ঠাকুরপুকুরের (Thakurpukur) ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনার (Road Accident) পর গ্রেপ্তার হয়েছেন পরিচালক ভিক্টো ওরফে সিদ্ধান্ত দাস। তারকার গাড়ি ছুটে গিয়ে আহত করেছে বহু পথচারীকে, যার জেরে টলিপাড়া কাঁপছে বিতর্কে। আর ঠিক এই সময়ই সমাজ মাধ্যমে এক রহস্যময় পোস্ট করেন অভিনেত্রী ‘অনিন্দিতা রায় চৌধুরী’ (Anindita Raychaudhury) —“সত্যি কথা একদিন বেরোতেই হয়”(The truth always comes out)! অথচ এই সিদ্ধান্ত দাসই এক সময়ের তার প্রেমিক, এমনকি তাঁরা ছিলেন লিভ-ইন সম্পর্কেও।
অনিন্দিতার ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা যাচ্ছে, সিদ্ধান্তের অতিরিক্ত মদ্যপান এবং চারিত্রিক অনিয়মই এই সম্পর্কের ভাঙনের কারণ ছিল। একাধিক বার সহ্য করার পর, একদিন সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে বেরিয়ে যান অভিনেত্রী। বর্তমানে তিনি অভিনেতা সুদীপ সরকারের স্ত্রী, এবং এক কন্যা সন্তানের জননী। পরিবার ও অভিনয় নিয়ে গড়ে তুলেছেন এক শান্ত, স্থিতধী জীবন। সেই প্রাক্তনের এই কাণ্ডে গ্রেপ্তার হওয়ার পরেই অনিন্দিতা পোস্ট করলেন এমন এক বাক্য, যা বোঝাচ্ছে—অনেক পুরোনো ক্ষত এখন যেন ঘুরে ফিরে সামনে এল।
এই পোস্ট সামনে আসতেই, সমাজ মাধ্যমে অনিন্দিতার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন বহু মানুষ। সহকর্মী ইমন চক্রবর্তী, অভিনেত্রী শ্রুতি দাস সকলেই সহসী মন্তব্যের জন্য বাহবা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে হাজার হাজার নেটিজেন কমেন্টে লিখছেন—”ভাগ্যিস আপনি সময় থাকতে বেরিয়ে এসেছিলেন”, “এমন বিকৃত রুচির লোকের সঙ্গে জীবন কাটালে ছারখার হয়ে যেত”, “আপনি একজন সাহসিনী, স্যালুট”। এক নেটিজেন লিখেছেন, “শেষ পর্যন্ত… যেদিন দুর্ঘটনাটা ঘটল, সেদিন থেকেই মনে পড়ছিল তুমি আমাকে চার বছর আগে পাঠানো ভিডিওগুলো,
জীবন একসময় সব হিসেব মিটিয়ে দেয় উনি… চিরকাল খুশি থেকো।” এই কথাগুলোর মধ্যে শুধু সহানুভূতি নয়, একটা দীর্ঘ অভিজ্ঞতার চাপা ক্ষোভও স্পষ্ট। আর একজন মন্তব্য করেন, “এই তো সত্যির অনিবার্য নিয়ম, অনিন্দিতা। যেমন বিশ্বাস ছিল কর্মফলেও। আপনার জীবনে যা যা প্রাপ্য ছিল—একটা ভালোবাসার পরিবার, বন্ধুর মতো জীবনসঙ্গী, নিজের একান্ত অংশ, একজোড়া নিঃস্বার্থ বন্ধু—সবটাই পেয়েছেন আপনি। তাই আপনার কাজের ফল আজ আপনার মাথায় আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।” কিন্তু তিনি এখানেই থামেননি।
সঙ্গে যোগ করেছেন এক তীব্র তিরস্কার—“কিন্তু চিন্তা হয় তখন, যখন অনিবার্য শাস্তিকে টাকা আর ক্ষমতার জোরে চাপা দেওয়ার চেষ্টা চলে। এই তো সাম্প্রতিক ঘটনাই বলুন—একজন মদ্যপ তারকার গাড়ি অনেকে মানুষকে পিষে দেয়। আজ সেই দোষকেই চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে এক নিরীহ ড্রাইভারের ঘাড়ে! সত্যকে বদলে দেওয়ার জন্য তার মাথার ওপর দাঁড়িয়ে গেছে টাকার পাহাড়।” তৃতীয় এক নেটিজেনের মন্তব্য আরও গভীর, “তুমি হয়তো তোমার গল্পটা নতুন করে লিখে নিজেকে মহৎ সাজাতে পারো,
কিন্তু তোমার কাজের প্রতিধ্বনি কখনও সে ভুলবে না—কে ভিলেন, সেটা সে ঠিকই মনে রাখে ভগবান।” এই শব্দগুলো যেন শুধুই সিদ্ধান্তকে উদ্দেশ করে লেখা নয়—এ যেন সেই সব মানুষদের জন্য যাঁরা জীবনে কেবল বাইরের মুখোশ দিয়ে নিজেদের ঢেকে রেখেছেন। এই প্রতিক্রিয়াগুলোর মাধ্যমে বোঝাই যাচ্ছে, অনিন্দিতার ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা অনেকের মধ্যেই এক রকম সাহস জুগিয়েছে—সত্য বলার, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর, এবং নিজের সীমারেখা টেনে বেরিয়ে আসার। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে হয়তো অনিন্দিতা কাউকে সরাসরি দোষ দেননি।
কিন্তু তাঁর স্পষ্ট বার্তা—“সত্যি চাপা থাকেনা”—ইতিমধ্যেই বহুজনের মনের কথা হয়ে উঠেছে। নেটিজেনদের কথায় এটা স্পষ্ট, অনিন্দিতা শুধু একজন প্রাক্তনের কীর্তিতে ক্ষুব্ধই নন, বরং সময়মতো নিজের সীমানা টেনে বেরিয়ে আসা তাঁর এক দৃঢ় মানসিকতার প্রতিফলন। এই ঘটনায় আবারও উঠে এলো, বিনোদন দুনিয়ার ঝলকানির আড়ালে কতখানি অন্ধকার লুকিয়ে থাকে। সম্পর্ক, সাফল্য আর সমাজের চাপে যখন অনেকেই ভেঙে পড়েন, তখন অনিন্দিতার মতো একজন নারীর এই স্পষ্ট অবস্থান হয়ে ওঠে অনুপ্রেরণার।
আরও পড়ুনঃ নববর্ষের উৎসব মুহূর্তে বিভীষিকা! বন্দুক হাতে সোনার সিঁথির সিঁদুর মুছল দীপা! খু’ন জামাই! অনুরাগের ছোঁয়ায় বিরাট ধামাকা
শেষমেশ, অনিন্দিতার পোস্ট হয়তো কোনো সরাসরি অভিযোগ নয়, কিন্তু তার মধ্যকার তীব্র ব্যঙ্গ আর আত্মবিশ্বাস বুঝিয়ে দেয়—‘সত্যি কখনও চাপা থাকে না’। আর টলিপাড়ার এই ঝড়ের মাঝে, সেই সত্যিটাই ধীরে ধীরে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। জীবনের এই ক্রান্তিকালে যখন সমাজ, ক্ষমতা আর টাকার খেলা সত্যকে চাপা দিতে চায়, তখন অনিন্দিতার মতো একজনের স্পষ্ট অবস্থান যেন ঘোর অন্ধকারে এক টুকরো আলোর মতো,—এই যুদ্ধটা সত্যর, আর সে শেষমেশ জিতবেই।