Aditi Ghosh Exclusive: ইন্ডাস্ট্রিতে ছিল না কোনো গডফাদার! দুর্গাপুর থেকে রোজ কলকাতা যাতায়াত করে আজ মুখ্য খলনায়িকা বৌমা একঘরের “রিয়া”! ‘মানুষের রাগ হলে সেটাই আমার প্রাপ্তি’, বলছেন অদিতি ঘোষ
পাঁচ বছর বয়স থেকেই টিভির সামনে বসে পড়তেন সিনেমা, সিরিয়াল দেখতে। কারণ তিনি অভিনেত্রী হবেন। শপিংমলে মডেলদের মতো পোজে দাঁড়িয়ে পড়তেন হুটহাট। অভিনয়ের পোকা ঢুকে গিয়েছিল তাঁর মাথায়। তারপর একের পর এক অডিশন আর শেষমেষ পেলেন এই মুহূর্তে অন্যতম জনপ্রিয় এক ধারাবাহিকের মুখ্য খলনায়িকার ভূমিকায় কাজ।
এতক্ষণ যাঁর কথা বললাম তিনি হলেন অভিনেত্রী অদিতি ঘোষ ওরফে বৌমা একঘর ধারাবাহিকের খলনায়িকা রিয়া। অনেকেই নায়িকার আসল নামের থেকেও নায়িকার চরিত্রের এই নামটাই বেশি জানে এবং চেনে। আমরা ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার নিলাম নায়িকা অদিতি ঘোষের। উঠে এলো নায়িকার জীবনের নানা জানা অজানা কাহিনী এবং প্রথম কাজের কথা।
শুরুতেই আপনাদের জানিয়ে দিয়েছি যে খুব কম বয়স থেকেই নাচ গান এবং অভিনয়ের প্রতি একটা ঝোঁক ছিল নায়িকার ভেতরে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা যদিও কেউ চাইনি নায়িকা এই প্রফেশনে আসুক তবে নায়িকার মা এবং বাবা বরাবর তাঁর জন্যে মানসিকভাবে এবং শারীরিকভাবে উৎসাহ এবং সাহায্য করে গিয়েছেন। দুর্গাপুরের অতিথি মাঝে মাঝেই অডিশন দিতে কলকাতায় আসতেন। প্রথমদিকে কাজের সুযোগ পেতেন না তবে ভেঙে পড়েননি তিনি। সেই যুদ্ধ যার কাহিনী আপনারাও পড়ুন।
নায়িকা অভিনয়ের জন্য প্রথাগতভাবে শিক্ষা নিয়েছেন। দুর্গাপুর থেকে ক্লাস করেছেন এবং নিয়মিত শিখেছেন এক অভিনয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। সেখান থেকে এক সুন্দরী প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন এবং পুরস্কার গ্রহণ করেন বর্তমানে নায়িকার শাশুড়ির ভূমিকায় অভিনয় করা অভিনেত্রী চৈতী ঘোষালের হাত থেকে। ওই প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অর্জনের পর বেশ কিছু দৈনিক সংবাদপত্রে নায়িকার নাম এবং ছবি প্রকাশ পায়। অডিশনের জন্য এভাবেই ডাক পান তিনি।
তবে নায়িকা জানিয়েছেন অডিশনের পর অডিশন দিয়ে গেছিলেন একসময় এবং অপেক্ষা করতে হয়েছে কবে তিনি কাজ পাবেন। এই নিয়ে রীতিমতো অনিশ্চয়তা ছিল নায়িকার মনে। পার্শ্ব চরিত্র ও ক্যামিও চরিত্রেও কাজ করতেন সেই সময় কিন্তু তিনি মনে মনে ভাবতেন তিনি কি সত্যিই কাজ পাবেন না মুখ্য চরিত্রে? কিন্তু নায়িকা মনে করতেন যে কোন চরিত্রে কাজ পাওয়াটাই বড় কথা। অদিতি বললেন তিনি আদৌ কাজ কখন পাবেন তার জন্য কার কাছে যাবেন সেটাই হলো সব থেকে বড় ব্যাপার।
নায়িকা বরাবর পজিটিভ চরিত্রে অভিনয় করেছেন কিন্তু প্রথম ব্রেক যেটা পেলেন সেটা খলনায়িকার ভূমিকায়। তাই প্রশ্ন রাখা হয়েছিল যে এর মাধ্যমে তিনি কী মনে করেন তাঁর ফ্যান ফলোয়ারদের উপর কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে? প্রথম কাজ তিনি করেছেন আকাশ ৮ চ্যানেলে। তারপর জয় বাবা লোকনাথ ধারাবাহিকে কাজ করেছেন। এরপর বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না ধারাবাহিকে বালি বলে নামক রাজ্যের রাজকন্যা চরিত্রে অভিনয় করেছেন অদিতি। কালার্স বাংলার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ত্রিশূলে নায়কের বোনের চরিত্রে দেখা দিয়েছিল এই অভিনেত্রীকে।
কিন্তু প্রথমবার তিনি যখন একটি খলনায়িকার ভূমিকায় কাজ করার সুযোগ পেলেন তখন তিনি অবাক হয়ে গিয়েছিলেন যে কী দেখে নির্মাতারা তাঁকে এই সুযোগটা দিলেন। তাই সেই সময় তিনি বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন এবং রীতিমতো এই ভাবনায় পড়ে গিয়েছিলেন যে আদৌ তিনি এই চরিত্রটা ফুটিয়ে তুলতে পারবেন কিনা। রিয়া চরিত্রটা তাই নায়িকার কাছে বরাবর বেশ চ্যালেঞ্জিং একটা চরিত্র।
খলনায়িকার চরিত্রে অভিনয় করা একেবারেই সহজ নয় কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন এবং বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন। তাই আমরা জানতে চেয়েছিলাম এর জন্য কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন তিনি। পাশাপাশি অভিনয় জগতে নতুন এসে প্রথমেই খলনায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করার ফলে বিপুলসংখ্যক দর্শকদের মনে কী প্রভাব পড়তে পারে? নায়িকা একেবারেই অন্য কিছু চিন্তা করেননি এবং সরাসরি এই সুযোগটি লুফে নিয়েছিলেন। কারণ এতদিন ধরে তিনি শুধু অপেক্ষা করেছিলেন একটা মুখ্য চরিত্রের সুযোগ পাওয়ার। তবে একটা ভয় কাজ করতো। শুটিং এর প্রথম দিন তিনি সাধারণভাবেই সংলাপ বলছিলেন তবে অন্যান্য সদস্যরা রীতিমতো নায়িকাকে বোঝাচ্ছিলেন কীভাবে সংলাপ বলতে হবে খলনায়িকার চরিত্রে অভিনয় করতে গেলে।
রিয়ার চরিত্রে অভিনয় করেই আলোচনায় উঠে এসেছেন অদিতি। তাই অবশ্যই জানতে হয় এক্ষেত্রে নায়িকার অনুরাগীরা কী ধরণের প্রতিক্রিয়া দেন? অদিতি জানান সম্প্রতি একবার বনগাঁতে মামাবাড়ি গিয়েছিলেন। তখন একজন দোকানদার অদিতির মাকে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করেন “তোর মেয়ে এ কেমন ভূমিকায় অভিনয় করছে?” শুধু এটাই একটা প্রতিক্রিয়া নয়, হামেশাই ধারাবাহিকের নানা পেজে মানুষজন রিয়াকে যে পছন্দ করে না সেটা জানায় কমেন্ট করে। পাশাপাশি নায়িকাকে নিয়ে কোনো খবর সামনে এলেও তারা একই প্রশ্ন করে যে রিয়া কেনো এতো খারাপ? পাশাপাশি নানা কুরুচিকর মন্তব্য আসে। কিন্তু এমন মন্তব্য এলে নায়িকা পাত্তা দেন না। মাঝে মাঝেই খারাপ লাগে কারণ পরিশ্রম করেন কিন্তু এমন প্রতিদান পেলে সেটা একটু প্রভাব পেলে নায়িকার মনে। আর অনুরাগীরা নায়িকার পাশে এসে দাঁড়ায়।
এরপর অদিতির কাছে জানতে চাওয়া হয় যে এই কে আজকাল নানা ধরণের খারাপ বিষয় দেখানো হয় সঙ্গে থাকে খলনায়ক বা খলনায়িকা সেক্ষেত্রে এগুলো সমাজ তৈরির ক্ষেত্রে কী ধরণের বার্তা দেয়? নায়িকা জানা গল্পতে নানা বিষয় থাকে। তবে এই ধারাবাহিক একটু হাস্যরস মিশ্রিত। কিন্তু নানা স্বাদ থাকলে তবেই দর্শক মজা পাবে। কিন্তু পর্দায় টিয়ার সঙ্গে খুনসুটি করলেও বাস্তবে সুস্মিতা দের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক অদিতির। সুস্মিতা নায়িকাকে প্রথম দিন থেকেই সাহায্য করেন শুটিংয়ের ক্ষেত্রে। বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।
আজকাল একট সিরিয়ালের সাফল্য বা ব্যর্থতা অনেকটাই টিআরপি নির্ভর। তাই অদিতি কি মনে করেন যে টিআরপি একজন নায়ক বা নায়িকা অভিনয়ের মাপকাঠি হয়ে উঠতে পারে? অদিতি কিন্তু বিষয়টির সঙ্গে একেবারেই সহমত পোষণ করেননি এবং তিনি জানিয়েছেন কখনোই টিআরপি কোন অভিনেতা বা অভিনেত্রীর অভিনয় কতটা ভালো সেটার মাপকাঠি হতে পারে না। তিনি জানান একটি ধারাবাহিকের সাফল্য বা ব্যর্থতা বা জনপ্রিয়তা এই বিষয়টির উপর নির্ভরশীল হলেও একজন অভিনেতা বা অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত অভিনয়ের দক্ষতা পরিমাপ করার মাপকাঠি হতে পারে না।
এরপরে নায়িকার কাছে রাখা হয় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন যেটা সম্পূর্ণ নায়িকার ভবিষ্যৎ কেরিয়ারের বিষয়ে জড়িত। আমরা জানতে চেয়েছিলাম নায়িকার পরবর্তী ভাবনা কী? আরও কি নায়িকাকে বড় পর্দায় দেখা যেতে চলেছে খুব তাড়াতাড়ি? আপনাকে জানিয়েছেন তিনি ইতিমধ্যেই সিনেমা করে ফেলেছেন যার নাম নির্ভয়া। ওয়েব সিরিজের জন্য প্রচুর প্রস্তাব পেয়েছিলেন তিনি তবে রিয়া চরিত্রটি করতে গিয়ে নায়িকাকে বেশ কিছুটা পরিশ্রম করতে হচ্ছে তাই তিনি এখন পুরোপুরি সিরিয়ালকেন্দ্রিক মানসিকতায় বিশ্বাসী।
নায়িকা কোথায় কোথায় অনেকবার জানিয়েছিলেন যে তিনি বেশ কয়েকবার অডিশন দিয়েছেন এবং প্রথমবারেই সাফল্য আসেনি। পাশাপাশি এই কাজের ক্ষেত্রে একটা অনিশ্চয়তা বরাবর থেকে যায় যে প্রথম প্রস্তাব পেলেও কাজ শেষ হবার পর আবার কেউ প্রস্তাব দেবে কিনা। তাই এই প্রসঙ্গে সম্প্রতি বেশ কিছু উঠতি মডেল এবং অভিনেত্রীদের আত্মহত্যা খবর আমরা পেয়েছিলাম। নায়িকা জানিয়েছেন এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না। একটা সময় তিনিও অনেক পরিশ্রম করেছেন এবং দুর্গাপুর থেকে কাজের জন্য আসতেন কলকাতায়। এমনকি থাকার জায়গা পর্যন্ত ছিল না সেখানে। তবে মনে বিশ্বাস ছিল এবং নিজের প্রতি আস্থা ছিল নায়িকার যে তিনি একদিন না একদিন সফল হবেন। তাই অদিতি মনে করেন মৃত্যু মানে হেরে যাওয়া সবকিছুর কাছে যেটা কোনভাবেই কাম্য নয়।
সাক্ষাৎকার: তিতলি ভট্টাচার্য