বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে মহানায়ক উত্তম কুমার (Uttam Kumar) শুধু অভিনয়ের জন্যই নয়, তাঁর জীবনযাপন ও বিশ্বাসের দিক থেকেও ছিলেন আলাদা। ভবানীপুরের বাড়িতে তাঁর শুরু করা কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো (Lakshmi puja) আজও রয়ে গিয়েছে ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে। এমন এক সময়ে, যখন কলকাতার ঘরোয়া সংস্কৃতিতে এই পুজোর প্রচলন তেমন ছিল না, তারকা খ্যাতি লাভ করতেই, এই আয়োজন শুরু করেন তিনি। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের পিছনে ছিল এক রহস্যময় অভিজ্ঞতা, যা আজও কিংবদন্তি হয়ে আছে তাঁর পরিবারের কাছে!
শোনা যায়, দুর্গা পুজোর পর পরই, একদিন সূর্যাস্তের সময় ছাদে ঘুরছিলেন উত্তম কুমার। আচমকা নজরে আসে, ছাদের কিনারায় এক বালিকা বসে আছে পা দোলাচ্ছে। ঘরের ভিতর তখন তাঁর ভাইঝি রত্না ঘুমিয়ে, ফলে প্রশ্ন ওঠে— ওই অচেনা মেয়েটি কে? যতই খোঁজ নেওয়া হয়, মেয়েটির কোনও অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ঠিক সেই ঘটনার কিছুদিন পরেই উত্তম কুমারের বাড়িতে প্রবেশ করে এক লক্ষ্মীপেঁচা। আর এই দুই ঘটনার পরেই তিনি বুঝতে পারেন, সম্ভবত দেবী স্বয়ং আগমনবার্তা দিচ্ছেন তাঁর গৃহে।
তারপর থেকেই মহানায়ক নিজে উদ্যোগ নেন বাড়িতে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো শুরু করার। সেই পুজোর প্রতিমা তৈরি হয় তাঁর স্ত্রী গৌরী দেবীর মুখের আদলে, যেন পরিবারের লক্ষ্মীকেই দেবী রূপে পূজা করা হচ্ছে। উত্তম কুমার নিজে হাতে সম্পূর্ণ ভক্তিভরে পুজোর সমস্ত আয়োজন করতেন। দোকানের কেনা মিষ্টি নয়, বরং বাড়িতেই তৈরি হতো ধনদেবীর জন্য টাটকা মিষ্টান্ন। এই পুজো উপলক্ষে তাঁর বাড়ি তখন পরিণত হতো টলিউডের তারকাসম্মেলনে, যেখানে উপস্থিত থাকতেন চলচ্চিত্র জগতের প্রায় সমস্ত প্রিয় মুখ।
আজও সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন উত্তম কুমারের উত্তরসূরিরা। তাঁর নাতি অভিনেতা গৌরব চট্টোপাধ্যায় এবং নাতবৌ অভিনেত্রী-নৃত্যশিল্পী দেবলীনা কুমার এখন এই পুজোর দায়িত্ব সামলান। তাঁদের উদ্যোগে ভবানীপুরের সেই পুরনো বাড়িতে এখনও বাজে ঢাক, জ্বলে প্রদীপ, আর শোনা যায় মহানায়কের প্রিয় গানের সুর। পুজোর দিন বাড়ির অন্দরে সেই একই পবিত্রতা ও ভক্তিভাব ছড়িয়ে পড়ে, যেন উত্তম কুমারের উপস্থিতি এখনও মিশে আছে বাতাসে।
আরও পড়ুনঃ ‘কোন ঝড়ই আমাদের ভালবাসার মাঝে অন্তরায় হবে না! কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না, আমি পাঁচক মশাইয়ের প্রেমেই বাঁচবো!’ অকপট সুস্মিতা
কথিত আছে, উত্তম কুমারের জীবনের সেই রহস্যময় দিনটিই তাঁর ঈশ্বরের বিশ্বাসের জন্ম দিয়েছিল। এর আগে তিনি তেমন পূজা-আচ্ছা করতেন না। দেবী দর্শনের পর তাঁর মনে হয়েছিল যে, দেবী লক্ষ্মী সত্যিই তাঁর গৃহে আশীর্বাদ বর্ষণ করেছেন। তাই যতদিন তিনি বেঁচেছিলেন, এই পুজো তাঁর কাছে ছিল শুধু আচার নয়, বরং এক ব্যক্তিগত আস্থা ও কৃতজ্ঞতার প্রতীক। আজও কোজাগরীর দিন ভবানীপুরের লোকেদের বিশ্বাস, মহানায়ক নিজেই এখনও বাড়ির লক্ষ্মী পুজোর প্রস্তুতি দেখতে আসেন।