রবিবার কলকাতার রেড রোডে ছিল একেবারে উৎসবের আমেজ। শহরজুড়ে সাজ সাজ রব, সেই কার্নিভালে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। সঙ্গে টলিউডের তারকারা— প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, অঙ্কুশ হাজরা, ঐন্দ্রিলা সেন, যীশু সেনগুপ্ত থেকে শুরু করে আরও বহু কলাকুশলী। লাইট, মিউজিক, সাজসজ্জা— সব মিলিয়ে উৎসব যেন রূপকথার শহর! তবে এই উৎসবই যেন তৈরি করে ফেলেছে নতুন বিতর্কের ঢেউ।
ঠিক এই সময়েই উত্তরবঙ্গে বন্যা আর ধসের ভয়াল ছবি। জলমগ্ন এলাকা, ভেসে যাওয়া ঘরবাড়ি, প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ। দার্জিলিং, কালিম্পং, মিরিক— একের পর এক জেলায় বিপর্যয়, কাঁদছে পাহাড় এলাকার মানুষ, শোকের ছায়া গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়ে। প্রশাসন উদ্ধারকাজে নেমেছে বটে, কিন্তু প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই অসম্ভব হয়ে উঠছে। এমন এক ভয়াবহ পরিস্থিতিতে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও টলিউড তারকাদের নাচ-গানের উৎসবে দেখা যাওয়া মানুষকে আরও ক্ষুব্ধ করে তুলেছে।
একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর কড়া ভাষায় লিখেছেন, “না এই শিল্পীরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন, না মানুষের পাশে দাঁড়ান। এরা সরীসৃপ প্রজাতির প্রাণী!” এমনই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। সাধারণ মানুষ বলছেন, যখন নিজেদের সিনেমা রিলিজ হয়, তখন এরা জনগণেরই সাহায্য চান। কিন্তু যখন মানুষ বিপদে, তখন তাঁদের চোখে শুধু আলো ঝলমলে মঞ্চ। উত্তম কুমার বা অনুপ কুমারদের ঐতিহ্য যেন ধুলোয় মিশে গেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ার কমেন্ট বক্সগুলোতে দেখা যায় — “চুলোয় যাক বাংলা সিনেমা! এখন থেকে এই অমানবিক, অমেরুদণ্ডী, দূর্নীতিবাজ, নির্লজ্জ শিল্পীদের সিনেমা দেখব না।” অনেকেই হ্যাশট্যাগ দিচ্ছেন #boycottbengalicinema। কেউ লিখছেন, “জুবিন গর্গ নিজের জীবন দিয়েও শেখাতে পারেননি কিভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হয়!” আবার কেউ মনে করাচ্ছেন সোনু সুদের মতো তারকারা কিভাবে করোনা কালে মানুষকে সাহায্য করেছিলেন— অথচ এ রাজ্যের শিল্পীরা তখনও গ্ল্যামারেই ব্যস্ত।
আরও পড়ুনঃ দেবী স্বয়ং এসেছিলেন মহানায়কের ঘরে! অবিশ্বাস্য অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী হন উত্তম কুমার, বাড়িতে শুরু হয় লক্ষ্মীপুজো! কোন রহস্যময় ঘটনার কারণে আজও হয়ে চলেছে কলকাতার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী পুজো? কার মুখের আদলে চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে আজও তৈরি হয় দেবী মূর্তি?
সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে একের পর এক কটাক্ষ। কেউ লিখছেন, “এদের অভিনয় দেখা ছেড়ে দিয়েছি বহু বছর আগে।” কেউ বলছেন, “এরা মরলে বাড়ির লোক ছাড়া কেউ থাকবে না।” আবার কেউ লিখছেন, “এরা ধান্দাবাজ, স্বার্থপর, লোভী, অমানুষ।” এমনকি কেউ মন্তব্য করেছেন, “গত বছর অভয়ার সময় যেমন কান্ড করেছিল, এবছরও তাই। মানুষ, পশু মরছে আর এরা নাচছে!”— এই মন্তব্যগুলো প্রমাণ করছে, জনমানসে ক্ষোভ কতটা তীব্র। সত্যিই প্রশ্ন ওঠে, এদের হৃদয় কি শুধু ক্যামেরার ফ্ল্যাশেই জ্বলে?