বাংলা টেলিভিশনের চিত্র বদলে দিয়েছিল ‘বৌ কথা কও’ ধারাবাহিক! মৌরি-নিখিল এর জুটি আজও ভুলতে পারেন না দর্শক! এমন ধারাবাহিক আর দেখা যায় না! যদিও মানালি এখন জনপ্রিয় অভিনেত্রী, ঋজু কোথায় হারিয়ে গেলেন?
২০০৯ সালের মাঝামাঝি সময়, বাংলা টেলিভিশনের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয় স্টার জলসার (Star Jalsha) হাত ধরে। প্রতিদিন সন্ধ্যা সাতটা বাজলেই বাঙালির ড্রয়িং রুমে শোনা যেত “বৌ কথা কও” (Bou Kotha Kao) গানটি। এটি ছিল চ্যানেলের অন্যতম প্রথম ধারাবাহিক, এবং শুরুতেই তা দর্শকমনে ঝড় তুলেছিল। রবি ওঝার প্রোডাকশনে তৈরি হওয়া এই সিরিয়াল এক লহমায় মন জয় করে নিয়েছিল আপামর বাঙালির। শহর থেকে মফস্বল—সব দর্শকের ঘরের মানুষ হয়ে উঠেছিল ‘মৌরি’ (Manali Dey) আর ‘নিখিল’ (Riju Biswas)।
ধারাবাহিকটির গল্প, অভিনয় আর আবেগের বাঁধনে এমনভাবে বেঁধেছিল যে আজও দর্শকরা এই সিরিয়ালকে এক বিশেষ আসনে বসিয়ে রাখে। ‘বৌ কথা কও’-র কেন্দ্রবিন্দু ছিল একেবারে গ্রাম্য পরিবেশ থেকে আসা সহজ-সরল মেয়ে মৌরি– যার সহজ-সরল চেহারা, কোলে ছোট্ট ছাগল ছানা, আর নিষ্পাপ চাউনি এবং তার শহুরে স্বভাবের স্বামী নিখিলের সম্পর্কের গল্প। নিখিল, একজন বিদেশফেরত আধুনিক যুবক—যার সঙ্গে মৌরির হঠাৎ বিয়ে হয় তার দাদুর ইচ্ছায়। দুই ভিন্ন সংস্কৃতির সংঘর্ষ আর এক নারীর নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার লড়াই ছিল গল্পের মূল উপজীব্য।
এই মৌরির চরিত্রে মানালি দে এমন অভিনয় করেছিলেন যে, দর্শক তাকে পর্দার চরিত্র নয়, নিজেদের পরিবারের একজন বলে ভাবতে শুরু করেন। অন্যদিকে নিখিলের চরিত্রে অভিনয় করেন ঋজু বিশ্বাস, যিনি তখন ছিলেন অভিনয়ে একেবারেই নতুন। কিন্তু তাঁর পরিণত ও সংযত অভিনয় দর্শকমনে দাগ কেটে যায়। এই ধারাবাহিকের টাইটেল ট্র্যাক গেয়েছিলেন উপালি চট্টোপাধ্যায়। গানটি তখন এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে, সন্ধ্যা সাতটা বাজলেই মানুষ টিভির সামনে বসে পড়তেন শুধু গানটা শোনার জন্যেও। সেই সময়, ‘বৌ কথা কও’ শুধুই একটি সিরিয়াল ছিল না, তা ছিল আবেগ, ছিল বাঙালির একান্ত ঘরের কথা।
সিরিয়ালের জনপ্রিয়তার পিছনে শুধু মৌরি-নিখিল নন, বরং পুরো কাস্টের অভিনয় ছিল অনবদ্য। অনিন্দিতা বসু, দিশা গঙ্গোপাধ্যায়, ঋদ্ধিমা চক্রবর্তী, মৌমিতা গুপ্ত, সম্রাট মুখোপাধ্যায়, অনসূয়া মজুমদার থেকে শুরু করে সেই সিরিয়ালের হাত ধরে উঠে এসেছিলেন ঋত্বিকা সেনের মতো তারকারাও। প্রত্যেকটি চরিত্র, তাদের সংলাপ, এমনকি লুক-স্টাইল সবকিছু আজও দর্শকের মনে গেঁথে রয়েছে। ২০২৪ সালে যখন ‘বৌ কথা কও’ পুনঃপ্রচার শুরু হয় দুপুর ১২টায়, তখন ফের একবার স্মৃতির সরণিতে হাঁটা শুরু করে বাঙালি দর্শক। যদিও আগে লকডাউনের সময় অল্প কিছুদিন এই ধারাবাহিকটি আবার টেলিকাস্ট করা হয়েছিল।
আজকাল ধারাবাহিকের আয়ু কমছে, গল্প ঠিকঠাক জমে ওঠার আগেই প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, সেখানে ‘বৌ কথা কও’ ছিল দীর্ঘমেয়াদি এবং পরিণত। প্রতিটি ট্র্যাক, প্রতিটি মোড় দর্শকের মন ছুঁয়ে গিয়েছিল। সেই ধারাবাহিকের তুলনায় আজকের ধারাবাহিকগুলি যেন অনেকটাই কৃত্রিম আর দ্রুতগতির। যদিও মানালি দে তাঁর কেরিয়ারকে সাফল্যের সঙ্গেই ধরে রেখেছেন এবং টেলিভিশন থেকে বড়পর্দা পর্যন্ত বিস্তৃত করেছেন নিজের অবস্থান, সেই তুলনায় ঋজু বিশ্বাসের কেরিয়ার গতি হারিয়েছে। ‘বৌ কথা কও’ শেষ হওয়ার পর ‘ অনেকদিন পর্দা থেকে দূরে ছিলেন।
এরপর ‘তোমায় আমায় মিলে’ ধারাবাহিকে নিশীথের চরিত্রে তাঁকে ফের একবার দেখা যায়। মাঝপথেই সিরিয়াল থেকে সরে যাওয়া যেন তাঁর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। গৌরব রায়চৌধুরী এসে চরিত্রটি সামাল দিলেও, দর্শকের মন থেকে নিখিল বা নিশীথ হিসেবে ঋজুর ছাপ মুছে যায়নি। তবে তাঁর সিরিয়াল ছেড়ে যাওয়া ছিল কি স্বেচ্ছায়, না কি তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল—এই প্রশ্ন আজও রয়ে গেছে জিজ্ঞাসা হয়ে। কিন্তু তাতে একটি সত্য অস্বীকার করা যায় না—‘বৌ কথা কও’ আজও বাঙালির এক নস্টালজিক ধ্বনি, যেখানে মৌরি-নিখিল মানেই মানালি-ঋজু।
“নায়িকা হতে গেলে একটু ‘বুকের খাঁজ’ দরকার!”— পরিচালকের কুৎসিত মন্তব্যে শিউরে উঠেছিলেন শোলাঙ্কি! ‘ব্রে’স্ট সা’র্জারি’ না করলে নায়িকা হওয়া যাবে না, সরাসরি বলেছিলেন এক পরিচালক! অবশেষে ফাঁস করলেন অভিনেত্রী তাঁর নাম!