Sreelekha Mitra Exclusive: তিনি টালিগঞ্জের অন্যতম দাপুটে অভিনেত্রী। তার অভিনয় দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা বোকামি। বাস্তব জীবনে ভীষণই স্পষ্টবাদী এই নায়িকা। মুখের ওপরে স্পষ্ট কথা বলে দেন তিনি। ইন্ডাস্ট্রির ভেতরে লোক হোক বা বাইরের লোক অন্যায় বরদাস্ত করেন না তিনি।
বলাই বাহুল্য, ইন্ডাস্ট্রির কোনও ঝামেলা থেকে শুরু করে রাজনীতি সবেতেই নিজের স্পষ্ট অভিমত প্রকাশ করেন এই অভিনেত্রী। সম্প্রতি বয়স্ক অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অর্থ কষ্ট প্রসঙ্গে তিনি মুখ খুললেন আমাদের প্রতিবেদনে। একান্ত সাক্ষাৎকারে আমাদের প্রতিনিধি জয়িতা চৌধুরীর কাছে নিজের মতামত, এবং পেশাগত জীবনের বিভিন্ন দিকের কথা মন খুলে বললেন বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র (Sreelekha Mitra)।
প্রবীণ অভিনেত্রী ছন্দা চট্টোপাধ্যায়ের অর্থকষ্ট নিয়ে টলি গসিপের কাছে মুখ খুললেন অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র (Sreelekha Mitra)
অভিনয়, মানবাধিকার কাউন্সিলের জাতীয় মুখপাত্র, আর চারপেয়েদের নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যে কেমন আছেন শ্রীলেখা মিত্র?
শ্রীলেখা মিত্র: সব মিলিয়ে ভাল আছি কিন্তু ব্যস্ততা খুব একটা নেই। ব্যস্ত হতে চাই, কিন্তু যেহেতু আমি অনেক বিষয়ে সক্রিয় মনোভাব পোষণ করি ও সক্রিয় ভাবে কথা বলি সে জন্য আমি যে কাজটার জন্য পরিচিত সেই কাজটা আমাকে একটু কম করতে দেওয়া হয়। ব্যস্ত থাকতে দেওয়া হয় না।
অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কতটা ভাবে আর্টিস্ট ফোরাম? বিশেষ করে বয়স্ক শিল্পীদের নিয়ে?
শ্রীলেখা মিত্র: আমাদের প্রভিডেন্ট ফান্ড নেই, গ্রাচুইটি নেই, পেনশন নেই। শুধু যেটা আছে সেটা হল ম্যানুপুলেশন। মানুষ মানুষকে ম্যানিপুলেট করে নিজের আখেরটা গোছায়। যারা স্টার বা ওরকম নয়, যাদের খুব কম পয়সা দেওয়া হয়, যাদের কাজ খুঁজে করতে হয় তাদের অবস্থা খুব খারাপ। আমি কোভিডের সময় দেখেছি একজনকে তিনি এখন মাছ বিক্রি করেন। সবটাকা এই তথাকথিত স্টার, যারা নিশ্চিত করতে পারেন না এক সপ্তাহ ছবি চলবে কিনা তাদের দেওয়া হয়। ভুগতে হচ্ছে ক্যারেক্টার আর্টিস্টদের। তাঁদের উপর কোপ পড়ে। (খানিক থেমে)
এখন তো তথাকথিত যারা স্টার তাঁদের চারজন বডিগার্ড, একজন হেয়ার, একজন মেকআপ একজন পার্সোনাল, একজন রীল বানিয়ে দিচ্ছে। এসব খরচ প্রযোজক বহন করে। প্রযোজকদের উচিত এই খরচগুলোয় সংকোচন এনে, যারা আসলে ডিসার্ভ করে তাদের দেওয়া হলে তাহলে এই অবস্থা হয় না।
অর্থ কষ্টে ভুগছেন প্রবীণ শিল্পীরা! এরজন্য আর্টিস্ট ফোরাম কী দায়ী?
শ্রীলেখা মিত্র: আর্টিস্ট ফোরাম আর্টিস্টদের একটা ইউনিয়ন। যারা আর্টিস্টদের কথা বলে। অভিনেতারা যাতে ঠিকঠাক পারিশ্রমিক পায়। আমি তাদের ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টিগোচর করেছি। যদি তারা কোনও অ্যাকশন নেন, তবে উনি একটু ভাল থাকতে পারেন…।
আগে অভিনেতারা যোগ্য পারিশ্রমিক পেতেন না? সেই তুলনায় এখন কী পারিশ্রমিক হিসেবে টাকার অঙ্ক বেড়েছে?
শ্রীলেখা মিত্র: আমি তো জানবো না! তবে অনেকের অনেক ধরনের ব্যাপার আছে। এদেরকে এই টাকা দিতে হবে, অনেকে এমন আছে যারা ভাবে ওকে চান্স দিয়েছি এই অনেক। ইন্ডাস্ট্রিতে ফেয়ার বলে কিছু হয় না। আরও একজন অভিনেত্রী গীতা দে, যার এত বড় বড় ছবি আছে। তারও শেষ বয়সে আর্থিক অনটনের মধ্যেই কেটেছিল।
আর্টিস্ট ফোরামে কী রাজনৈতিক বিভাজন রয়েছে?
শ্রীলেখা: আমি আর্টিস্ট ফোরাম সম্পর্কে কিছু জানি না। এত রাজনীতি ঢুকে গিয়েছে। আগে এসব ছিল না। এখন ফেডারেশন, তৃণমূলের নেতারা দায়িত্ব নিয়ে ফেলেছেন, আরেকটা ক্যাম্প হচ্ছে বিজেপির, এই জিনিসগুলো তো… আর্টিস্ট ফোরামে কী হয়েছে কী না হয়েছে আমি জানি না একটু দূরে দূরে থাকি ইন্ডাস্ট্রিতে। আমাকে যারা কাজে নিতে চায়, আমি এমনি গিয়ে কাজ করি। আমি ওত শত জানি না। তবে ইন্ডাস্ট্রির ‘ইয়েস ম্যানশীপ’টা কমাতে হবে, তাবেদারি, তেল মারামারি, ক্ষমতায় যারা আছেন তাদের তোষামোদ করা, এগুলো কমিয়ে কাজে মন দিতে হবে। আমি প্রোডিউসাররাও টাকা ভুলভাল লোকের পিছনে না খরচা করে, ছবির কাজে করুক। যারা যোগ্য তাদের দিক।
আর্টিস্ট ফোরামের কী রাজনীতিকরণ হয়েছে?
শ্রীলেখা: আমি ঠিক বলতে পারবো না। তবে কেউ কোথাও তার পারিশ্রমিক না পেলে আর্টিস্ট ফোরাম নিশ্চয়ই সেটা দেখে বলে আমার ধারণা।
রাজনীতির রং দেখে কী সাহায্য করা হয়?
শ্রীলেখা: আমি ঠিক বলতে পারবো না। তবে ক্ষমতার লোভ আমার নেই। আমি নিজেরটুকু নিয়ে ভাল আছি।
তারমানে ইন্ডাস্ট্রিতে বন্ধু হয়না?
শ্রীলেখা: একদমই হয় না। জীবনে সবাই ওঠানামা দেখেছে। তারা তাদের মতো করে দেখেছে। তাদের মনে হয়েছে যারা ক্ষমতায় আছে তেল মারলে আমার সুবিধা হবে। তারা করছে। এটা তাদের চয়েস। আমি সেই জিনিসটা করিনি।
বিপদের দিনে ইন্ডাস্ট্রির কাউকে পাশে পাননি?
শ্রীলেখা: আমি চাই না ইন্ডাস্ট্রির কাউকে আমার পাশে। আমি চাই আমার আপদে বিপদে নিজেকে আর আমার কাছের মানুষগুলোকে যেন সাহায্য করতে পারি। আমি কারোর থেকে সাহায্য নিইনা। আমার কাউকে পাশে চাই না।
আরও পড়ুনঃ ‘অর্থের অভাবে এখন মেডেল বেচে খেতে হয়!’, আর্থিক অনটন নিয়ে মুখ খুললেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী ছন্দা চট্টোপাধ্যায়
তুখোড় অভিনেত্রী আপনি! কিন্তু সেই অর্থে দেখা নেই বড় পর্দায়! অফার পান না?
শ্রীলেখা: পারিয়া হইচইতে বেরিয়েছে, সুধীর মিশ্রর কাজ করলাম। টেলিভিশন আমি করিনা। আমাকে যারা কাজে নেন তারা আমাকে আমার জন্য কাজে নেন। আমি তেলও মারি না, আমি কোথাও যাইও না। আমি বড্ড ল্যাদ লাগে চারটে লোক নিয়ে ঘুরতে। আমি অভিনয় করি, আশা করি অভিনয়টা ভালই করি। তাই কাজ করি।
ভক্তরা কী আপনাকে পর্দায় দেখতে পাবে?
শ্রীলেখা: আশা করা যায়।
আজকের দিনটা কেমন করে কাটাবেন অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র?
শ্রীলেখা: আর বাকি দিনগুলো যেমন কাটাই। নরম্যাল। সিরিজ দেখবো, বই পড়বো।