বাংলা বাচিক শিল্পের জগতে এক পরিচিত নাম ‘ঊর্মিমালা বসু’ (Urmimala Basu)। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি শুধুমাত্র একজন শিল্পী নন, বরং এক সংসারী নারী হিসেবেও নিজেকে গড়ে তুলেছেন। এই দুই পরিপূর্ণ ভুমিকায় তাঁর পথচলা নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। তবে যেটা সবচেয়ে মুগ্ধ করে, তা হলো– এত বছর একসাথে পথ চলার পরেও, তিনি আর তাঁর জীবনসঙ্গী জগন্নাথ বসুর সম্পর্কের আন্তরিকতায় একটুও চিড় ধরেনি। বরং সময়ের সাথে সাথে যেন সম্পর্কটা আরও বেশি গভীর হয়েছে।
বর্তমান সময়ে আমরা প্রায়ই দেখি, খুব সহজেই মানুষজন সম্পর্কে ফাটল ধরিয়ে ফেলছে। ছোটখাটো ভুল বোঝাবুঝি কিংবা মতবিরোধ থেকেই জন্ম নিচ্ছে দূরত্ব, তিক্ততা। অথচ ঊর্মিমালার জীবন থেকে একটা জিনিস খুব স্পষ্ট বোঝা যায়, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ইচ্ছাটাই আসলে সবচেয়ে বড়! একান্নবর্তী পরিবারে বড় হয়ে ওঠা ঊর্মিমালার জীবনে ‘একা থাকা’র ধারণাটা বড়ই অচেনা। তাঁর মতে, একসাথে থাকার আনন্দটাই জীবনের আসল শক্তি। একজন মানুষ যখন পরিবারে বেড়ে ওঠে, তখন ছোটখাটো ভুল-ত্রুটি, মতের অমিল সবই হয়।
কিন্তু সেগুলোর জন্য সম্পর্ক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে তো আর কেউ কারও হয় না। অনেক সময় মা-বাবার সঙ্গেও আমাদের মতের অমিল হয়। তবে কী সেটা মানে আমরা মাকে বা বাবাকে ছেড়ে দেবো? সম্পর্ক মানে তো শুধু ভালো থাকার জায়গা না, খারাপ সময়েও পাশে থাকাটাই মূল কথা। একদিন বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে তিনি তার জা-র সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় রকমের রুঢ় ব্যবহার করে ফেলেছিলেন। পরে অপরাধবোধে তিনি নিজেই এগিয়ে গিয়ে ক্ষমা চাইলেন। বিনিময়ে পেলেন এক প্রশংসা “তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।”
এমন ছোট ছোট মুহূর্তই তো সম্পর্ককে ধরে রাখে, তৈরি করে এক ধরনের মমত্ববোধ। প্রসঙ্গত, বাচিক শিল্পে সাফল্য অর্জনের পাশাপাশি সংসার জীবনের প্রতিটি বাঁকেও তিনি নিজস্ব সৌন্দর্য ও ভারসাম্য রেখে চলেছেন। নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও, সেই ব্যস্ততা কখনওই সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলতে দেননি। তাঁর কথায়, “ছোট থেকে অনেক মানুষের পরিবারে বড় হয়েছি। বিয়েও হয়েছে একান্নবর্তী পরিবারে, কাজেই আজও একা থাকার কথা ভাবতে পারি না।
আরও পড়ুনঃ “মাতৃত্বের জন্য পাগল হয়ে উঠেছিলাম”— অকপট কনীনিকা ব্যানার্জি! কেরিয়ারের উজ্জ্বলতম সময়ে সব হিসেব-নিকেশ পাশে সরিয়ে মা হওয়ার সিদ্ধান্ত অভিনেত্রীর, কিন্তু কেন এমন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি?
সবাই এতটাই আন্তরিকভাবে থাকি যে, অন্যরা বুঝতেই পারে না আমাদের সম্পর্কগুলো।” হয়তো মতের অমিল হয়েছে, কিন্তু তা কখনও তিক্ততায় গড়ায়নি। তিনি বিশ্বাস করেন, কথা বলে ভুল স্বীকার করলে, যে কোনও অভিমান সহজে মিটে যায়। শিল্পীর মতে, “একটা সময় ছিল যখন ভুল বোঝাবুঝি হলেও, মানুষ মুখোমুখি বসে মিটিয়ে নিতো। এখনকার প্রজন্ম সেই চেষ্টাটাই করে না। একটা ছোট মনোমালিন্যকে সারা জীবনের মান-অভিমানে পরিণত করা যেন অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্পর্ক রক্ষা করতে হলে অহংকে ভুলতে হয়। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে সবাই ব্যস্ত, ক্লান্ত আর একা থাকার স্বপ্নে বিভোর!”