“খালি পেটে পুরস্কার নিতে গিয়েছিলাম, ফিরেছি চপ-মুড়ি খেয়ে”—অভাবের জীবনকথা শোনালেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী ছন্দা চট্টোপাধ্যায়!

জীবনে কখনও কখনও এমন কিছু ঘটনা ঘটে, যা কেবল সিনেমার স্ক্রিপ্টেই মানায় মনে হয়। কিন্তু বাস্তবের মঞ্চে অনেকেই প্রতিদিন সেই গল্প লিখে চলেন। কখনও পেট খালি, কখনও পকেট ফাঁকা—তবুও আত্মসম্মান বিসর্জন দেন না তাঁরা। তেমনই একজন পরিচিত মুখ বাংলা সিরিয়ালের, যাঁর হাসি আড়ালের আছে অনেক না বলা কথা।

টেলিভিশনের পর্দায় তাঁকে দেখে হয়তো কেউ ভাবতেও পারেন না, তাঁর জীবনও একসময় চলেছে উপোসে, অভাবে। অথচ কোনওদিন কারও কাছে হাত পাতেননি। নিজের পথ নিজেই তৈরি করেছেন। আজ যখন তিনি কোনও চরিত্রে ‘দজ্জাল শাশুড়ি’ হয়ে দর্শককে মুগ্ধ করেন, তখন হয়তো কেউ জানেন না সেই হাসির আড়ালে কতটা কান্না লুকিয়ে আছে।

বাংলা সিরিয়ালের বর্ষীয়ান অভিনেত্রী ছন্দা চট্টোপাধ্যায়। ‘দাপুটে ঠাকুমা’ কিংবা ‘রাগী শাশুড়ি’র চরিত্রে তাঁকে দেখতে অভ্যস্ত দর্শকরা। কিন্তু বাস্তব জীবনে তিনি ছিলেন এক নিঃশব্দ যোদ্ধা। স্বচ্ছল পরিবারের মেয়ে হয়েও কোনওদিন বাবামায়ের কাছে কিছু চাননি। ছোটবেলায় দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। এমনকি মাত্র ৭-৮ বছর বয়সে টালিগঞ্জ থেকে বিডন স্ট্রিট হেঁটে গেছেন এবং ফিরেও এসেছেন—তাও শুধু আত্মসম্মানের কারণে।

সম্প্রতি এক ইউটিউব সাক্ষাৎকারে নিজের জীবনের না বলা অধ্যায় প্রকাশ্যে আনেন ছন্দা চট্টোপাধ্যায়। সেখানে অভিনেত্রী বলেন, ‘‘আমার দিন কেটেছে খুব অভাবে। কোনওদিন খেতে পেয়েছি, কোনওদিন না। কিন্তু আমি কাউকে বলতে পারিনি।’’ এ কথার মধ্যে দিয়ে উঠে আসে এক নিঃসঙ্গ সংগ্রামের গল্প। তিনি আরও জানান, একবার টিনের তলোয়ার নাটকের জন্য পুরস্কার নিতে গিয়েছিলেন খালি পেটে। সেদিন সারাদিন না খেয়ে শুধুমাত্র পুরস্কার নিতে গিয়েছিলেন, আর রাতেরবেলা ফিরেছিলেন চপ আর মুড়ি খেয়ে। এত কষ্টের পরেও কখনও কারও কাছে কিছু চাননি তিনি।

ছন্দা জানান, প্রাক্তন সাংসদ হরেন মুখার্জীর হাত থেকে তিনি সোনার মেডেল পেয়েছিলেন। কিন্তু জীবন এমন জায়গায় পৌঁছয়, যেখানে সেই সোনার মেডেল পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়। চোখে জল নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি নিজের মেডেলটাও রাখতে পারিনি। বাঁচতে গেলে বিক্রি করতে হয়। কিন্তু কখনও বাবামায়ের কাছেও চাইতে পারিনি কিছু।’’ এই কথাগুলো শুধু একজন অভিনেত্রীর নয়, বরং হাজারো মধ্যবিত্ত সংগ্রামী নারীর কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে। নিজেকে বিকিয়ে না দিয়ে সম্মান নিয়ে বাঁচার এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন তিনি।

আরও পড়ুনঃ ‘শাশুড়ির বুড়ো জামাইকে নিয়ে আদিখ্যেতা দেখলে বাঁচি না!’ কৃষভির পর আর‌ও সন্তান নেওয়ার জন্য কাঞ্চনকে জোরাজুরি শ্বশুরবাড়ির! জামাইষষ্ঠীতেও কাক্ষের শিকার কাঞ্চন মল্লিক!

এই বয়সেও ছন্দা চট্টোপাধ্যায় থেমে যাননি। তিনি আজও নিয়মিত কাজ করছেন, আর সেটা নিজের আত্মসম্মান বজায় রেখেই। তাঁর কথায়, ‘‘আমাকে কাজ করতেই হবে। আর সেটাই আমি করছি।’’ জীবনের পথে এত বাধা সত্ত্বেও ছন্দা চট্টোপাধ্যায় যেভাবে নিজের জীবনকে গড়ে তুলেছেন, তা অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণা। এই গল্প শুধুই একটি মুখের নয়, বরং হাজারো মানুষের কাছে এক শিক্ষা—নিজের সম্মান যদি থাকে, তবে সব হারিয়েও জিতে ফেরা যায়।