বাঙালির কাছে ব্যোমকেশ থেকে শুরু করে কিরীটি, শবর, হালেত মিতিন মাসি যতই গোয়েন্দা চরিত্র থাক না কেন, শেষমেশ কিন্তু বাঙালি এসে দাঁড়ায় সেই প্রদোষ চন্দ্র মিত্রের দোরগোড়াতেই। বুঝলেন না? আরে সকলের প্রিয় ফেলুদা! সত্যজিৎ রায়ের অসামান্য সৃষ্টি এই গোয়েন্দা চরিত্রের সঙ্গে তুলনা টানা হয় স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের বিশ্ববিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র শার্লক হোমসের।
শুধু বইয়ের পাতায় নয়, সেলুলয়েডের খাতাতেও ফেলুদার অবাধ বিচরণ। সত্যজিতের হাত ধরে বড় পর্দায় প্রথম ফেলুদা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন কিংবদন্তী প্রয়াত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁর অভিনয়ে বরাবরই মুগ্ধ দর্শককুল। এরপর একে একে সব্যসাচী চক্রবর্তী, শশী কাপুর, আবির চট্টোপাধ্যায়, টোটা রায়চৌধুরী অনেকেই ফেলুদার চরিত্রে নিজের সবটা উজাড় করে দিয়েছেন।
তবে জানেন কী, সত্যজিৎ রায় কিন্তু অমিতাভ বচ্চনকে ফেলুদা হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। সেই প্রস্তাবও দেওয়া হয় বিগ বি-কে। তিনি রাজীও হয়ে যান। কিন্তু এরপরও অমিতাভের ফেলুদা হয়ে ওঠা হয়নি। কেন? জেনে নিন।
এই বিষয়ে সত্যজিৎ-পুত্র সন্দীপ রায় জানান তিনি নিজে আটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে জনপ্রিয় টেলিভিশন সিরিজ ‘সত্যজিৎ রায় প্রেজেন্টস’-এর জন্য ফেলুদা ছবি তৈরি করবেন বলে ভেবেছিলেন। গল্পও বাছা হয়। ঠিক হয় সন্দীপ রায়ের প্রথম ফেলুদা ছবি হবে ‘যত কাণ্ড কাঠমান্ডুতে’ দিয়েই।
সন্দীপ রায়ের কথায়, “ওই ছবিতে প্রথম থেকেই ফেলুদা হিসেবে অমিতাভ বচ্চনকে দেখতে চেয়েছিলেন বাবা। ভীষণভাবে চেয়েছিলেন অমিতাভ যেন ফেলুদা চরিত্রে অভিনয় করেন। তার ওপর ছবিটি যেহেতু হিন্দি ভাষায় তৈরি হচ্ছে তাই ওই সময়ে গোটা ভূ-ভারতে অমিতাভের থেকে বেশি জনপ্রিয় আর কোনও বলি-তারকা ছিলেন না। তাই সবদিক ভেবেই বাবা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন”।
এরপরই অমিতাভ বচ্চনের কাছে ফেলুদার প্রস্তাব যায়। তিনি সানন্দে রাজী হয়ে যান। কিন্তু তখন অমিতাভ দেশের সবথেকে ব্যস্ততম অভিনেতা। হাতে একের পর এক ছবি। অনেক চেষ্টা করেও তিনি ফেলুদা ছবির জন্য সময় বের করতে পারেননি। তাঁর ডায়েরির সব ডেট তখন লকড।
অগত্যা উপায় না দেখে শেষ পর্যন্ত শশী কাপুরকে ‘ফেলুদা’ করা হয়। ছবি নাম ‘কিসসা কাঠমান্ডু কা’। তবে অমিতাভকে নিয়ে সত্যজিৎ রায় শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’ ছবিতে কাজ করেছিলেন। অমিতাভও সেই কাজ করে একপ্রকার অনেকটা সন্তুষ্টিও পেয়েছিলেন।