স্টার জলসার পর্দায় চলতি বছরে শুরু হওয়া ‘চিরসখা’ (Chiroshokha) ছিল এক ব্যতিক্রমী প্রয়াস। লীনা গঙ্গোপাধ্যায় লেখনীতে এই ধারাবাহিক শুরু হয়েছিল ২৭ জানুয়ারি, যেখানে নায়ক-নায়িকার চরিত্র গঠন ছিল ঠিক যেন চার-পাঁচ দশক আগের! ‘কমলিনী’ (Aparajita Ghosh Das) আর ‘স্বতন্ত্র’র (Sudip Mukherjee) সম্পর্কটা ছিল বন্ধুত্ব, নির্ভরতা আর জীবনের পড়ন্ত বেলায় হঠাৎ পাওয়া এক আশ্রয়ের গল্প। অভিনয়ে অপরাজিতা ঘোষ দাস ও সুদীপ মুখার্জীর মধ্যবয়সী প্রেমের উপস্থাপন প্রথম থেকেই নজর কেড়েছিল।
তবে এই গল্পে প্রেমের থেকে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে বন্ধুত্ব। একদিকে অল্প বয়সে স্বামীকে হারানো কমলিনী যে সন্তান আর পরিবার সামলাতে সামলাতে নিজেকে ভুলতে বসে, আর অন্যদিকে তাঁর স্বামীর বন্ধু স্বতন্ত্র যে নিজের সবটুকু দিয়ে কমলিনীর পাশে দাঁড়ায়, সন্তানদের পিতৃস্নেহে বড় করে তোলে। কমলিনী আর স্বতন্ত্রর সম্পর্কের কোনও নাম নেই, নামহীন একটা সম্পর্ক যে কতটা সুন্দর হতে পারে সেটাই সবাইকে শেখানোর চেষ্টা এই ধারাবাহিকের। তবে গল্প যত এগিয়েছে, ততই কমতে শুরু করেছে টিআরপি।
দর্শকদের একাংশের মতে, কাহিনির গতি নেই, চরিত্রগুলো প্রায় সবসময় একরকম আবেগে আটকে থাকে। একই ছকে বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে গল্প। ফলে প্রশ্ন উঠছে, মধ্যবয়সীদের প্রেম কি আদৌ বাণিজ্যিক টেলিভিশনের পর্দায় টিঁকে থাকতে পারে? এমন সময়ে ধারাবাহিকে হঠাৎ করে ঢুকে পড়েছে এক নতুন নারীচরিত্র—‘ডল’। সম্পর্কের নতুন মোড় এনে দিয়েছেন তিনি, সম্পর্কে তিনি স্বতন্ত্রর বৌদিকে বোন এবং একইসঙ্গে তাঁর বহু পুরনো পরিচিত।
কিন্তু এবার তিনি এসেছেন এক নতুন পরিচয়ে–স্বতন্ত্রর প্রেমিকা হতে। সরাসরি কমলিনীকে পাশ কাটিয়ে স্বতন্ত্রকে দিয়েছেন বিয়ের প্রস্তাব। প্রত্যাখ্যাত হয়ে এবার ডল কমলিনীর দ্বারস্থ, স্বতন্ত্রকে বুঝিয়ে রাজি করাতে হবে, প্রেমে পড়েছে সে। প্রশ্ন উঠছে, এই বয়সে এসে প্রেমের প্রস্তাব, সম্পর্কের টানাপোড়েন—এসব কি দেখতে রাজি বাংলার দর্শক? ডলের সংলাপ, হাবভাব কিংবা অন্ধ আবেগ, সবকিছুই কখনও করুণ, কখনও বা বিতর্কিত।
আরও পড়ুনঃ “ওর মুখের হাসিটাই সবচেয়ে দামি”— মা নেই, তবু একা নন কৌশানী, হবু শাশুড়ির যত্নে কৌশানীর জন্মদিন কাটল আবেগে ও ভালোবাসায়! কি উপহার দিলেন শাশুড়ি পিয়া আর বনি?
একদল দর্শক এই নতুন মোড়কে বলছেন “অপ্রয়োজনীয় নাটক”, আবার একদল বলছেন, “এতদিন তরুণ প্রেম দেখেছি, এবার প্রাপ্তবয়স্ক প্রেম দেখার পালা।” তবে শেষ কথা একটাই, যে গল্পে নতুন মোড় এলেও, অভিনয়ে খামতি থাকলে দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিতেই পারেন। আর সেই জায়গাতেই আপাতত ‘চিরসখা’ পেছাচ্ছে। এখন দেখার, ডল-কমলিনী-স্বতন্ত্রের ত্রিকোণ প্রেম কি আদৌ ধারাবাহিককে বাঁচাতে পারবে? মধ্যবয়সীদের প্রেম দেখতে আপনাদের কেমন লাগছে?