একেই বলে মানবিকতা! “ভালো মানুষ এখনও আছে”—বছর শেষে মানুষের প্রতি বিশ্বাস ফিরে পেলেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়! অভিনেত্রীর জীবনে ‘নীরব সান্তাক্লজ’ হয়ে ধরা দিলেন এক উবের চালক! কী ঘটেছিল সেদিন?

দৈনন্দিন জীবনে এমন অনেক ঘটনা ঘটে, যেগুলো প্রথমে তুচ্ছ মনে হলেও পরে ভাবনার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেয়। ব্যস্ত শহরে তাড়াহুড়ো, কাজের চাপ আর অবিশ্বাসের ভিড়ে আমরা অনেক সময় ধরে নিই—সবাই নিজেরটাই দেখে। কিন্তু হঠাৎ কোনও ছোট অভিজ্ঞতা সেই ধারণায় ফাটল ধরায়। খুব সাধারণ একটি যাত্রা, যেটা মনে রাখার মতো কিছুই হওয়ার কথা ছিল না, সেখান থেকেই জন্ম নিতে পারে মানুষের প্রতি নতুন বিশ্বাস। ঠিক তেমনই একটি অভিজ্ঞতার সাক্ষী হলেন অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়।

হঠাৎ একটি প্রয়োজনে উবের ধরেছিলেন স্বস্তিকা। গন্তব্যে পৌঁছনোর তাড়া ছিল, যাত্রাটাও ছিল একেবারে সাধারণ। গাড়ির চালক সৈকত দাস—হাসিখুশি, সহজ স্বভাবের মানুষ। পথ চলতে চলতেই সিনেমা, কাজকর্ম, জীবনের টুকিটাকি বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল দু’জনের। গল্প করতে করতেই কখন যে পথ শেষ হয়ে যায়, তা টেরই পাননি কেউ। গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত মিটিংয়ে ঢোকার তাড়াহুড়োয় একটি ব্যাগ গাড়িতেই থেকে যায়—যার কথা তখন মাথায়ই আসেনি।

মিটিং শেষ করে ঘণ্টা দু’য়েক পর হঠাৎ ব্যাগটির কথা মনে পড়ে। মুহূর্তে দুশ্চিন্তা, প্যানিক। কারণ ব্যাগের ভেতরে ছিল পোষ্যদের ট্রিটস, কিছু মিষ্টি আর বেশ কয়েকটি ব্যক্তিগত জিনিস। সঙ্গে সঙ্গে উবের হেল্পলাইনে যোগাযোগ, ড্রাইভারকে ফোন—কিন্তু কোনও উত্তর নেই। স্বাভাবিকভাবেই মন খারাপ হয়ে যায়। মনে হতে থাকে, হয়তো আর ব্যাগটি পাওয়া যাবে না। ঠিক এমন সময়েই একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে।

ফোনের ওপারে ছিলেন সেই চালক সৈকত দাস। নম্বর দেখে বুঝেছিলেন, নিশ্চয়ই সেই যাত্রীই ফোন করেছেন। তখন তিনি খিদিরপুরে, আর স্বস্তিকা পিকনিক গার্ডেনে। দূরত্ব কম নয়, তবু কোনও অভিযোগ নেই, কোনও বিরক্তিও নয়। নিজের গাড়ি গ্যারাজে রেখে ঠিক করা জায়গায় অপেক্ষা করতে থাকেন সৈকত। পোষ্যদের একটি কার্নিভাল সেরে সেখানে পৌঁছে স্বস্তিকা দেখেন—এক গাল হাসি, হাতে ধরা সেই ব্যাগ। কোনও দাবি নেই, কোনও প্রত্যাশা নেই, শুধু কর্তব্যবোধ।

আরও পড়ুনঃ ‘কী ফালতু লাগছে, কী ড্রেসআপ, বয়সের বাবা-মা নেই, যেমন বুড়ি, তেমন বুড়ো’ সোশ্যাল মিডিয়ায় সায়কের মা-বাবাকে কুরু’চিকর মন্তব্য নেটিজেনের! ক্ষুব্ধ সায়ক চক্রবর্তী! কড়া প্রতিক্রিয়া অভিনেতার

সেই মুহূর্তে একটি ছবি তোলার অনুরোধ করেন স্বস্তিকা। কারণটা খুব সহজ—আমরা প্রতারণা বা খারাপ ব্যবহারের গল্প দ্রুত ছড়াই, কিন্তু ভালো মানুষের কথা খুব কমই বলি। সৈকতের মতো মানুষরাই রোজকার জীবনের নীরব সান্তাক্লজ়। নিঃশব্দে মানুষের প্রতি মানুষের ভরসা, বিশ্বাস আর মানবিকতাকে বাঁচিয়ে রাখেন তাঁরা। এই ছোট্ট ঘটনাই মনে করিয়ে দেয়, সব খারাপের ভিড়েও ভালো এখনও আছে—শুধু চোখ খুলে দেখার অপেক্ষা।

You cannot copy content of this page