বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার ‘তনুশ্রী শঙ্কর’ (Tanusree Shankar) শুধু নাচের নয়, অভিনয় জগতেও সমান জনপ্রিয়। ‘দুই পৃথিবী’, ‘হামি’ –সহ অনেক মনে রাখার মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি তরুণ নৃত্যশিল্পীদের (Classical Dancer) ভবিষ্যত নিয়ে আন্তরিকভাবে কথা বলেছেন। নিজের জীবনে নৃত্যের জায়গা কিভাবে তৈরি হয়েছে, পরিবার কীভাবে সমর্থন করেছে এবং নতুন প্রজন্মের জন্য তাঁর পরামর্শ— এসব একসঙ্গে তুলে ধরেছেন তিনি।
তনুশ্রীর কথায়, নিজের পরিবারের কোনও ব্যক্তি নাচের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। বাড়ির সকলেই চিকিৎসক বা আইনজীবী ছিলেন, বলেন তিনি। তবু ছোট থেকেই নাচের প্রতি আকর্ষণ ছিল তনুশ্রীর, সেই কারণে বাবার সিদ্ধান্তে তিনি ‘উদয় শঙ্কর কালচারাল সেন্টার’-এ ভর্তি হন এবং পণ্ডিত কমলেশ্বর শঙ্করের কাছে শিখতে শুরু করেন। এরপর জীবনসঙ্গী হিসেবে সঙ্গীতশিল্পী আনন্দ শঙ্করের সঙ্গে সংসার শুরু হয় তাঁর।
বিয়ের পর আনন্দ শঙ্করের সমর্থন ও শ্বশুরবাড়ির সাহচর্যই ছিল নাচকে পেশা হিসেবে গড়ে তোলার বড় সহায়িকা, তিনি বলেন। তনুশ্রী স্পষ্ট করে জানালেন, নাচকে প্রশিক্ষণ ছাড়া বা অনলাইন ভিডিও দেখে পেশা বানানো সম্ভব নয়! অনলাইনে নাচ শেখ সম্ভব, এটাই অধিকাংশের কাছে ভুল ধারনা। যারা নাচকে কর্মসংস্থান হিসেবে দেখতে চান, তাঁর ভাষায়, “নাচ করা মানে লঘু কোনও কাজ নয়, এটাকে পেশা হিসেবে ভাবো।
গুরুর কাছ থেকেই শিখো, প্রতিদিন অনুশীলন করে যাও আর প্রতিযোগিতায় নামো। ইউটিউব এক সহায়ক মাধ্যম হলেও সেটাই অপর্যাপ্ত, গুরুর তত্ত্বাবধানে শাস্ত্রীয় নিয়ম-কানুন ও প্রকাশভঙ্গি শেখা জরুরি।” তিনি আরও বলেন, সমাজে এখনও অনেক সময় নাচকে ‘হবি’ বা ‘টাইমপাস কাজ’ হিসেবে দেখা হয়। কেউ যখন বলেন, ‘তুমি নাচ করো, আর কি করো?’ এমন প্রতিক্রিয়া চরম অবমাননাকর হয়।” তনুশ্রী মনে করেন, আজকার মেয়েরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে উঠতে পারে,
আরও পড়ুনঃ ‘চুলের মুঠি ধরে বলতেন, চুরি করিস নাকি!’ অতীতের সেই অপমানের স্মৃতি আজও ভুলতে পারেননি শঙ্কর, পাশে পেয়েছিলেন শুধু সোনালীকে!
তবে কেন নৃত্যশিল্পীও হবে না? প্রচেষ্টা, অধ্যবসায় ও প্রকৃত প্রশিক্ষণ থাকলে নৃত্যকেও পেশা হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। শেষ পর্বে তনুশ্রী নতুন প্রজন্মের কাছে এক জোরালো আহ্বান জানালেন, “ধৈর্য, নিয়মিত অনুশীলন এবং যোগ্য গুরুর নির্দেশ মেনে চলুন। শিল্পটিকে সামাজিক মর্যাদা দিতে হলে ব্যক্তিরা নিজে এটাকে পেশা হিসেবে নেবেন, বাজারে মান তৈরি করবেন এবং মানুষকে ধীরে ধীরে মানসিকতাও বদলাতে হবে। নাচ শুধু আবেগ নয়, কর্মজীবনের যোগ্য একটি বিদ্যা, এবং সেটাই সঠিকভাবে গড়ে তুলতে হবে।”