“সন্ধ্যা রায় আমায় সন্তানস্নেহ করতেন!” “‘মাস্টার রিন্টু’ অঞ্জন চৌধুরী আর তরুণ মজুমদারের শিষ্য, কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি আজ তাঁকেই ভুলে গেছে!”— শিশুশিল্পী হয়েও ২০০ চরিত্রের অভিজ্ঞতা, আজ নিঃশব্দে লড়ছেন জীবনযুদ্ধ! কোথায় হারিয়ে গেলেন ‘মাস্টার রিন্টু’? টলিউডে কেন নেই ঠাঁই?

টলিউডের এক সময়ের জনপ্রিয় শিশুশিল্পী ‘মাস্টার রিন্টু’ (Master Rintu) নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন অভিনেতা ‘সজল দে’ (Sajal Dey)। আশির দশকের শেষ থেকে নব্বইয়ের শুরু অবধি বাংলা সিনেমায় তাঁর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। শিশুশিল্পী (Child Artist) হিসেবেই প্রায় ২০০টির বেশি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি, যা একদিকে যেমন তাঁর প্রতিভার প্রমাণ, তেমনই ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর চাহিদারও নিদর্শন। প্রথম অভিনয়ের সুযোগ আসে ‘গুরুদক্ষিণা’ ছবিতে, যেখানে মাত্র একটি সংলাপ দিয়েই নজর কাড়েন দর্শকের।

এরপর একে একে তাপস পাল, শতাব্দী রায়, সন্ধ্যা রায়ের মতো তারকাদের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেন, নিজস্ব অবস্থান তৈরি করেন টলিউডে। তবে এই স্বপ্নের উড়ান থমকে যায় খুব অল্প বয়সেই। ঠিক যেই মুহূর্তে মানুষজন আশা করছিলেন, ‘মাস্টার রিন্টু’ এবার বড় পর্দার নায়ক হয়ে ফিরবেন, তখনই বাস্তব জীবনের চাপে তাঁকে অভিনয় ছেড়ে দিতে হয়! মাধ্যমিক পরীক্ষার পরেই শুরু হয় জীবনের কঠিন অধ্যায়। বাবার অসুস্থতা এবং সংসারের দায়িত্ব কাঁধে এসে পড়ে।

অভিনয়ের পরিবর্তে স্থায়ী জীবিকা খুঁজতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। অথচ দীর্ঘদিন ইন্ডাস্ট্রিতে থাকার পরও, কারও কাছ থেকে ফিরে পাননি আশানুরূপ সহানুভূতি বা সাহায্য। সজলের গলায় এখনও রয়ে গেছে একরাশ অভিমান। তিনি বলেন, “অনেক স্বনামধন্য অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গে কাজ করেছি, এমনকি সন্ধ্যা রায়ের মতো অভিনেত্রীর কাছে সন্তানস্নেহ পেতাম, অথচ আজ ইন্ডাস্ট্রি আমার কথা ভুলেই গিয়েছে।”

অভিমানের পাশাপাশি ছিল হতাশাও— কারণ তিনি বিশ্বাস করেন, আজ যাঁরা রূপোলি পর্দায় জায়গা পাচ্ছেন, তাঁদের অনেকের মধ্যেই নেই সামান্য অভিনয়ের দক্ষতা, যা তাঁর জন্মসূত্রে ছিল। “আমি তরুণ মজুমদার, অঞ্জন চৌধুরীর মতো পরিচালকের দীক্ষিত, আজও সুযোগ পেলে যে কোনও চরিত্রে নিজেকে প্রমাণ করতে পারি,” দৃঢ়ভাবে জানান সজল। উল্লেখ্য, নতুন কয়েকটি ছবিতে ছোটখাটো চরিত্রে ফিরেওছিলেন তিনি— যেমন দেব বা জিতের ছবিতে।

কিন্তু সেই ফেরা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ফলে জীবিকার প্রয়োজনে অন্য পেশা বেছে নিতে বাধ্য হন সজল। তবে এখানেই শেষ নয় তাঁর জীবনের লড়াই। ব্যক্তিগত জীবনেও রয়েছে কঠিন বাস্তবতা। এক অটিজমে আক্রান্ত কন্যাসন্তানের বাবা তিনি। মেয়েটির বয়স সাত পেরোলেও এখনও একবারও “বাবা” বলে ডেকে ওঠেনি। সেই যন্ত্রণার কথা বলতে গিয়ে সজলের গলায় ধরা পড়ে এক গভীর কষ্ট— “আজ সাতটা বছর পরেও আমি মেয়ের ‘বাবা’ ডাক শুনিনি।”

আরও পড়ুনঃ “স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনবে স্বামী, বাবা বা ছেলে কেন?” “এই বিষয়ে পুরুষদের জড়ানো মানে শালীনতা হারানো!”— ব্যক্তিগত বিশ্বাস জানিয়ে মন্তব্য করতেই ফের বিতর্কে মমতা শঙ্কর!

তবুও, সমস্ত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা এতটুকু ম্লান হয়নি তাঁর। এখন আর বড়পর্দায় নয়, অন্তরালেই নিজস্ব ছন্দে অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছেন সজল। অপেক্ষায় রয়েছেন— হয়তো কোনওদিন কোনও পরিচালক বা প্রযোজক আবার চিনে নেবেন সেই পুরনো রিন্টুকে, যিনি একদিন বাংলার দর্শকের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছিলেন। “হয়তো আবার ফিরব,” — আশায় বুক বাঁধেন টলিউডের সেই বিস্মৃত প্রতিভা।