অভিনেত্রী ‘শ্রীপর্ণা রায়’ (Sreeparna Roy) আবারও ফিরেছেন ছোট পর্দায়, আর এই ফিরে আসার খবরে ভীষণ খুশি তাঁর অনুরাগীরা। ‘আঁচল’-এর টুসু হোক বা ‘কড়ি খেলা’-র পারমিতা, শ্রীপর্ণার প্রতিটি চরিত্রে ছিল এক নিজস্বতা— কিছুটা সহজ, কিছুটা আবেগময়, আর ভীষণ বাস্তব। দীর্ঘ প্রায় দুই বছর পর তাঁকে আবার পর্দায় দেখা যাচ্ছে। ব্যক্তিগত জীবনে নানা রকম জল্পনার মাঝেও নিজের কাজের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা স্পষ্ট। সম্প্রতি ইনস্টাগ্রাম থেকে স্বামী শুভদীপের সঙ্গে তোলা ছবি মুছে ফেলায় নানা গুঞ্জনের জন্ম হয়, অনেকেই ভেবেছিলেন হয়তো সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে।
তবে এই সব আলোচনা-সমালোচনাকে পাশ কাটিয়ে তিনি আবারও ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন। বর্তমানে স্টার জলসার নতুন ধারাবাহিক ‘লক্ষ্মী ঝাঁপি’তে মুখ্য চরিত্রে না হলেও পার্শ্ব চরিত্রে সমান ভালোবাসা পাচ্ছেন তিনি। এটি মূলত তার জীবনের প্রথম পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়। হঠাৎ প্রধান নায়িকা থেকে পার্শ্ব চরিত্র কেন এবং এতদিন বিরতির পেছনে কি কারণ ছিল, লোক অভিনয়কে যতটা সহজ মনে করে ততটা কি আদেও— সবটা নিয়ে সম্প্রতি মুখ খুলেছেন তিনি। অভিনেত্রীর কথায়, “অভিনয় মোটেও একটা ছেলেখেলা করার জিনিস না।
অনেকেই মনে করেন আমরা ঘুরতে যাই, সারাদিন মেকাপ করি, আর আড্ডা দেই। আসলে কিন্তু ঠিক এর উল্টোটাই। ব্যক্তিগত জীবনে যেমনই ঝড় আসুক না কেন, সেটাকে লুকিয়ে রেখে পর্দার সামনে হাসিমুখে দাঁড়াতে হয়। আমরা ইমোশান বেঁচে খাই!” ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে অভিনেত্রী বলেন, “এমন একটা কঠিন সময় আমার জীবনেও এসেছিল, যখন আমার মা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। আমি একমাত্রই সন্তান, মা-বাবা ছাড়া পরিবারে আর কেউ নেই। কাজেই আমি ছোট থেকে খুব আদরে বড় হয়েছি। আমার কাজ চলাকালীন মা যখন হাসপাতালে ভর্তি ছিল, নিজের সবটা করতে হয়েছে আমায়।
এমনকি হাসপাতালে বসেই স্ক্রিপ্ট মুখস্ত করেছি আবার শুটিংও করেছি। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি, মা কিছুদিন পরেই চলে যান। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন এটা কত বড় আঘাত? চারিদিকে সবাই সহানুভূতি দেখাচ্ছে কিন্তু আমাকে সেই সময় দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। নিজের ইমোশন লুকিয়ে, চরিত্রের খাতিরে মিথ্যে ইমোশন নিয়ে পর্দার সামনে দাঁড়াতে হয়েছে। কারণ অভিনয়টা আমি ভালোবেসে করি আর আমি চাই না আমাকে বাদ দিয়ে দেওয়া হোক। হাসপাতালে যখন একদিকে ডাক্তার বলছেন মাকে আর বাঁচানো সম্ভব নয়।
সেখানে দাঁড়িয়ে কাঁদছি আবার সেটে ফিরে এসে হা হা করে হাসতেও হচ্ছে আমায়! সেই পরিস্থিতি কাউকেই বোঝানো সম্ভব নয়।” অভিনেত্রী আরও তিক্ত অভিজ্ঞতা ভাগ করেন যেমন, “একটা ধারাবাহিকে মাঝপথেই আমাকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাদের কথা, আমার জন্য নাকি টিআরপি উঠছিল না।” যদিও তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে এই কারণটা শুধুই লোক দেখানো, ইন্ডাস্ট্রির ভেতরে অনেক কিছুই চলে। তবুও ভেঙে পড়েছিলেন এতটা খারাপ লেগেছিল। তার কিছুদিন পরেই ওই চ্যানেলেই আবার কাজ পান তিনি।
এবার সবাইকে অবাক করে দিয়ে তার চরিত্র যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়। অভিনেত্রী আরও ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, একটি প্রোডাকশন হাউজের তরফে তাকে অফার দেওয়া হয়েছিল। কথা হয়ে গিয়েছিল সমস্ত, তাই অন্যান্য প্রোডাকশন থেকে ভালো ভালো চরিত্রের অফারও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। অনেকেই তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন যে এভাবে কাজ পেয়েও ছেড়ে দিতে নেই। তবে তিনি নিজের সিদ্ধান্তই অনড় ছিলেন, কথার খেলাপ করতে চাননি। পরবর্তীতে যখন সেই প্রোডাকশন হাউজের কাজটি হওয়ার সময় আসে, কাজটা হয় না।
আরও পড়ুনঃ “মানসিকতা গড়ে ওঠার বয়সেই যদি মা-বাবার দায়িত্ব পালন করে সঠিক শিক্ষাটা না দিই, তাহলে নিজেদের ব্যর্থতা!” “মা-বাবার কাছ থেকে যেটা শিখেছি, সেটাই পরবর্তী প্রজন্মকে শেখাচ্ছি”— অকপট কোয়েল মল্লিক! শৈশবে পাওয়া শিক্ষা কীভাবে কাজে লাগাচ্ছেন তিনি?
অভিনেত্রীর কথায়, অনেকেই চাননি তিনি সেখানে কাজ করুন। এই নিয়ে দীর্ঘদিন নানান বিতর্কও চলেছিল। দু’বছর এরপর কাজ পাননি শ্রীপর্ণা। রাস্তায় মানুষ দেখলেই তাকে জানতে চাইতেন, তিনি কি কাজ পাচ্ছেন না। কেউ এটা বুঝতে চাইতেন না যে, স্বেচ্ছায় বিরতি নিয়েছেন তিনি। এই সময়টাতে অভিনেত্রী দীর্ঘদিনের সম্পর্কও ভেঙে যায়, যার কারণ অবশ্য বলতে রাজি হননি তিনি। বর্তমানে তিনি ব্যক্তিগত জীবন এবং অভিনয় জীবনের স্থিতি ফিরে পেয়েছেন। অভিনেত্রীর বিশ্বাস, কপালে যেটুকু লেখা আছে সেটা যে কোনও মূল্যে তিনি পাবেন।