“অভিনয়ে নয়, শরীর দেখিয়ে জনপ্রিয় হতে চায় এখনকার শিল্পীরা!” “সৌন্দর্য্য হারালেই ডি’প্রে’শনে চলে যায়, সু’সাই’ডের চিন্তা আসে!” “লোকে শিল্পীকে মনে রাখে, সৌন্দর্য্যকে নয়!”— নয়া প্রজন্মকে নিয়ে সোজাসাপটা মন্তব্য মমতা শঙ্করের!

সম্প্রতি স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে খোলামেলা মন্তব্য করে সমাজ মাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছেন প্রবীণ অভিনেত্রী ও বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী ‘মমতা শঙ্কর’ (Mamata Shankar)। তাঁর বক্তব্য—‘‘স্যানিটারি ন্যাপকিন মেয়েদের লজ্জার অঙ্গ।’’ এই কথাতেই রীতিমতো তোলপাড় সমাজ মাধ্যম। কেউ বলছেন, এই মন্তব্যে পুরনো মূল্যবোধের প্রতিফলন রয়েছে, আবার কেউ একে বলছেন অপ্রয়োজনীয় রিগ্রেশন। বিতর্ক থাকলেও এটুকু স্পষ্ট, মমতা শঙ্কর বর্তমান প্রজন্মের চেতনা ও জনপ্রিয়তার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন।

এবার তিনি এক সাক্ষাৎকারে বর্তমান প্রজন্মের পেশাগত দায়িত্ব নিয়ে সমালোচনায় মুখ খুললেন। তিনি স্পষ্ট জানালেন, ইন্ডাস্ট্রিতে পা দিয়েই অনেকেই আজ রাতারাতি খ্যাতি পেতে চায়, কিন্তু তার জন্য যে দীর্ঘদিনের সাধনা, ধৈর্য, ও শেখার ইচ্ছা প্রয়োজন—তা নেই বললেই চলে। তাঁর মতে, অনেকেই আজ চেষ্টা না করেই সফলতা চায়। তাঁরা বুঝতে পারেন না যে সহজে পাওয়া জনপ্রিয়তা খুব তাড়াতাড়িই হারিয়ে যায়, আর তাই হতাশা, মনখারাপ, এমনকি আ’ত্মহন’নের ভাবনা মাথায় চলে আসে।

তিনি আরও বললেন, অভিনয়, নাচ, গান—এই সবকিছুর পেছনে একটা নিরবিচ্ছিন্ন অধ্যবসায় দরকার। সময় লাগবেই, তবে সেখানেই রয়েছে স্থায়িত্বের মূল চাবিকাঠি। বর্ষীয়ানদের দিকে তাকিয়ে শেখার মানসিকতা আজ আর নেই বললেই চলে। মমতা শঙ্করের মতে, এক সময় প্রবীণ শিল্পীদের সামনে সিগারেট খাওয়ার মতো বিষয় লুকিয়ে রাখা হতো, আজ সেটা প্রকাশ্যে করতেও দ্বিধা নেই। তিনি এটাও বললেন, লুকিয়ে রাখা মানেই ভয় নয়, বরং সেটাও একটা শিক্ষারই অংশ ছিল, মা-বাবার শিক্ষার প্রতিফলন।

আজকের প্রজন্মের আরও একটা বড় সমস্যা হিসেবে মমতা তুলে ধরেছেন “অল্পে বেশি পাওয়ার” প্রবণতা। ছোট থেকেই যেহেতু ডিজিটাল মাধ্যমে চেনা হয়ে যাচ্ছে, একটা সময়ের পর সেই খ্যাতিকে আর ধরে রাখা যায় না। তখন হতাশা এসে ভর করে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এই কারণেই আজ বিনোদন দুনিয়ায় আ’ত্মহ’ত্যার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। তিনি মনে করিয়ে দেন, মানুষের মনে আজীবন থেকে যাওয়ার একটাই উপায়—তোমার কাজ, অভিনয়, শিল্প দিয়ে, স্বল্পমেয়াদী সৌন্দর্য দিয়ে নয়!

আরও পড়ুনঃ “আর জি কর আন্দোলনের সময়, আমাকে খি’স্তি মেরেছিল জীতু!”— বি’স্ফো’রক কিঞ্জল, দিতিপ্রিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে এবার মুখ খুললেন তিনি! বিতর্কের আগুনে ঘি, নতুন মোড় দিতিপ্রিয়া-জীতু বিতর্কে!

মমতা শঙ্করের এই মন্তব্য নিছক কোনও প্রজন্মবিদ্বেষ নয়, বরং নিজের শিল্পজীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে উঠে আসা পর্যবেক্ষণ। তাঁর চোখে আজকের তরুণ শিল্পীদের মধ্যে সাহস, স্বাধীনতা ও চেনা গণ্ডি ভাঙার চেষ্টা যেমন আছে, তেমনই রয়েছে তাড়াহুড়ো আর অস্থিরতা। হয়তো প্রজন্মের ফারাক থেকেই এই দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, কিন্তু শিল্পের গভীরে পৌঁছতে গেলে সময়, ধৈর্য আর শ্রদ্ধার বিকল্প নেই—সেটাই হয়তো আবারও মনে করিয়ে দিলেন এক বর্ষীয়ান অভিনেত্রী, যাঁর শরীরে ধরা পড়ে এখনও শিল্পের নিষ্ঠা।

You cannot copy content of this page