টলিউডের অন্যতম চিন্তাশীল অভিনেতা ও পরিচালক ‘অনির্বাণ ভট্টাচার্য’ (Anirban Bhattacharya), সম্প্রতি তাঁর নতুন ছবি ‘পক্ষীরাজের ডিম’ (Pokkhirajer Dim) নিয়ে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন। ছবিতে এক বিজ্ঞানীর ভূমিকায় অভিনয়ে প্রশংসাও পেয়েছেন তিনি, তবে তার চেয়েও বড় বিষয় হয়ে উঠেছে তাঁর সিনেমা-থিয়েটার (Theatre) শিল্প নিয়ে স্পষ্ট ও মননশীল বিশ্লেষণ। অনির্বাণের মতে, বিশ্বজুড়ে সিনেমার সংখ্যা কমে যাচ্ছে এবং এই মাধ্যমটি এখন অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে।
তাঁর স্পষ্ট মত, “সিনেমা ইজ আ ডাইং আর্ট ফর্ম।” কথাটা তেতো হলেও সত্যি, এমনটাই মনে করেন তিনি। একসময় সিনেমা মানেই ছিল বড়পর্দার অভিজ্ঞতা, কমিউনিটি ওয়াচের আনন্দ, একসঙ্গে হলে বসে ছবি দেখা। অথচ এখন সেই আনন্দকে সরিয়ে দিচ্ছে ডিজিটাল কনটেন্ট। সমাজ মাধ্যম এবং ইন্টারনেটের দৌলতে বিনোদনের রূপ বদলে যাচ্ছে প্রতিদিন। আর তাতেই সিনেমার ভবিষ্যৎ ক্রমশ মিউজিয়ামের কাচঘরে আটকে পড়ার পথে।
ওটিটি-র যুগে দাঁড়িয়ে অনির্বাণ মনে করেন, ওয়েব সিরিজ কখনোই প্রকৃত সিনেমার জায়গা নিতে পারে না। দীর্ঘ দৈর্ঘ্যের গভীর গল্পের প্রতি দর্শকের আগ্রহ কমে যাচ্ছে বলে তিনি চিন্তিত। আজকাল দর্শক ঝামেলা, মারপিট পছন্দ করলেও, সম্পর্ক বা ভাবনার জায়গা নিয়ে ছবি দেখতে আগ্রহী নন। তাঁর মতে, আমাদের রাজ্য থেকে সময়-সমাজ এক গভীর বদলের অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে সিনেমার ভবিষ্যৎ আপাতত দুর্বিষহ।
তবে সিনেমার থেকেও যে এক শিল্পমাধ্যম তাঁর হৃদয়ে সবচেয়ে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে, তা হল থিয়েটার। অভিনয়ের এই প্রাচীন মাধ্যমের প্রতি তাঁর ভালোবাসা এখনও অটুট। অনির্বাণ বলেন, “আমি কখনোই থিয়েটারকে টাকা দিয়ে বিচার করিনি। বরং থিয়েটার তো আমার জন্য ভালোবাসার জায়গা।” তাঁর মতে, আজকের থিয়েটার আর্টিস্টরা অনেকটা পাপেট হয়ে গেছেন, যাঁদের কাছে না আছে পরিকাঠামোগত সুবিধা, না আছে স্বাধীন চিন্তা প্রকাশের জায়গা।
আরও পড়ুনঃ “আমরা ঈশ্বরের সন্তান, অন্যের দুঃখ আমাদেরও”, “জীবন অনিশ্চিত, ভালোবাসাই শেষ কথা!”— আমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার পর অন্নসেবা নন্দিনীর! মানবিক বার্তা নিয়ে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন! টিভির ঝিলিক নয়, বাস্তবের নন্দিনীকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন সবাই!
এই কারণেই আজকাল থিয়েটার নিয়ে তাঁর অন্তরের বন্ধন কিছুটা আলগা হয়ে পড়েছে বলে অকপটে স্বীকার করেন অনির্বাণ। তাঁর মতে, থিয়েটার করে হয়তো প্রচুর টাকা রোজগার সম্ভব নয়, কিন্তু এই শিল্পের মর্যাদা ও সৃষ্টিশীলতার যে গভীর মানে ছিল, তা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। ফলে একসময় যেটা ছিল প্রিয়তম আশ্রয়, সেটাই আজকাল অনেকটাই ফাঁকা ফ্রেমের মতো ঠেকছে তাঁর কাছে।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।