“আগের পৃথিবী অনেক বেশি আন্তরিক ছিল, বিগত কুড়ি বছরে আমূল পরিবর্তন হয়েছে!” “এখন কাউকে শাসন করা যায় না, উপযাচক হয়ে পরামর্শ বা জ্ঞান দেই না”— নতুন প্রজন্ম নিয়ে অকপট অঞ্জনা বসু! নতুন পৃথিবীর পরিবর্তনে কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে পুরনো আন্তরিকতা?

টেলিভিশনের পর্দায় তাঁকে দেখা যায় কখনও কঠোর এক মা, কখনও দৃঢ়চেতা এক নারী চরিত্রে। অভিনেত্রী ‘অঞ্জনা বসু’ (Anjana Basu) যেন প্রতিটি ভূমিকায় নিজের একটা স্বতন্ত্র ছাপ রেখতে পছন্দ করেন। তাঁর অভিনয়ের গভীরতা এমন যে, চরিত্রের আবেগ, ভাবনা, মানসিকতা-সবকিছুতেই বাস্তবতার ছোঁয়া মেলে। এখন জি বাংলার ধারাবাহিক ‘কুসুম-এ ইন্দ্রাণী চরিত্রে তাঁর অভিনয় ফের দর্শকদের মুগ্ধ করছে। এই চরিত্রে যেমন নিয়মনিষ্ঠা, তেমনই আছে এক ধরনের আত্মসম্মানবোধ, যা অঞ্জনা বসুর নিজের ব্যক্তিত্বের সঙ্গেও মিলে যায়।

ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকেই বলেন, অঞ্জনা বসুর সঙ্গে সহজে ঘনিষ্ঠ হওয়া যায় না, তিনি নাকি সবার সঙ্গেই এক ধরনের দূরত্ব তৈরি করে রাখেন। তবে এই দূরত্ব হয়তো তাঁর ব্যক্তিত্বেরই অংশ, নিজের সীমারেখা বজায় রাখার উপায়। অভিনেত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন, “রাগী যদিও বলা যায়, একেবারেই দাম্ভিক কিন্তু না আমি। আমার আসলে অনিয়ম বা বয়স অনুযায়ী ব্যবহারের ধরন দেখলে একটু মাথাটা গরম হয়ে যায়। মানে দীর্ঘদিন ধরে কেউ ১০ টায় ঘুম থেকে উঠছে আর ৪ তে খাচ্ছে, এটা মোটেই সহ্য হয় না।”

অঞ্জনা বসু বলেন, তাঁর বড় হওয়ার সময়কার সমাজ অনেকটাই আলাদা ছিল। তখন সিনিয়রদের কাছ থেকে বকা খাওয়া, ভুল করলে পাড়ার লোকের শাসন পাওয়া- এসব স্বাভাবিক ছিল। এখনকার পৃথিবী অনেক পাল্টে গেছে, শাসন বা পরামর্শ দেওয়ার জায়গা আর আগের মতো নেই। “কুড়ি বছরে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। এখন আর কেউকে সেভাবে বকা বা শাসন করা যায় না। আগের পৃথিবীতে অনেক বেশি আন্তরিক ছিল, এখন আর সেটা নেই।” তাঁর কথায় একটা হালকা হতাশা যেমন আছে, তেমনি আছে এক বাস্তববোধ।

যুগ বদলেছে, তাই নিয়মও বদলাতে হয়েছে। যদিও তিনি কঠোর শৃঙ্খলায় বিশ্বাসী, তবুও মানুষ হিসেবে সহানুভূতিশীল। তিনি বলেন, “এখন কেউ যদি এসে আমায় শুটিং সংক্রান্ত সমস্যা বা ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে সাহায্য চায়, নিঃসন্দেহে নিজের সবটুকু দিয়ে ঢাল হয়ে দাঁড়াব তার জন্য।” অঞ্জনা বসু জানান, তিনি নিজের থেকে কাউকে জ্ঞান দিতে যান না, কিন্তু কেউ এগিয়ে এলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন নির্দ্বিধায়। “আমি উপযাচক হয়ে কাউকে পরামর্শ বা জ্ঞান দেই না।

আরও পড়ুনঃ “এখনকার বাচ্চাদের কিছু শেখাতে হয় না, তারা নিজেরাই বোঝে কোনটা করা উচিত”— পুত্র তৃষাণজিতের অভিনয় প্রস্তুতি নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়! কবে বড় পর্দায় আসছে মিশুক, জানালেন বাবা নিজেই!

নিজের না ভালো লাগল কথা বলি না। এই যুগে সবাই সবটা জানে তাই আলাদা করে আর কিছু বলার প্রয়োজন নেই। আমাদের প্রয়োজন ছিল বলে সিনিয়রদের সাহায্য নিয়েছি এমনকি আজও নিয়ে থাকি।” — অকপটে বললেন অঞ্জনা বসু। সব মিলিয়ে, তিনি চরিত্রের মাধ্যমে শুধু অভিনয় নয়, জীবনের দর্শনও প্রকাশ করেন। তাঁর সংযম, নিয়মনিষ্ঠা, এবং সত্যবাদিতা তাঁকে আলাদা করে তোলে অন্যদের থেকে। বাইরের মানুষ তাঁকে যতই গম্ভীর ভাবুক, তাঁর ভিতরে আছে এক উষ্ণতা– যা বোঝা যায় তখনই, যখন কেউ তাঁর কাছে সত্যিই মন খুলে মেশে।