“আমি দিদির আদর্শে অনুপ্রাণিত!”— তীব্র অভাবের সংসার থেকে রাজনৈতিক শ্বশুর বাড়িতে পদার্পণ! এবার মুখ্যমন্ত্রীর ভিভিআইপি জোনে সুদীপ্তা! স্মিতা বক্সীর বৌমা থেকে তিনি এবার শাসকদলের ভবিষ্যত প্রার্থী?

এক সময় বিদ্যুৎবিহীন ঘরে রাত কাটানো সেই মেয়েটা আজ আলো ঝলমলে মণ্ডপে মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা ‘ডি-জোন’-এ অতিথি। পর্দার খলনায়িকা, বাস্তবের সংগ্রামী– সুদীপ্তা বন্দ্যোপাধ্যায় (Sudipta Banerjee) ওরফে সুদীপ্তা বক্সীর জীবনের পর্দা পিছনের গল্পটা কিন্তু ঠিক এই গ্ল্যামারের মতো রঙিন ছিল না। ইলেকট্রিক বিল দিতে না পারায় ঘরে আলো জ্বলত না, কেবল সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছিল টাকাপয়সার অভাবে। দাদার চাকরি ছিল না, বাবার কাজও বন্ধ। কীভাবে সংসার চলেছে, সে উত্তর একমাত্র জানেন তিনি আর তাঁর মা।

এই চূড়ান্ত অভাবের সংসারেই টিভির সামনে দাঁড়িয়ে প্রথম স্বপ্ন দেখা শুরু করেন সুদীপ্তা। অভিনয়ের টানটা ছোট থেকেই ছিল, কিন্তু সুযোগ ছিল না। ‘খেলা’ ধারাবাহিকে বিন্দু চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে শুরু হয় তাঁর অভিনয়জীবন। সেই চরিত্রই তাঁকে পরিচিত করে তোলে টেলিভিশনের দর্শকদের কাছে। কিন্তু বিন্দুর জনপ্রিয়তা যতই বাড়ুক, বাস্তব জীবনের সুদীপ্তার তখনও দিনের পর দিন দুশ্চিন্তায় কেটেছে। একদিকে ক্যামেরার আলো, অন্যদিকে ঘরে ফেরার পর অন্ধকার, এমন দ্বৈত বাস্তবতায় বড় হয়েছেন তিনি।

বিয়ের পর নতুন পরিচয় পেয়েছেন— বক্সি বাড়ির বউ। শাসক দলের প্রাক্তন বিধায়ক স্মিতা বক্সীর ছেলে সৌম্য বক্সির সঙ্গে বিয়ের পর যেন জীবনটাই বদলে গেছে। ধুমধাম করে বিয়ে, অতিথির ভিড়– যেখানে একদিন স্বপ্নেও ভাবেননি নিজের বিয়েতে এত লোক দেখতে পাবেন, সেখানে আজ তা বাস্তব। কিন্তু বাস্তব সুখে মোড়া থাকেনি সবসময়। বিয়ের পরপরই বাবা মা’রা যান কালীপুজোর সময়। ঠিক তখনই যেন জীবনের ছন্দটা খানিক থেমে যায়। বাবার মৃ’ত্যুশোক কাটাতে লেগে যায় দীর্ঘ দেড় বছর।

এতকিছুর পরও জীবন থেমে থাকেনি। আবার ফিরেছেন অভিনয়ে। এখন ‘রাঙামতি তীরন্দাজ’ ধারাবাহিকে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। তবে শুধু অভিনয় নয়, সম্প্রতি কালীপুজোয় মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে উপস্থিত হয়ে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন তিনি। বহু তারকার ভিড়ে, মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত আমন্ত্রণে ভিভিআইপি জোনে প্রবেশ– এসবই যেন ইঙ্গিত করছে আরও কিছু। তবে কি এবার রাজনীতিতে পা রাখতে চলেছেন সুদীপ্তা? মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা, শ্বশুরবাড়ির রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড, সব মিলিয়ে রাজনৈতিক মঞ্চে নামার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

যদিও সুদীপ্তা নিজে বিষয়টি নিয়ে খুবই সচেতনভাবে মন্তব্য করেছেন, বলছেন-ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত সময়ই বলে দেবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি নিজের অনুভূতিও খুব সরল ভাষায় প্রকাশ করেছেন সুদীপ্তা। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, কোনওরকম ভণ্ডামি তাঁর স্বভাব নয়। সামনাসামনি ভালো ব্যবহার করে পিছনে নিন্দা করার মানুষ তিনি নন। বরং শুরু থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শকে সম্মান করেন, এবং তাঁকে ভালোবাসেন বলেও অকপটে জানিয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ “রঞ্জিত মল্লিকের মেয়ে খারাপ, কোয়েল কিচ্ছু পারে না… দু’একটা ছবিতে চলবে!” “বাবার নামে দাগ লাগুক, সেটা কখনও হতে দেব না”— রঞ্জিত-কন্যা কোয়েলের অকপট স্বীকারোক্তি! বাবার জনপ্রিয়তার ভারই ছিল বড়, তাই প্রথম দিন থেকেই নিজেকে কঠোর নিয়মে বেঁধেছিলেন মেয়ে!

বক্সি পরিবারে বিয়ের পর মুখ্যমন্ত্রীকে আরও কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেই শ্রদ্ধা ও মুগ্ধতা তাঁর ভেতরে অনেক আগেই তৈরি হয়েছিল। তাঁর কথায় একধরনের আন্তরিকতা ছিল, যা রাজনীতির চেয়ে ব্যক্তিগত অনুভবের জায়গা থেকেই উঠে এসেছে। তবে এটুকু স্পষ্ট, বিন্দু চরিত্র দিয়ে যিনি পরিচিত হয়েছিলেন, তিনি আর আগের মতো নেই। এবার হয়তো দর্শকের সামনে নয়, সরাসরি জনতার মঞ্চে হাজির হতে চলেছেন তিনি– এই নিয়েই চলছে জোর গুঞ্জন।