গত শনিবার অর্থাৎ ৪ মার্চ ছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবস (International Women’s Day) । এই দিনটি শুধুমাত্র নারীদের একটি উদযাপনের দিন নয়, এটি নারীদের সংগ্রাম ও সাফল্যের প্রতীক। এই বিশেষ দিনে নারীদের লড়াই, পরিশ্রম এবং অর্জনগুলিকে সম্মান জানানো হয়। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নারীর ক্ষমতায়ন ও সমতার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে।বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নারীদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। আর সেই উপলক্ষে বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত (Rituparna Sengupta) ও তুলে ধরলেন তাঁর ভাবনা।
বাংলা চলচ্চিত্র জগতে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত একটি উজ্জ্বল নাম। দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি তার অভিনয় দক্ষতা ও সৌন্দর্য দিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করে রেখেছেন। ‘দহন’, ‘উৎসব’, ‘পারমিতার একদিন’ বা ‘মনের মানুষ’-এর মতো অসংখ্য সফল সিনেমায় তার অনবদ্য অভিনয় তাকে শীর্ষস্থানীয় অভিনেত্রীদের কাতারে নিয়ে এসেছে। একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেত্রী শুধুমাত্র বাংলা নয়, হিন্দি ও অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষার সিনেমাতেও তার প্রতিভার ছাপ রেখেছেন।
নারী দিবসের প্রসঙ্গে ঋতুপর্ণা বলেন, “আমার কাছে নারী দিবস মানে নারীদের লড়াইকে উদযাপন করা। লড়াই করেই আমরা এগিয়ে গিয়েছি, আর ভবিষ্যতেও এগিয়ে যাব। কিন্তু লড়াইটা যেন লক্ষ্যহীন না হয়, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি আরও বলেন, “আমি আজ যেখানে পৌঁছেছি, তার পেছনে আমার নিজের প্রচেষ্টা যেমন আছে, তেমনি অনেক নারীর অবদানও রয়েছে।” তিনি এই নারী দিবস উৎসর্গ করেছেন তার জীবনের ‘ওয়ান্ডার ওমেন’দের, যারা তাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।
ঋতুপর্ণা আরও বলেন, “আমি ঋতুপর্ণ ঘোষের কাছে চিরঋণী। ওনার মতো পরিচালক না থাকলে হয়তো আমি আজকের ঋতুপর্ণা হয়ে উঠতে পারতাম না। তিনি শুধুমাত্র একজন পরিচালক ছিলেন না, তিনি নিজের মধ্যে সেই নারীশক্তির আভাস পেয়েছিলেন বলেই হয়তো, তিনি নারীদের শক্তির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।” তার মতে, ঋতুপর্ণ ঘোষের ছবিগুলি নারীদের এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে উপস্থাপন করেছিল, যা দর্শকদের মধ্যে নারীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধার জন্ম দিয়েছিল।সমাজের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে কথা বলেছেন ঋতুপর্ণা— সমকামীদের গ্রহণযোগ্যতা।
তিনি মনে করেন, “সমাজে আজও সমকামীদের ঠিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। অথচ তারা আমাদেরই মতো মানুষ। আমাদের সমাজকে আরও গ্রহণযোগ্য হতে হবে, আরও মানবিক হতে হবে। প্রত্যেকের নিজস্ব পরিচয়কে সম্মান করা উচিত।” তিনি আরও বলেন, “নারী পণ্য না মানুষ— একুশ শতকেও এ নিয়ে বিতর্ক হয়। কিন্তু আমার কাছে নারী স্বাধীন, তার নিজস্ব পরিচয়ে সম্পূর্ণ। সংসার-সন্তান সামলানো হোক বা নিজস্ব পথে চলা— সব নারীই পরিপূর্ণ, দশভুজা হওয়া বাধ্যতামূলক নয়। তেমনি, কোনও পুরুষের মধ্যে যদি নারীসুলভ গুণ থাকে, সেটাও তার নিজস্বতা।
আরও পড়ুনঃ প্রয়াত পদ্মশ্রী সম্মানে সম্মানিত বর্ষীয়ান অভিনেত্রী বৈজয়ন্তীমালা? কি জানালেন তার পুত্র?
এতে কোনও সমস্যা দেখি না, বরং যারা এমন মানুষদের কটাক্ষ করেন, তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতেই সমস্যা আছে। এটি তাদের অশিক্ষার পরিচয়।” নারী দিবসে ঋতুপর্ণার এই বক্তব্য শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নয়, এটি নারীদের এবং সমাজের সকল প্রান্তিক মানুষের সংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তাও বহন করে। তিনি মনে করেন, “একজন নারী যখন আরেকজন নারীর হাত ধরে এগিয়ে যান, তখনই প্রকৃত পরিবর্তন আসে।” তার এই চিন্তাভাবনা ও অভিজ্ঞতা আজকের প্রজন্মের জন্য এক অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।