‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকায় সংসার চলে, আবার দাদাদের বাইকও চলে…স্ত্রীরা স্বাবলম্বী হচ্ছে আর স্বামীরাও তেল ভরার টাকা পাচ্ছে!’ সায়নীর মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক, ভিডিও ভাইরাল হতেই তীব্র প্রতিক্রিয়া নেটপাড়ায়!

কিছুদিন আগেই অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ (Saayoni Ghosh) আবারও আলোচনায় এসেছিল মূলত দুটি কারণে, একটু তার নতুন ছবি লক্ষীকান্তপুর লোকাল আর অন্যটা এই রাজ্যে নারীদের ক্ষমতায়নের উপর তার বক্তৃতা নিয়ে। সেখানে তিনি বলেছিলেন, এই রাজ্যে নারীরা স্বাধীন। এই রাজ্যের বাইরে অত্যন্ত খারাপ অবস্থা নারীদের আর পশ্চিমবঙ্গের নাকি নারীদের ক্ষমতায়নের প্রাণকেন্দ্র! তাই জন্য তিনি শাসকদলের নেত্রীকে ধন্যবাদ দিয়েছিলেন এবং বাঙালি মেয়েদের গর্ববোধ করতে বলেছিলেন। তবে, আবারও তিনি আলোচনায়। এবারও প্রশংসা করেছেন, কিন্তু সেই প্রশংসা সাধারণ মানুষ নিতে পারেননি আর তাই নিয়েই বিতর্ক।

প্রসঙ্গত, রাজ্যে নারীদের আর্থিক সুরক্ষার বিষয়ে আলোচনা উঠলেই বারবার ফিরে আসে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের নাম। এর আগের বিধানসভার ভোটের সময় মুখ্যমন্ত্রী এই প্রকল্পটি এনেছিলেন। মূলত গৃহিণীদের হাতে কিছু নিশ্চিত সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য। প্রথমদিকে মাসে ৫০০ টাকা করে দেওয়া হলেও সময়ের সঙ্গে সেই অঙ্ক অনেকটাই বাড়ানো হয়। সাধারণ পরিবারের মহিলারা পান মাসিক ১০০০ টাকা আর অন্যান্য মহিলাদের জন্য বরাদ্দ ১২০০ টাকা। দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক এটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু আর সেই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করলেন যাদবপুরের সাংসদ-অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ।

সম্প্রতি বীরভূমের এক জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় সায়নী ঘোষণা বলেন, ভবিষ্যতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা আরও বাড়ানো হতে পারে। এদিন তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট ছিল যে রাজ্য সরকার এই প্রকল্পকে আরও শক্তিশালী হবে এবং প্রয়োজন হলে মাসিক সহায়তা ২০০০ বা ২৫০০ টাকাতেও পৌঁছতে পারে। বক্তৃতার সময় তিনি আরও ইঙ্গিত দেন যে, এই উদ্যোগ শুধু আর্থিক সহায়তা নয় বরং অনেক মহিলার কাছে এটি নিজের মত করে কিছু করার সাহসও এনে দিয়েছে। জনসভায় তাঁর বক্তব্যের এই অংশটুকুই দ্রুত সমাজ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

তবে, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি শুধুই টাকার অঙ্ক বৃদ্ধির জন্য আলোচিত হয়নি। সেখানে সায়নীকে শোনা যায় এক ভিন্ন মন্তব্য করতে, ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার আজ বাংলার নারীদের স্বাবলম্বী করেছে। এখন স্বামীরাও বাইকে তেল ভরাতে নেয় এই টাকা।’ কথাটি ছিল স্পষ্টতই ব্যঙ্গাত্মক, কিন্তু নেটিজেনদের বড় অংশ তা নতুন করে বিতর্কের কেন্দ্র বানিয়েছেন। অনেকেই মন্তব্য করেছেন, মহিলাদের জন্য বরাদ্দ এই স্বল্প অর্থ আসলে পরিবারের খরচেই নষ্ট হয়ে যায়, ফলে ‘স্বাবলম্বী’ বলা উচিত কি না, সে প্রশ্ন থেকেই যায়।

অন্যদিকে, অনেকেই দাবি তুলেছেন যে এই প্রকল্পের অর্থ আসলে করদাতা নাগরিকদের টাকা থেকেই আসে, তাই প্রকল্পকে জনপ্রিয় করতে এমন মন্তব্য করা উচিত নয়। কেউ কেউ আরও কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘স্ত্রীদের যে টাকা সরকার দেয়, তার একটা বড় অংশই স্বামীদের থেকে কারণে অকারণে সিগন্যালে পুলিশ জরিমানা হিসেবে কেটে নেয়। তাই ‘উপকার’ হচ্ছে বলাটা অন্যায়!’ তবে সায়নীর সমর্থকেরা বলছেন, তাঁর বক্তব্য ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে এবং তিনি মূলত এই প্রকল্প ঘিরে সাধারণ মানুষের জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতাই উল্লেখ করেছেন।

আরও পড়ুনঃ ‘বড্ড লক্ষী আমাদের প্রথম সন্তান, মা বাবা তো দুঃখ হচ্ছে…আশীর্বাদ রইল নতুন অভিভাবক যেন তোমায় আমাদের থেকেও বেশি ভালোবাসে।’ সন্তানকে বিদায় দিয়ে ভেঙে পড়লেন অহনা, শেষবার জড়িয়ে ধরে চোখের জল ফেললেন দীপঙ্কর!

বিতর্ক যতই হোক, অস্বীকার করার উপায় নেই যে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার রাজ্যের লক্ষাধিক পরিবারের দৈনন্দিন জীবনে বড় পরিবর্তন এনেছে। অনেক নারী প্রথমবার নিজের হাতে স্থায়ী মাসিক অর্থ পাওয়ার অভিজ্ঞতা পেয়েছেন। প্রকল্পটি নিয়ে মতভেদ থাকলেও, ভবিষ্যতে যদি সত্যিই সাহায্যের অঙ্ক বাড়ে, তাহলে নারী অর্থনীতির উপর তার প্রভাব আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তবে বীরভূমের সেই মন্তব্যের পর সমাজ মাধ্যমে ঝড় দেখে এটুকু পরিষ্কার যে সায়নী ঘোষের প্রতিটি কথা এখন আর শুধু বক্তব্য নয়, কখনও কখনও তা বিতর্কের ঢেউও তোলে।