ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে অন্যতম এক উজ্জ্বল নাম হল অমিতাভ বচ্চন। তৎকালীন হিরোর ধারণা পাল্টে কার্যত ‘ angry young man’ হিসেবে বড় পর্দায় তখন বচ্চনবাবু সুপার ডুপার হিট। তাঁর করা এক একটা সিনেমা তখন হলে মাসের পর মাস চলছে। দর্শকদের মনে আজও তিনি অতীব যত্নে নিজের জায়গা করে রেখে দিয়েছেন। কিন্তু বলিউডে ভিতরেও কি বিগ বির এইরকম সম্পর্কই ছিল সবার সঙ্গে?
উত্তর খুব স্বাভাবিকভাবেই না হওয়া উচিত। আমরা পর্দায় মানুষকে যেরকম দেখি আর মানুষটির বাস্তবে যেমন, তার মধ্যে অনেক তফাৎ থাকে। আরও তফাৎ হয় সেই মানুষটার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা চারপাশের মানুষের বিষয়ে। এছাড়া উন্নতির শিখরে পৌঁছে গেলে কাদা ছোড়াছুড়ি করা যেমন খুব সাধারণ বিষয়। খোদ বিগ বিও সেই সমালোচনার হাত থেকে রক্ষা পাননি। তবে তার দিকে আঙুল তুলেছিলেন তার সমকালীন অভিনেতা ওম পুরি।
মরাঠি ছবি ‘ঘাসিরাম কোতওয়াল’-এর মাধ্যমে বড় পর্দায় পদার্পণ হয় তাঁর। অভিনয়ের দিক দিয়ে তিনিও কিছু কম যান না। কিন্তু বচ্চন বাবুর মতো কাজের অফার তিনি কখনই পাননি। আর এই ক্ষোভ থেকেই মাঝে মধ্যেই প্রকাশ্যে তিনি বিগ বির বিরুদ্ধে নানা ধরনের মন্তব্য করে বসতেন।
বচ্চন বাবুর উচ্চতা, সৌন্দর্য্য ও স্ক্রিন প্রেজেন্স চোখে পড়ার মতোই ছিল। তাই স্বাভাবিকভাবেই দর্শক তাঁকে দেখার জন্য পাগল। দর্শক যেদিকে প্রোডিউসার ও ডিরেক্টরও সেদিকেই যাবে। ওম পুরির দাবি ছিল, তাঁকে দেখতে সুন্দর না হওয়ায় তিনি কম রোল পান। কিন্তু অভিনয়ের দিক দিয়ে তিনি কোনও অংশে পিছিয়ে নেই।
যদিও ২০০৩ সালে ‘দেব’ সিনেমায় দু’জনে একসঙ্গে কাজ করেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাজ করতে করতে তাঁদের মধ্যে প্যাঁচ কেটে সম্পর্ক বেশ মধুরই হয়ে ওঠে। কিন্তু পরবর্তীকালে আবার তাঁর সম্পর্কে বেঁকা মন্তব্য করেই বসেন তিনি।
১৯৮৫ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি অমিতাভের বিরুদ্ধে এক ভয়ঙ্কর অভিযোগ করে বসেন। তিনি বলেছিলেন, ‘ কুকুর যেমন কোনও জায়গায় বসার আগে নিজের লেজ দিয়ে পরিষ্কার করে নেয়, তেমনই ইন্ডাস্ট্রির কিছু মানুষ পরজীবীর মতো ঘুরে বেড়ায়। তারা শুধু নিতে জানে, ফেরত দেওয়ার বেলায় পকেট ফাটা ‘। এছাড়াও তিনি দাবি করেন যে কোনও সিনেমার তৈরির ক্ষেত্রে এক চতুর্থাংশ শুধু অমিতাভ বচ্চনকে পারিশ্রমিক দিতেই খরচ হয়ে যায়। তিনি যদি এক শতাংশও কম নিতেন তাহলে ইন্ডাস্ট্রির বাকি কাজের অনেকে অনেক ভালো জীবন কাটাতে পারতো।
এমনকী যে বছর ওম পুরি মারা যান, সেই বছরই শুরুর দিকে কাজের অভাবে তিনি আবারও দাবি করেন যে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি অনেক দূর যেতে পারেন। তবে অমিতাভ বচ্চন কোনওদিন প্রকাশ্যে তাঁর সম্পর্কে কোনও কথা বলেননি। তবে দীর্ঘ সময় তাঁর সঙ্গে সিনেমা করতে নারাজ থাকতেন তিনি। ২০১৭ সালে ৬ জানুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওম পুরি মারা যান। তখন বিগবি অভিষেক বচ্চনকে নিয়ে তাঁর বাড়িতে যান। প্রকাশ্যে মিডিয়াকে জানান যে ওম পুরি তাঁর ভালো বন্ধু ছিলেন। তিনি তাঁর পরিবারের পাশে এই দুঃখের মুহূর্তে সবসময় আছেন।