বস্তির ১০/৮-এর ঘুপচি ঘর থেকে আলো ঝলমলে পর্দায়, হাল ছাড়েননি অভিনেতা শুভজিৎ কর! নিজের লড়াইকে স্ট্রাগল নয়, শেখার পথ বলেই মানেন তিনি! জানেন, কেমন ছিল তাঁর অভিনেতা হয়ে ওঠার অসম্ভব যাত্রা?

আমরা সবাই কমবেশি স্বপ্ন দেখি। দিনের শুরুটা স্বপ্ন দেখেই হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই স্বপ্নকে ধরে রেখে এগিয়ে যাওয়ার সাহস কজনের থাকে? ব্যর্থতা, না-পাওয়া, সুযোগের অভাব, এসবের সামনে দাঁড়িয়ে বেশিরভাগ মানুষই হাল ছেড়ে দেয়। কিন্তু অভিনেতা ‘শুভজিৎ কর’ (Suvajit Kar) সবার থেকে আলাদা। তার জীবনের গল্পটা যেন প্রমাণ করে দেয়, ইচ্ছেটা শক্ত হলে যাত্রাপথ যতই কঠিন হোক না কেন, থেমে যাওয়া যায় না! বস্তি এলাকায় টালির ছোট্ট ঘরে জন্ম নেওয়া সেই ছেলেটা জানত, সামনে লম্বা পথ এবং শুরুর লড়াইটা হবে খুব কঠিন।

তবুও থামেনি সে, কারণ ভরসা ছিল নিজের ওপর। এমনও দিন গেছে, থাকার জায়গা বলতে ছিল মাত্র ১০/৮-এর ছোট্ট একটি ঘর। সেখানে ভাড়া না দিতে হলেও ছিল ভাগ করে থাকার সংকোচ, খরচ সামলানোর দায়িত্ব। বাবার পাঠানো অল্প কিছু টাকা জমিয়ে রাখতে তিনি নিজেই পার্ট-টাইম কাজ করতেন, যাতে অভিনয়ের স্বপ্নটা ভেঙে না যায়। তখনো শিল্পীর পরিচয় নেই, নাম নেই কিন্তু আছে অদম্য বিশ্বাস যে একদিন ঠিক নাম উঠবে, আলো পড়বে, দর্শক চিনবে! সেই ছেলেটাই পরে নৈহাটির থিয়েটার থেকে কলকাতার মঞ্চে পৌঁছে গেল।

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হলো পড়াশোনা আর মঞ্চের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা। এরপর ২০০৯ সালে সুযোগ এল ছোটপর্দায়। রূপসী বাংলার একটি ধারাবাহিকে প্রথমবার পর্দায় দেখা যায় তাকে, রোম্যান্টিক চরিত্রে। দর্শকের চোখে আস্তে আস্তে পরিচিত হতে শুরু করলেন শুভজিৎ। নায়ক, খল নায়ক থেকে বন্ধুর চরিত্র কিংবা পার্শ্ব ভূমিকা। যে চরিত্রই হাতে এসেছে, নিজের মতো করে ফুটিয়ে তুলেছেন।

সম্প্রতি ‘চিরসখা’ ধারাবাহিকে বর্ষার প্রেমিকের চরিত্রে তাকে শেষবার দর্শক দেখেছেন আর সেই চরিত্রেই দর্শকের মন জিতে নিয়েছেন সহজ অভিনয়ে। মানুষ যা দেখে বিশ্বাস করে, শুভজিৎ সেই সত্যিটা অভিনয়ে ধরে রাখতে চেয়েছেন সবসময়। প্রসঙ্গত, অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালনার কাজও হাতে নিয়েছেন তিনি। যেন নিজের গল্পটা এক জায়গায় আটকে না থেকে আরও নতুন পথ খুঁজে নিচ্ছে। শুধু পেশাগত জীবন নয়, ব্যক্তিগত যাত্রাটাও ধীরে ধীরে এগিয়েছে।

আরও পড়ুনঃ ৩২ বছরের সঙ্গীকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছিলেন, তবু থামাননি অভিনয়! পরদিনই দগ’দগে ক্ষ’ত লুকিয়ে, চরিত্রের প্রয়োজনে সিঁথিতে পরেছিলেন সিঁদুর! স্বামীহারা তনুকা চট্টোপাধ্যায়ের অদম্য মানসিক জোরের, চোখে জল আনা বাস্তব গল্প!

দীর্ঘদিন লিভ-ইনের পর ২০১৯ সালে, ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী প্রিয়ম চক্রবর্তীকে বিয়ে করেন। ২০২২ সালে বাবা হন একটি পুত্র সন্তানের। আজ দুজনেই নিজেদের স্বপ্ন নিয়ে পাশাপাশি এগিয়ে যাচ্ছেন। সংসার আর শিল্প, দুটোই সমান গুরুত্ব দিচ্ছেন। তবে, শুভজিৎ করের গল্পটা তাই শুধু সংগ্রামের গল্প নয়, এটা বিশ্বাস ধরে রাখার গল্প। সাফল্য মানেই বিলাসিতা নয় বরং নিজের জায়গা নিজেই তৈরি করা। বস্তির সেই ছোট্ট ঘর থেকে আলো ঝলমলে সেটেও মনোভাব একই। স্বপ্নটা শুরু হয়েছিল সীমিত সুযোগ নিয়ে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত জিতে গেছে চেষ্টা।

You cannot copy content of this page