স্টেজে উঠেছিলেন, এক সময় সে নিয়ে বিস্তর চর্চা হয়েছিল। অভিনেতা নীল মুখোপাধ্যায় বলেন, “এক বার। ‘ঘাসিরাম কোতোয়াল’-এর কার্টেন কল-এ। আমি খুব আবেগি হয়ে কেঁদেও ফেলি তখন। ওই নাটকে কিন্তু আমি অভিনয় করিনি। ছিলাম পরিচালক। পরিচালক হিসেবে ওটা আমার সেই প্রথম বড় কাজ। অধিকাংশ বাচ্চা ছেলেপুলেদের নিয়ে। পিছনে অন্ধকারে বসে টেনশনে ঠাণ্ডা পানীয় খাচ্ছিলাম! আমার কেবল মনে হয়েছিল, ‘ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা’ যদি পারে, আমরা কেন পারব না! যাই হোক, যা করে ফেলেছিলাম সে দিন, সেটা আর কোনও দিন হবে না, এটুকু বলতে পারি! কখনও না।”

actor