টলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেত্রী ‘শকুন্তলা বড়ুয়া’ (Shakuntala Barua), দীর্ঘ অভিনয় জীবনে একের পর এক উল্লেখযোগ্য চরিত্রে প্রাণ দান করেছেন। সিনেমা থেকে শুরু করে টেলিভিশন— সব মাধ্যমেই তাঁর অভিনয় ছাপ ফেলেছে দর্শকের মনে। সম্প্রতি তিনি দেবের সঙ্গে ‘প্রজাপতি ২’ (Projapati 2) ছবির শুটিং শেষ করেছেন, সেখানে তাঁকে দেখা যাবে মিঠুন চক্রবর্তীর স্ত্রীর ভূমিকায়। বয়সের ভারে কিছুটা ধীরগতি এলেও এখনও সমান উৎসাহ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। তবে অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর জীবনের লড়াইও কম নয়।
অভিনেত্রীর কেরিয়ারের শুরুটা ছিল একেবারেই অন্যরকম। বাংলা ছবির অমর নায়ক উত্তমকুমারের মৃ’ত্যুর কিছু বছর আগেই অভিনয় জগতে প্রবেশ করেছিলেন শকুন্তলা। তাঁর প্রথম তিনটি ছবিতেই নায়ক ছিলেন উত্তমকুমার। একটি ছবিতে তিনি ছিলেন নায়িকা আর বাকি দুটিতে গুরুত্বপূর্ণ পার্শ্বচরিত্রে। অবাক করা বিষয়, তিনটি ছবিই দারুণ সফল হয়েছিল। এই সাফল্যের পথ ধরে তিনি ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন বাংলা চলচ্চিত্রের এক গুরুত্বপূর্ণ নাম। শুধু চলচ্চিত্র নয়, একের পর এক থিয়েটার এবং মেগাতেও তিনি দিয়েছেন অভিনয়ের স্বাক্ষর।
আজও তিনি সমানভাবে দর্শকের কাছে সমান প্রিয়। অভিনয়ের পাশাপাশি শকুন্তলা বড়ুয়া সংগীতেও ছিলেন সমান দক্ষ। অসম্ভব সুন্দর তাঁর গানের গলাও। সেই প্রমাণ বারবার পেয়েছেন দর্শক, ওনার গাওয়া গান বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মঞ্চে শুনে। তবে বছর কয়েক আগে থেকেই তাঁর গানের স্বর ভেঙে যেতে শুরু করে। প্রথমদিকে বুঝতে না পারলেও ধীরে ধীরে শরীরের মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু ঘটছে বলে টের পান তিনি। পরে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে জানা যায়, তাঁর গলায় অস্বাভাবিকভাবে এক মাংসপিণ্ড বেড়ে উঠছে, যা ক্যা’ন্সারের লক্ষণ হতে পারে।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেই ‘সুজয় প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়’ জানিয়েছিলেন, শকুন্তলা তাকে ফোন করে আক্ষেপ করেছেন, এখন তিনি আর কাজ পাচ্ছেন না! দীর্ঘদিন ধরে এই কথাতে ঘিরে নানান তর্কবিতর্ক এবং আলোচনা চলছে। এবার অভিনেত্রী নিজেই তুলে ধরলেন বাস্তবতা, সঙ্গে শারীরিক অবস্থার কথাও। সম্প্রতি অভিজ্ঞতা নিয়ে শকুন্তলা বড়ুয়া এর সাক্ষাৎকারে জানালেন, “বছর সাত-আটেক আর গান গাওয়া হয় না। বুঝতে পারছিলাম শরীরের ভেতর কিছু একটা খারাপ হচ্ছে আমার। বছর তিনেক আগে সেটা আরও বাড়তে শুরু করলো।
ডাক্তার দেখিয়ে সম্প্রতি জানতে পারলাম, গলায় একটা মাংসপিন্ড বেড়ে উঠছে দিনদিন। আমায় বলেই দেওয়া হয়েছিল যে এটা হয়তো ক্যা’ন্সারের লক্ষণ। কথা বলতে পারছিলাম না এমন অবস্থা। চিকিৎসককে জানাই, গলার আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেলে শ্যুটিং করবো কী করে! তখন তড়িঘড়ি করে অপারেশন করা হয়। আমায় আশ্বাস দেওয়া হয়, গলার ক্যান্সারে মানুষ মোর না! তাড়াতাড়ি সেরে যায়। গত ১৫ আগষ্ট শ্যুটিং শেষ করলাম, এখনও একটা দৃশ্য বাকি। ওটা পুজো কেন্দ্রিক, তাই দুর্গা পুজোর সময় করা হবে।
আরও পড়ুনঃ “আমার জন্মটাই ফাউ, ফ্লপ হিরো আমি!” “এই ইন্ডাস্ট্রিতে কেউ বন্ধু হয় না, শত্রুরও প্রয়োজন হয় না…বন্ধুরাই যথেষ্ট!”— শিল্পীজীবনের আক্ষেপ থেকে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে চোখ ভিজল শঙ্কর চক্রবর্তীর!
এখন মোটামুটি ঠিকই আছি আগের থেকে।” এই খোলাখুলি স্বীকারোক্তি অভিনেত্রীর অনুরাগীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়েছে। কারণ, ভক্তরা জানেন যে শকুন্তলা বড়ুয়া শুধু একজন অভিনেত্রী নন, তিনিই বাংলা বিনোদন জগতের এক অমূল্য সম্পদ। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর তিনি ধীরে ধীরে সুস্থতার পথে হাঁটছেন। অভিনয়ের প্রতি তাঁর ভালোবাসা এখনও অটুট, আর তাই সব শারীরিক বাধা অতিক্রম করেও আবার তিনি ক্যামেরার সামনে দাঁড়াচ্ছেন। তাঁর এই লড়াই নিঃসন্দেহে আগামী প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
“আমি এতদিন যা বলেছি ঠিক বলেছি…কোনও আক্ষেপ নেই, আবারও বলব!” “আজকাল কেউ কু’কুরকে “কু’কুর” বললেও লোকে তেড়ে আসে!”— দীর্ঘদিনের বিতর্ক নিয়ে অকপট মমতা শঙ্কর! সমালোচনার জবাবে মুখ খুলতেই ফের জড়ালেন নয়া বিতর্কে!