‘মায়ের রান্না গুলো শিখে নিয়ে এভাবেই মাকে ধরে রাখতে চাই, আর দশ-পনেরো বছর পর এই কাছের মানুষগুলোই হয়ত থাকবে না!’ অভিনেত্রীর কথায় ধরা পড়ল সময়ের ভয়! ব্যক্তিগত অনুভূতি ভাগ করে, ভবিষ্যতে মায়ের শূন্যতার নিয়ে আবেগে ভাসালেন শোলাঙ্কি রায়!

সদ্য স্টার জলসার ‘মিলন হবে কত দিনে’ ধারাবাহিকে ফিরেছেন তিনি, দীর্ঘ বিরতির পরে আবার টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যাচ্ছে অভিনেত্রী ‘শোলাঙ্কি রায়’কে (Solanki Roy)। একই সময়ে তাঁর নতুন ছবি ‘রান্না বাটি’-ও মুক্তি পেয়েছে, যদিও ছবিতে তিনি খুব বেশি সময় ছিলেন না। তবে, ছবির গল্পে একজন বাবা আর মেয়ের সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে। মেয়ের জীবনে ‘মা’র অনুপস্থিতিতে বাবা কীভাবে নীরবে সেই জায়গা করে নেয়, তা দেখানো হয়েছে। শোলাঙ্কির মতে, চরিত্রটি যত ছোটই হোক, তার ভেতরের কোমলতা তাঁকে টেনেছিল।

এই ছবিতে কাজ করতে তাঁর আগ্রহের আরও একটি বড় কারণ ছিলেন পরিচালক প্রতিম ডি. গুপ্ত আর সহ-অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী। গল্পটা যে শুধু খাবার নিয়ে নয়, বরং খাবারের মধ্য দিয়ে মানুষের মনের ওঠা-নামা, সম্পর্কের টানাপোড়েন আর অনেক অদেখা আবেগকে ধরেছে, তা তাঁর ভীষণ ভাল লেগেছিল। শোলাঙ্কির মতে, খাওয়া শুধু শরীরকে শক্তি দেয় না, কখনও কখনও মনটাকেও একটু বেশি শক্তি দেয়।

রান্নার সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্কটাও বেশ আন্তরিক। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রান্না তাঁর কাছে কোনও রুটিন কাজ না বরং স্নেহ দেখানোর একটা সহজ ভাষা। বাড়ির ভেতরে খাবারের স্বাদ যেমন মানুষকে কাছে আনে, তেমনই শৈশবের স্মৃতিও ফিরিয়ে আনে। শোলাঙ্কির নিজের বাবাই নাকি দারুণ রান্না করেন। একসময় নাকি রান্নাকেই পেশা হিসেবে নিতেন। কিন্তু পারিবারিক কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। তবে সেই অপূর্ণতা মেয়েকে রান্না শেখানোর মধ্য দিয়ে যেন একটু পূরণ করতে পেরেছেন।

ফাঁকা সময় পেলেই, শোলাঙ্কি নিজেও রান্না করতে খুব ভালোবাসেন। বিশেষ করে মৌরলা মাছ রান্না নিয়ে তাঁর আলাদা আত্মবিশ্বাস আছে। তবে তিনি মানেন, মায়ের হাতের স্বাদ ঠিকমতো আনা যায় না আর সেটাই হয়তো স্বাভাবিক। তবুও তিনি চেষ্টা করেন। কারণ তাঁর মা সবসময় তাঁর রান্না খেয়ে নেন, প্রশংসা করেন আবার সামান্য বকা-ঝকাও দেন। সেই ছোট ছোট মুহূর্তগুলোই যেন রান্নাকে আরও আপন করে তুলতে সাহায্য করে তাঁকে।

এরপর কিছুটা আবেগী হয়ে অভিনেত্রী বলেন, “আমি যা রান্না করি, মা সব খেয়ে নেয়। মা সার্টিফিকেটও দিয়েছে কিন্তু অল্পবিস্তর সমালোচনাও করে। ভালো পারি বা খারাপ, চেষ্টাটা করি। কারণ আজ থেকে দশ পনেরো বছর পর, এই রান্নাগুলো করে খাওয়ানোর মানুষগুলো হয়তো আর থাকবে না। আমি তাই রান্নার মাধ্যমে তাঁদের অনুভূতি আর স্পর্শগুলো সংরক্ষণ করে রাখতে চাই।” শোলাঙ্কির এই কথায় যে অনুভূতিটা সবচেয়ে গভীরভাবে ধরা পড়েছে, তা হলো ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর ভাবনা।

আরও পড়ুনঃ বড়সড় পথ দুর্ঘ’টনার কবলে অভিনেতা অনির্বাণ চক্রবর্তী! কেমন আছেন পর্দার প্রিয় ‘একেন বাবু’?

তিনি মনে করেন, আজ যাদের জন্য এত যত্নে রান্না করা হয়, কালের নিয়মে তাঁরা কেউ থাকবে না আর এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তিনি রান্নাকে শুধু একটা দক্ষতা হিসেবে দেখেন না বরং সম্পর্কগুলোকে ধরে রাখার একটা ভিন্ন উপায় হিসেবে বুঝতে চান। খাবারের স্বাদের সঙ্গে মানুষের স্মৃতিকে জুড়ে দিতে চান। ঠিক যেমন, আজও কিছু রান্না খেলে অনেকেরই ঠাকুমা দিদিমাদের করা মনে পড়ে! অভিনেত্রী এই চিন্তাধারাই যেন তাঁকে সমসাময়িক অনেকের থেকেই অনন্য করে তুলেছে।