“স্টেশনকে নামার পরই জানতে পারি বাবা আর নেই!” বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন মা, জীবনের কঠিন সময় কিভাবে নিজেকে সামলেছেন সোমলতা?

বাংলার সঙ্গীত জগতের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র সোমলতা আচার্য চৌধুরী (Somlata Acharyya Chowdhury)। তার কণ্ঠে মায়াবন বিহারিণী, হে সখা, ও যে মানে না মানা সহ তার গাওয়া রবীন্দ্র সঙ্গীত বারবার মন জয় করেছে দর্শকদের। এই গানগুলো মনে পড়তেই সকলের কানে ভেসে আসে সোমলতার সুমধুর কন্ঠস্বর। আট থেকে আশি সোমলতার গান উপভোগ করেন সকল বাঙালিরা। প্লে ব্যাক হোক বা স্টেজ শো, তার অসাধারণ পারফরম্যান্স মুগ্ধ করেছে সকলকে।

তবে সমস্ত অনুষ্ঠানে এই সংগীতশিল্পীর মুখে সুমিষ্ঠ হাসি লেগে থাকলেও বরাবরই নিজের ব্যক্তিগত জীবন ব্যক্তিগতই রেখেছেন এই সঙ্গীতশিল্পী। জীবনের ওঠা পড়া, ঘাত প্রতিঘাত সবটাই রেখেছেন গোপনে রেখেছেন সোমলতা। তবে সমস্ত বেড়া জ্বাল ভেঙে সম্প্রতি এই বিষয়ে মুখ খুলেছেন বাংলার এই স্বনামধন্য গায়িকা। সম্প্রতি জানিয়েছেন ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি ভীষণ আগ্রহ এবং ঝোঁক ছিল তার। সেই অনুযায়ী নিজেকে তৈরি করতে শুরু করেন সোমলতা। নেন গানের তালিম।

বাবার মৃত্যু সংবাদ জেনেও শো ছেড়ে চলে যাননি সোমলতা

তবে ভাগ্য বারবার পরীক্ষা নেয় সকলের। সোমালতার জীবনের ঘটে গেছে এমন কিছু বেদনাদায়ক ঘটনা যা ভাষায় প্রকাশ করা যায়না। সঙ্গীতশিল্পী জানান ২০১৮ সালে প্রয়াত হয়েছেন তার বাবা। ২০১৮ সালে ফুসফুস জনিত সমস্যার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয় সোমলতার বাবা। প্রায় এক সপ্তাহ হাসপাতালে থেকে বাড়িতে ফিরে আসেন তিনি কিন্তু তার ২-৩ দিন পরই ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তড়িঘড়ি তাকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। ভেন্টিলেশনে বাবাকে ভর্তি করে তিনি যান উত্তরবঙ্গে গানের শোতে।

আরো পড়ুন: অবশেষে মিল হল বাবা- ছেলের! বাবার কাছে ক্ষমা চাইল সার্থক! বাবা-ছেলের দূরত্ব মিটিয়ে দিল স্রোত

হাসপাতালের কাছ থেকে ট্রেনে ওঠার সময় তার মনে হতে থাকে তিনি বোধহয় আর দেখতে পারবেন না বাবাকে। এরপরই উত্তরবঙ্গে ট্রেন থেকে নেমেই তিনি জানতে পারেন বাবা আর নেই। তবে মাঝ পথে শো ছেড়ে বেরিয়ে যাননি সোমলতা। চোখ বন্ধ করে ভেবেছিলেন বাবা যদি জানতে পারে মেয়ে শো ছেড়ে চলে এসেছে তাহলে নিশ্চয়ই কষ্ট পাবেন এই ভেবেই গান করতে চলে যায় তিনি। শো শেষ করে বাড়িতে শহরে ফিরে তিনি চলে যান বাবার ডেথ সার্টিফিকেট আনতে।

বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন সোমলতার মা

এই ঘটনার ৪ বছরের মাথায় ২০২১ সালে হঠাৎ প্রচণ্ড মাথা ব্যথা শুরু হয় সোমলতার মায়ের। তার কিছুদিনের মাথায় তিনি লক্ষ্য করেন মা একই কথা বারবার বলছেন, সবকিছু ভুলে যাচ্ছেন। এরপর তিনি মাকে নিয়ে যান ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার জানায় তার মা একটি বিরল রোগে আক্রান্ত এবং হয়ত আর মাস খানেক থাকবেন তার সঙ্গে। পুজোর আগে দিয়ে হঠাৎ ধুম জ্বরে আসে তার মায়ের। স্বামীকে মায়ের কাছে রেখে তিনি যান শোয়ে কিন্তু স্টেজে ওঠার আগেই তিনি জানতে পারেন প্রয়াত হয়েছেন তার মা। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে। বাড়ি ফিরে আসেন তিনি। মনের বল তিনি হারাননি এক মুহুর্তের জন্যও। সোমলতার কথায়, ‘জীবনে যাই হয়ে জল ‘দ্য শো মাস্ট গো অন’।