“বন্ধুত্বই সম্পর্কের মেরুদণ্ড, জীবনের সব পর্যায়ে সবার একটা বন্ধুর প্রয়োজন…ঋত্বিক আমার সেই বন্ধু!” “আমি ছেলেকে বকি না, বরং বন্ধুর মতো ঠিক-ভুলের বিচার করতে শেখাই!”— বাস্তবেও কমলিনীর মতোই বন্ধুত্বে বিশ্বাসী অপরাজিতা ঘোষ দাস!

স্টার জলসার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘চিরসখা’ (Chiroshokha) এখন চর্চার কেন্দ্রে। কারণ, সম্প্রতি দেখা গেল— বহু বছরের বন্ধুত্বের পর অবশেষে স্বতন্ত্র ও কমলিনীর পরিণতি ঘটল বিবাহে। অভিনেতা সুদীপ মুখোপাধ্যায় এবং অপরাজিতা ঘোষ দাসের (Aparajita Ghosh Das) অনস্ক্রিন এই মুহূর্ত দর্শকের মনে তৈরি করেছে আলোড়ন। অনেকেই আনন্দ পেয়েছেন, আবার কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, সত্যিই কি এই বিয়ের প্রয়োজন ছিল? মধ্যবয়সে এসে, এক মায়ের নতুন করে সংসার পাতার সিদ্ধান্তকে সমাজ কতটা সহজভাবে নিতে পারবে, সেই নিয়েই চলছে তর্ক-বিতর্ক।

অপরাজিতা ঘোষ দাস অভিনীত কমলিনীর চরিত্র বরাবরই দর্শকের প্রশংসা কুড়িয়েছে। নিজের জীবনের বহু না-পাওয়া সত্ত্বেও সংসারকে দৃঢ়ভাবে বাঁচিয়ে রাখার মানসিকতা তাঁকে আলাদা করে তুলেছে। তাই স্বতন্ত্রের সঙ্গে তাঁর বিয়ে দেখে একদল দর্শক মনে করেছেন– এটা কেবল প্রেমের পরিণতি নয়, বরং জীবনের এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। তবে কমলিনীর পরিবারে শুরু হয়েছে অশান্তি। বড় ছেলে বুবলাই তো মেনে নিতে না পেরে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টাও করেছিল!

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী অপরাজিতাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, স্বতন্ত্র আর কমলিনীর বিয়েটার কি প্রয়োজনীয়তা ছিল? মধ্য বয়সে এসে, যেখানে তিনজন পরিণত সন্তান রয়েছে। তিনজনই বিবাহযোগ্য, একজনের বিয়েও হয়ে গেছে। সেখানে তাঁদের মা হয়ে বিয়ে করার কি দরকার ছিল? বড় ছেলে বুবলাইও তো এই বিয়েটা না মানতে পেরে চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছে! এই প্রশ্নের জবাবে অভিনেত্রী অকপটে বলেন, “ধারাবাহিকের নামটাই যেখানে ‘চিরসখা’, সেখানে বন্ধুত্বটাই প্রধান। স্বতন্ত্র কেবল কমলিনীকে আর অপমানিত না হতে দিতেই এই সামাজিক স্বীকৃতি দিয়েছে।

এর বাইরে তারা দু’জনের আজীবন বন্ধুই থাকবে। স্বতন্ত্র যে শুধু কমলিনীকে এই বয়সে গ্রহণ করেছে তা নয়, বরং তিনটে সন্তানকেও গ্রহণ করেছে। এবার সেই সন্তানদের মধ্যে একজন মানেনি যেমন, দু’জন কিন্তু মেনে নিয়েছে। আর অনেকটা সময় একাকিত্বে কাটানোর পর সবার একটা বন্ধুর প্রয়োজন। সেটা যে কারোর মধ্যে হতে পারে, মা-বাবা, ভাই-বোন, বৌমা-শ্বাশুড়ি বা ননদ-বৌদি। পর্দায় যেমন কমলিনী স্বতন্ত্রের মধ্যে সেই বন্ধুত্ব খুঁজে পেয়েছে, বাস্তবেও কিন্তু অপরাজিতা, ঋত্বিককে বন্ধুই মনে করে!”

অপরাজিতার এই উত্তর যেন অনেক দর্শকের মনের কথাই বলে দিল অনায়াসে। কারণ, মধ্যবয়সে এসে ‘সঙ্গী’ শব্দটার মানে আর রোম্যান্সেই আটকে থাকে না— সেখানে প্রাধান্য পায় বোঝাপড়া, শ্রদ্ধা, আর নিঃশব্দ সহচর্য। তাই ধারাবাহিকের এই পরিণত প্রেমের গল্প সমাজের এক বড় অংশকে ভাবতে বাধ্য করেছে— ‘বন্ধুত্বের মধ্যেই কি লুকিয়ে আছে সবচেয়ে স্থায়ী সম্পর্কের চাবিকাঠি?’ এমনকি, অভিনেত্রীর নিজের কথাতেও এই ধারাবাহিক ‘সমাজের প্রতিবিম্ব’!

আরও পড়ুনঃ ‘বাংলায় এখন ফিঁতে কাটতে গেলেও সবাই খোলামেলা পোশাক পড়ে! আসলে প্রতিভার জেরে এখন আর কাজ মেলে না!’ বাংলা ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে বিস্ফো’রক মন্তব্য ঋ’র

উল্লেখ, বাস্তব জীবনে কিন্তু অপরাজিতা ঘোষের জীবনও কম পরিপূর্ণ নয়। টলিউডের অন্যতম সফল পাওয়ার কাপল হিসেবে পরিচিত তিনি এবং তাঁর স্বামী অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী। ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল তাঁদের বিয়ে হয়। বর্তমানে তাঁদের এক পুত্র সন্তান রয়েছে, যাকে তিনি কখনোই বকেন না। বরং ঠিক ভুলের বিচার করতে শেখান। কমলিনীর মতোই তিনিও যত্নে সংসার আর কর্মজীবনকে সামলে চলেন। তাই তাঁকে পর্দায় কমলিনীর ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখলেও যেন মনে হয়, এই চরিত্র যেন তাঁরই এক সম্প্রসারিত রূপ।