বাংলা টেলিভিশনের বরাবর জনপ্রিয় মুখ তিনি, যাঁর অভিনয় মানেই চরিত্রের গভীরে ডুবে যাওয়া। একদিকে তিনি সুপারহিট ধারাবাহিক ‘শ্রীময়ী’-র (Sreemoyee) দায়িত্ববান বউমা, অন্যদিকে ‘গোয়েন্দা গিন্নি’-তে (Goyenda Ginni) রহস্যভেদী বুদ্ধিমতী। আবার বড় পর্দায় তাঁর সমান বিস্তার। তিনি আর কেউ নন, অভিনেত্রী ‘ইন্দ্রাণী হালদার’ (Indrani Haldar)। এইসব রঙিন পরিচয়ের বাইরে, বাস্তব জীবনের ইন্দ্রাণী অনেকটাই সাদামাটা। আর এই বাস্তবের ইন্দ্রাণীর জীবনেও রয়েছে অপূর্ণতার একটা কষ্ট, যা হাজার আলোর মধ্যেও এক কোণে জমে থাকা অন্ধকারের সমান। কি সেই আক্ষেপ?
এত সাফল্যের পরেও ইন্দ্রাণীর মনে বাসা বেঁধে রয়েছে এক নিঃশব্দ হাহাকার। একটা সময় কেরিয়ার নিয়ে তিনি এতটাই ডুবে ছিলেন যে জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় অধরাই রয়ে গেল। অভিনয়, সংসারের দায়িত্ব, সব সামলে চলার ভিড়ে নিজের মাতৃত্বের স্বপ্নকেই যেন হারিয়ে ফেলেন তিনি। শুটিংয়ের ব্যস্ততা, সময়ের অভাব তাঁকে কখনোই মা হওয়ার প্রস্তুতি নিতে দেয়নি। কিন্তু একটা সময়ে যখন বুঝলেন, এবং মনস্থির করলেন, দেখলেন অনেকটা সময় পেরিয়ে গিয়েছে, কিছুই করার ছিল না।
একটি পুরনো সাক্ষাৎকারে ইন্দ্রাণী খোলাখুলি বলেন, তিনিও মা হতে চেয়েছিলেন। স্বামী ভাস্করও চাইতেন সন্তান আসুক তাঁদের জীবনে। ইন্দ্রাণীর কথায়, “ভাস্কর সবসময় বলত, আমি শুধু অন্যদের সব দায়িত্ব পালন করে গেছি, নিজের কথা ভাবিনি।” এমনকি তারপর সন্তান দত্তক নেওয়ার কথাও ভেবেছিলেন ইন্দ্রাণী, কিন্তু ভাস্কর সেই সিদ্ধান্তে রাজি হননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সন্তানের আশাও নিভে যায়, আর সেখানেই থেকে যায় না-পাওয়া একটি অধ্যায়।
তবে এই না-পাওয়াকে হার হিসেবে দেখেননি ইন্দ্রাণী। তিনি বলেন, “আমি সন্তান জন্ম দিতে পারিনি, কিন্তু আমার অনেক সন্তান আছে। যারা আমাকে ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে।” এই বক্তব্যের মধ্যে দিয়েই যেন ইন্দ্রাণী বুঝিয়ে দিলেন মাতৃত্ব শুধু রক্তের সম্পর্ক নয়, ভালোবাসার সম্পর্কও হতে পারে। অভিনেত্রী হিসেবে তিনি যাদের অনুপ্রেরণা, ভালবাসা ও আশ্রয়, তাঁদেরই তিনি মনে করেন তাঁর সন্তানস্বরূপ। তাই জীবনের এই দিকটিও তিনি হাসিমুখে গ্রহণ করেছেন।
আরও পড়ুনঃ মারণরোগকে জয় করে ফের ক্যামেরার সামনে মিঠু চক্রবর্তী! দীর্ঘ বিরতির পর এক ফ্রেমে মিঠু-সব্যসাচী! তারকা দম্পতির এই প্রত্যাবর্তনে আপ্লুত দর্শকরা!
একবার একটি রিয়েলিটি শোতে সঞ্চালক শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সেই আলাপচারিতায়, তিনি বলেন,” নিজের সন্তানের নেই তো কি হয়েছে, ইন্দ্রাণী কিন্তু বাংলা ইন্ডাস্ট্রির সবার মামণি!” এই কথার উত্তরেও ইন্দ্রাণীর মুখে ফুটে উঠেছিল এক হাসি। মাতৃত্বের যন্ত্রণার মাঝেও তিনি যে ভালোবাসা খুঁজে নিয়েছেন চারপাশে, তাতেই ধরা পড়ে তাঁর আসল জয়। ক্যামেরার আলোয় যতটা উজ্জ্বল তাঁর উপস্থিতি, বাস্তব জীবনে ঠিক ততটাই সাহসী এবং বাস্তব তিনি।
