অপূরণীয় ক্ষতি! সন্তানহারা তসলিমা নাসরিন, ২২ বছরের সন্তানকে হারালেন লেখিকা

তসলিমা নাসরিন—একজন লেখিকা, যাঁর কলম শুধু সাহিত্য রচনা করেনি, বরং সমাজের গোঁড়ামি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদের ভাষা হয়ে উঠেছে। ধর্মীয় কুসংস্কার, নারী স্বাধীনতা, মৌলবাদ—এই সমস্ত বিষয়ের বিরুদ্ধে নির্ভয়ে কথা বলেছেন তিনি। তাঁর লেখা যেমন আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত, তেমনই বিতর্কের ঝড় তুলেছে বারবার। নির্বাসিত জীবন, ক্রমাগত হুমকি, তবু থেমে যাননি তিনি। নিজের বিশ্বাসের সঙ্গে আপস না করে, কলমকে অস্ত্র বানিয়ে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন, সাহিত্যের পাতায় তুলে ধরেছেন এক অন্য রকম বাস্তব।

তসলিমার জীবন কখনও সরল পথে চলেনি। বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত হওয়ার পর সুদীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন ইউরোপে ও ভারতে। তবু লেখালেখি থেকে সরে যাননি। ‘লজ্জা’ উপন্যাস তাঁকে যেমন বিশ্বব্যাপী পরিচিতি এনে দিয়েছে, তেমনই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতেও নিয়ে এসেছে। তাঁর কলম কখনও নমনীয় হয়নি, কখনও আপস করেননি। সাহিত্যই তাঁর অস্ত্র, কলমই তাঁর প্রতিবাদ। কিন্তু এক দৃঢ়চিত্ত লেখিকার জীবনেও ব্যক্তিগত আবেগের জায়গা থাকে। সব কিছু ছাপিয়ে এমন কিছু সম্পর্ক থাকে, যা নিঃশব্দে হৃদয়ে জায়গা করে নেয়।

এমনই এক সম্পর্ক ছিল তাঁর পোষ্য মিনুর সঙ্গে। এই মার্জার সন্তান শুধুমাত্র তাঁর সঙ্গী নয়, বরং পরিবারেরই অংশ হয়ে উঠেছিল। ২২ বছর ধরে তসলিমার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী ছিল মিনু। সুখ-দুঃখ, নির্বাসন, লড়াই—সব কিছুর সাক্ষী থেকেছে সে। সম্প্রতি তসলিমা সোশ্যাল মিডিয়ায় মিনুর কয়েকটি ছবি ভাগ করে নিয়েছিলেন। জানুয়ারিতেও তিনি লিখেছিলেন দীর্ঘ পোস্ট, যেখানে পোষ্যের শারীরিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।

শনিবার সকালে তসলিমা নাসরিন অনুভব করলেন এক অদ্ভুত শূন্যতা। তাঁর দীর্ঘদিনের সঙ্গী, ২২ বছরের সম্পর্কের অন্যতম সাক্ষী মিনু এখন আর আগের মতো নেই। লেখিকার পোস্ট অনুযায়ী, বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক সমস্যা ভুগছিল সে। মানুষের হিসাবে তার বয়স প্রায় ১০৪ বছরের সমান। গত কয়েক মাসে তার ওজন কমেছিল, খাওয়াদাওয়ার অভ্যাস বদলেছিল, মাঝে মাঝে অসুস্থও হয়ে পড়ছিল। তবে কিছুদিন আগেই সে খানিকটা সুস্থ বোধ করছিল। নিজে খাচ্ছিল, জলও বেশ পরিমাণে খাচ্ছিল। তসলিমা জানিয়েছিলেন, এতদিন ধরে নিজের হাতে খাইয়ে দিতে হলেও, শেষ দিকে মিনু নিজে থেকেই খেতে শুরু করেছিল।

আরও পড়ুনঃ সঙ্গীত, অভিনয়, ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েন, হারিয়েছেন মেয়েকে! বয়সকালে কেমন আছেন হেমন্ত পুত্র জয়ন্ত মুখার্জি?

তসলিমার জীবনে মিনু শুধুমাত্র এক পোষ্য ছিল না, বরং ছিল তাঁর পরিবারের অংশ। দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় ধরে তার উপস্থিতি এক অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তার সঙ্গ, খুনসুটি, অসুস্থতার দিনগুলো—সব কিছুই আজ স্মৃতির পাতায় বন্দি। লেখিকার পোস্ট থেকেই স্পষ্ট, এই সম্পর্ক শুধুমাত্র একজন মানুষ ও তার পোষ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং এটা ছিল এক গভীর ভালোবাসার সম্পর্ক, যেখানে ভাষার প্রয়োজন পড়েনি, অনুভূতিই যথেষ্ট ছিল।