৩২ বছরের সঙ্গীকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছিলেন, তবু থামাননি অভিনয়! পরদিনই দগ’দগে ক্ষ’ত লুকিয়ে, চরিত্রের প্রয়োজনে সিঁথিতে পরেছিলেন সিঁদুর! স্বামীহারা তনুকা চট্টোপাধ্যায়ের অদম্য মানসিক জোরের, চোখে জল আনা বাস্তব গল্প!

বাইরে থেকে দেখলে তারকার জীবনটা যেন আলো ঝলমলে, সুখে মোড়া। পর্দায় হাসিমুখ, চারপাশে ব্যস্ততা আর কাজের পাহাড় মিলিয়ে মনে হয় তাঁদের কোনও দুঃখ-কষ্ট নেই! কিন্তু বাস্তবের গল্প অনেকটাই ভিন্ন। মানুষ হিসেবে তাঁদেরও ব্যক্তিগত লড়াই আছে, আছে বেদনাও। সেই আলো-আঁধারি পথেরই এক নাম অভিনেত্রী ‘তনুকা চট্টোপাধ্যায়’ (Tanuka Chatterjee)। পর্দায় তাঁকে যতটা শক্ত দেখায়, বাস্তব জীবনের ততটাই কাঁটার মতো বেদনা লুকিয়ে আছে।

দীর্ঘ তিন দশকের দাম্পত্য, তারপর আচমকা ছেদ। না, বিচ্ছেদ নয়! ২০২৩ সালের মার্চ মাসে স্বামীকে হারানোর ধাক্কা আজও মনে র’ক্তাক্ত দাগের মতো লেগে আছে। শুটিং ফ্লোরে লাঞ্চব্রেকে হঠাৎ পাওয়া সেই দুঃসংবাদ যেন মুহূর্তেই সব ওলট-পালট করে দেয়। ভেঙে পড়েছিলেন, তবুও পরেরদিনই আবার কাজে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। চরিত্রের প্রয়োজনে সিঁথিতে সিঁদুর পরেছিলেন, কিন্তু বাস্তবের শূন্যতা মেনে নিতে এখনও যুদ্ধ চলছে।

অভিনেত্রীর আক্ষেপ, “কেউ আর লাঞ্চব্রেকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে না যে ‘খেয়েছ’?” ছোট্ট একটা প্রশ্নই বুঝিয়ে দিয়েছে, সেই মানুষটার না থাকাটা কী ভীষণ ভারী হয়ে উঠেছে তাঁর কাছে! তনুকার জীবন কিন্তু শুধু এই বেদনার গল্পে থেমে নেই। ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক পরিবেশে বড় হওয়া, মাসির মাধ্যমে পরিচিতি, স্টেজ শো মিলিয়ে শিল্পীসত্তার ভিতটা তৈরি হয়েছিল বেশ আগেই। তারপর বিয়ে, সন্তান, সংসার সবই চলেছে নিজের মতো।

মাসি ছিলেন নাম করা অভিনেত্রী। সেই সূত্রে ছোট থেকেই তনুকাকে অনেকে চিনতেন। বড় হতেই পরিচিতির জোরে আসতে থাকে, স্টেজ শো-এর প্রস্তাব। একটা সময় অনেক স্টেজ শো করেছেন তিনি। এরপর ১৯৯১ সালে বিয়ে আর ১৯৯৩ সালে কোলে আসে কন্যা সন্তান। মাঝে কিছুটা বিরতি থাকলেও ২০০০ সালে অভিনয়ে ফেরার পর যেন নতুন করে পথচলা শুরু। ‘রামকৃষ্ণ’ থেকে শুরু করে একের পর এক ধারাবাহিক তাঁকে স্থান দিয়েছে দর্শকের ঘরে ঘরে।

জীবনের এই দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করার পেছনে বরাবর তিনি অবদান দিয়ে এসেছেন লেখিকা লীনা গঙ্গোপাধ্যায়কে। ছোটপর্দায় পা রাখার পর আর পিছনে তাকাতে হয়নি তাঁকে। একটা সময় তো এমন হয়েছিল ২০০৪-৫ সালে হাতে একাধিক ধারাবাহিকের কাজ! কখনও মা, কখনও জেঠিমা, আবার কখনও ঠাকুমা চরিত্রে তিনি এমনভাবে মিশে গেছেন যে দর্শকেরাও তাঁকে মনে করেছেন বাড়ির মানুষ। স্টার জলসার ‘কথা’ শেষ হওয়ার পর মন খারাপ হয়।

আরও পড়ুনঃ জন্মদিনেই হাসপাতালে অভিনেত্রী-পরিচালিক সুদেষ্ণা রায়! ভর্তি ছিলেন আইসিইউ’তে, গুরুতর অসু’স্থতার পর কেমন আছেন তিনি?

তবে, নতুন পথ খুলে দিয়েছে ‘ও মোর দরদিয়া’। এবার ধূসর চরিত্র, অন্য স্বাদের অভিনয়। নিজেকে বদলে নেওয়ার এই সাহসই তাঁকে আলাদা করে চেনায়। দিনের শেষে তনুকা চট্টোপাধ্যায়ের জীবন প্রমাণ করেছে যে তারকারা যতটাই উজ্জ্বল হোন না কেন, তাঁদের ভেতরেও লুকিয়ে থাকে অসমাপ্ত শোক আর সাহস। একদিকে বেদনা, অন্যদিকে দায়িত্বর মাঝেই হাঁটছেন তিনি। কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা তাঁকে শক্ত করে, আর স্মৃতি তাঁকে মাঝে মাঝে থমকে দেয়। তবুও থামেনি, সামনে এগিয়ে চলার এই লড়াইই হয়তো তাঁর জীবনের আসল শক্তি।

You cannot copy content of this page