হইচইকে বলেছেন প’র্ন, নিজেকে স্টার ভাবেনই না, খড়কুটো কোনোদিন দেখেননি,প্রয়াত অভিষেক চ্যাটার্জীর করা মন্তব্যগুলো ফিরে দেখা আরেকবার…

কয়েকমাস আগে অভিনেতা অভিষেক চ্যাটার্জী কে নিয়ে চলেছিল তুমুল হইচই তার কারণ তার করা একটি মন্তব্য। বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় ও টি টি প্লাটফর্ম হইচইকে তিনি বলে দিয়েছিলেন প’র্ন ওয়েবসাইট। কয়েকমাস আগেই তিনি বলেছিলেন যে এই প্লাটফর্ম টি পরিবারের সঙ্গে বসে দেখা যায় না কারণ এর কনটেন্টে এত বেশি প’র্ন থাকে। তা নিয়েই একসময় চলেছে তুমুল বিতর্ক।আজ সকালে তার অকস্মাৎ প্রয়াণে আরো একবার উঠে আসল সেই প্রসঙ্গ।

টলিউডের জনপ্রিয় ও বহু পরিচিত অভিনেতা তিনি। রুপোলি পর্দায় পা রেখেছিলেন তরুণ মজুমদারের ‘পথভোলা’ ছবি দিয়ে। কাজ করেছেন সন্ধ্যা রায়, প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি, তাপস পাল, এবং উৎপল দত্তের মতো মানুষদের সঙ্গে। কিন্তু নিজেকে স্টার নয় এন্টারটেইনার মনে করতেন অভিষেক চ্যাটার্জী। বর্তমান ডিজিটাল মাধ্যমের সঙ্গে খুব একটা আপস মানান নি নিজেকে। পাশাপাশি নিজের কাজকে পর্দায় দেখার উৎসুকতা নেই অভিনেতার। আজ তাঁর জনপ্রিয়তা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে গুনগুনের বাবা হিসেবে।

একসময় অভিনয় জগতের সুদর্শন নায়ক ছিলেন তিনি। এখন ছোটপর্দায় গুনগুনের বাবার চরিত্রে দেখা যাচ্ছিল অভিনেতা অভিষেক চ্যাটার্জীকে। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে অকপটে নিজের মনের কথা জানিয়েলেন তিনি।

সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নে তিনি জানিয়েলেন, নিজেকে কখনোই স্টার ভাবেন না তিনি। নিজের ভাল কাজ দিয়ে তিনি মানুষকে এন্টারটেইন করেন। সেটাই তাঁর কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। স্টার অনেকেই আছে। আবার অনেকে স্টার না থেকেও, নিজেকে সুপারস্টার হিসেবে পরিচয় দেয় সকলের সামনে। কিন্তু তাঁর কাছে স্টার বা সেলিব্রিটির কোনো দাম নেই। দর আছে এন্টারটেইনারের।

আগে স্টার বলতে গেলে, তাঁদেরকে দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হত অনেকদিন। কিন্তু এখন তা বদলেছে। এখন ডিজিটাইজড হয়েছে দেশ। এখন হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকের জামানায় তারকারা হাতের মুঠোয়। কিন্তু সেই তারকাদের তালিকায় নাম নেই অভিষেক চ্যাটার্জীর। সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নে তিনি জানিয়েছিলেন, শুধুমাত্র হোয়াটসঅ্যাপ আছে তাঁর। আর নিজস্ব একটি পেজ আছে যেটা, তাঁর স্ত্রী সামলান। সেখানে ভক্তের সংখ্যা প্রায় এক লাখের কাছাকাছি। সকলের সঙ্গে অভিনেতা নিজের ব্যক্তিগত জীবন শেয়ার করে নিতে পছন্দ করেন না। তাই ওইটুকুতেই সীমাবদ্ধ তিনি। এমনকি অভিষেক চ্যাটার্জীর কোন অথেন্টিকেশন মার্ক দেওয়া পেজ নেই। বলতে গেলে তিনি এতে বিশ্বাস করেন না। তিনি ভালোবাসেন চিঠি লেখাতে। তিনি বলতেন, এখন বাজারে, রাস্তার মোড়ে তারকাদের সবসময় দেখা যায়। কিন্তু আগে তা হতো না।

সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নে অভিনেতা জানিয়েছিলেন, তিনি বাউন্সার রাখতে পছন্দ করেন না। ভক্তদের চাহিদা মেটানো নিজের কর্তব্য মনে করেন অভিনেতা। নিজের জন্য নিরাপত্তাকর্মী রাখা বাড়তি বলে মনে হয় তাঁর। পাশাপাশি অভিনেতা মনে করতেন, ধারাবাহিকে কাজ করলে প্রতিদিন মানুষের সঙ্গে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। প্রতিদিন মানুষের ফিডব্যাক পাওয়া যায়। তাঁর কাছে শুধু বড় কথা তিনি অভিনয় করতে পারছেন কিনা! এটা কখনোই গুরুত্ব পায় না তিনি সিনেমায় কাজ করছেন না, ওটিটি প্লাটফর্মে কাজ করছেন, না ধারাবাহিকে। আগে যখন তিনি সিনেমায় কাজ করেছেন, তখন লোকেদের ভালোলাগা জানতে তাঁকে অপেক্ষা করতে হতো অনেকদিন। কিন্তু এখন সেটা হয়না। আর তাতে অভিনেতা খুশি হতেন।

টিআরপিতে বিশ্বাস জন্মেছে অভিনেতার। তিনি মনে করতেন গত ১০ বছরে কোনো সিনেমাই হাউসফুল হয়নি। তা কেমন লাগছে অভিনেতার সেই মানুষগুলোর সঙ্গে কাজ করে, যারা একসময় তাঁরই ভক্ত ছিল? জবাবে অভিনেতা জানিয়েছিলেন, যাদের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করছেন তাঁরা একসময় তাঁরই সিনেমা দেখে বড় হয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে কাজ করে এক নতুন অভিজ্ঞতা পাচ্ছিলেন অভিনেতা। সিরিয়ালের সেটের লোকজনকে নিজের একটা পরিবার মনে করেই কাজ করতেন তিনি।

কিন্তু কোন দিক থেকে তাঁকে বর্ষীয়ান অভিনেতা বলা যাবে না। মন্তব্য করেছেন তাঁর সেটের বাকি কলাকুশলীরা। তাতে অভিনেতা জানিয়েছেন, একদমই তাই। তিনিও সেটের বাকি কলাকুশলীদের সঙ্গে মজা করতেন। আড্ডা দিতেন। ডিরেক্টরের পেছনে লাগতেন। তিনি কখনোই “আমি অভিষেক চ্যাটার্জী” টাইটেলে বিশ্বাস করেন না। তিনি মনে করতেন, এতে কারোরই কিছু আসে যাবে না।

কিন্তু নিজের সিরিয়াল দেখার সময় হত না অভিনেতার। নিজে অভিনয় করতেন অথচ নিজের সিরিয়াল দেখতেন না? এটা কেমন কথা! তাহলে কি এত খারাপ স্ক্রিপ্ট?

অভিনেতার কথায়, তিনি সময় পেতেননা সিরিয়াল দেখার। শুধুমাত্র ফিডব্যাক শুনেই সন্তুষ্ট থাকেন তিনি। লোকের থেকে পাওয়া প্রশংসায় তিনি আপ্লুত হন। রাত ন’টা-দশ’টায় বাড়ি ঢুকে সিরিয়াল দেখার মতো ইচ্ছে আর থাকে না। এটা কি ঠিক? নিজের সিরিয়াল তিনি নিজেই দেখতেন না! যেখানে ‘খড়কুটো’ না দেখে মানুষজন থাকতে পারছেন না। সেখানে তাতে অভিনীত তারকা তা না দেখে কি করে থাকতে পারেন? অভিনেতা জানিয়েছিলেন তিনি কোনদিনই নিজের সিনেমা বা নিজের সিরিয়াল বাড়িতে এসে দেখতে হবে, তাতে পক্ষপাতী নন। তিনি ফিডব্যাকে বিশ্বাসী। তিনি মনে করেন তাতে তাঁর অভিনয়ে এফেক্ট পড়বে।

অকপটে অভিনেতা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘খড়কুটো’ ধারাবাহিকে সবথেকে বেশি কাছের তাঁর দুলাল লাহিড়ী। ২৫ বছর ধরে একসঙ্গে কাজ করেছেন এই দুই তারকা। ধারাবাহিকের প্রত্যেকেই তাঁর কাছের। প্রত্যেকের সঙ্গেই তাঁর সম্পর্ক খুব ভালো। কিন্তু একসঙ্গে কাজ করতে করতে, একে অপরের সুখ-দুঃখ শেয়ার করতে করতে, খুব বেশি কাছের হয়ে উঠেছিলেন দুলাল লাহিড়ী।

রাজনীতি নিয়ে অভিনেতার কি মতামত? তাতে অভিনেতা জানান, রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার জন্য তাঁকে প্রচুর বলা হয়েছে। কিন্তু তিনি সেই মানসিকতার নয়। অভিষেক চ্যাটার্জীকে দিয়ে তা হবে না।নিজের ভক্তদের জন্য শেষে অভিনেতা ভালো থাকার, সুস্থ থাকার এবং সমস্ত বিধি-নিষেধ মেনে চলার উপদেশ দিয়েছিলেন। ঠিক যেভাবে তিনিও যতটা সম্ভব শ্যুটিংয়ের সময় স্যানিটাইজার, মাস্ক এবং দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করতেন।