ব্যর্থ প্রেম আর সময়ের দাবি, এই দুটি শব্দ যেন একে অপরের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে। জীবনের অনেক সিদ্ধান্ত ঠিক সময়ে না নিতে পারার আক্ষেপ যে কী তীব্র হতে পারে, তারই মতো এক অনুভূতি নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘দেরি হয়ে গেছে’ (Deri Hoye Geche) ছবির গল্প। দর্শকরা বলছেন, ছবির আবহ এমন যে মনে হয় পুরোনো কোনও দরজা খুলতেই, আবার ফেলে আসা স্মৃতির গন্ধ ফিরে এসেছে! সেই স্মৃতির মাঝেই লুকিয়ে আছে এক অসমাপ্ত সম্পর্কের দীর্ঘশ্বাস আর তারই ভেতর দিয়ে বয়ে চলা কষ্টের স্রোত।
এই ছবিতে অঞ্জন দত্ত অভিনীত ঋষি, একসময় পুলিশের দায়িত্বে থাকা মানুষ, যে পরবর্তী জীবনে অন্য পথে হাঁটে। সেই পথেই তার সঙ্গে দেখা হয় সঙ্ঘমিত্রার, যিনি পাহাড়ি হোমস্টে সামলে দিন কাটাচ্ছেন নিজের মতো। দু’জনের আলাপ থেকে পরিচয় এগোতে এগোতে দর্শক যেন টের পায় অতীতের কোনও গল্প বর্তমানের জানালায় এসে দাঁড়িয়েছে। ছবিতে প্রেমের ভাষা সরাসরি বলা হয়নি বরং একে আন্দাজ করে নিতে হবে দর্শকদের। কখনও দৃষ্টির ভাঁজে, আবার কখনও কথার ফাঁকে।
বিশিষ্ট অভিনেত্রী মমতা শঙ্কর এই জায়গাটাকেই সবচেয়ে সূক্ষ্মভাবে ধরেছেন। যেখানে তাঁর চরিত্রে কম কথা এবং অনুভূতি বেশি জায়গা পেয়েছে। গল্পে আবার অন্য এক পরত যোগ করেন অপালা চৌধুরী। সায়ন্তীর সংবেদনশীল উপস্থিতি যেন দুই প্রজন্মের আবেগকে এক সেতুতে বেঁধে দিয়েছে। অতীতের ব্যর্থতা, বর্তমানের সংশয় এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনার মাঝখানে সায়ন্তী এমন এক চরিত্র, যে বোঝাতে চায় যে দেরি হলেও কখনও কখনও ফেরার রাস্তা থাকে।
আর সেই পথচলায় ঋষির পাশে দাঁড়ায় তার পুরোনো বন্ধু ত্বরিত, অরিজিৎ দত্তর অভিনয়ে যার আশ্বাস দেওয়ার ক্ষমতা আলাদা করে নজর কেড়েছে। ছবিটা যেন রহস্য, স্মৃতি আর প্রেমকে পাশাপাশি চালিয়ে নিয়ে গিয়েছে বেশ স্বাভাবিকভাবে। কোথাও অতীতের কলকাতা, কোথাও বর্তমানের পাহাড়ি নিস্তব্ধতা যেন একসূত্রে বাঁধা পড়েছে। আর এই জায়গাতেই আসে উজান চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিতি, যা গল্পকে এক নতুন বাঁকে এনে দাঁড় করায়।
আরও পড়ুনঃ “যাদের জন্য পুজোর সময় লড়াই করলাম…সারা বছর একসঙ্গে ঘর করেছি, তাঁরাই আজ উল্টে গেল!” রানা সরকারের বিস্ফো’রক অভিযোগের বিরুদ্ধে, দেবের তীব্র ক্ষো’ভ! প্রযোজকের আক্রমণের পর, কী তথ্য সামনে আনলেন মেগাস্টার?
কোনও আড়ম্বর নয়, বরং গল্পের স্বাভাবিক গতিতেই সেই মোড় তৈরি হয়েছে। উল্লেখ্য, টানা ২৫ দিন হলো প্রেক্ষাগৃহে দর্শকদের মন জয় করে চলেছে ছবিটি। আর এই পরিসংখ্যান শুধু ব্যবসায়িক সাফল্য নয়, বরং দর্শকের অনুভূতির স্বীকৃতি। কারণ এই ছবি সময়ের ভুলে যাওয়া প্রেমকে আবার ফিরিয়ে এনে উত্তর না পাওয়া প্রশ্নগুলোকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। যখন মানুষ হল থেকে বেরিয়ে ভাবে, প্রশ্নের উত্তর খোঁজে, সেটাই তো গল্পের সবচেয়ে বড় অর্জন! আর এই জায়গাতেই ‘দেরি হয়ে গেছে’ তার নামের মতোই একটু ধীর, কিন্তু মনে গেঁথে থাকার মতো।






