Sukhen Das: ‘হয়ত আমাকে কারো মনে নেই’, বনেদি বাড়ির ছেলে হয়েও বড় হয়েছেন অনাথ আশ্রমে, প্রবল কষ্টে জায়গা করেন টালিউডে! মনে পড়ে অভিনেতা-পরিচালক সুখেন দাস’কে?

তিনি আদতে ছিলেন এক বনেদি পরিবারের সন্তান। কিন্তু ভাগ্য কখন কাকে কোথায় নিয়ে গিয়ে দাঁড় করায় তা কেউ বলতে পারেনি। আর তার জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ ছিলেন বাংলা সিনেমার এই তারকা। তিনি অভিনেতা সুখেন দাস। বাংলা চলচ্চিত্রের একজন বিখ্যাত অভিনেতা এবং চলচ্চিত্র পরিচালক ছিলেন তিনি।

বলা হয় বাংলা সিনেমা নাকি কখনই সুখেন দাসকে তাঁর যোগ্য সম্মান দিতে পারেনি। কিন্তু তাঁর অস্তিত্বকে ভুলে যাওয়ার কোন‌ও জায়গাও রাখেননি এই অভিনেতা। বউবাজারের বিখ্যাত ‘শ্রীনাথ দাস লেন’ অনেকেরই চেনা। আর এই শ্রীনাথই ছিলেন অভিনেতা-পরিচালক-চিত্রনাট্যকার সুখেন দাসের পূর্বপুরুষ। তাঁর পিতামহ। জানা যায়, এই শ্রীনাথ দাসের পুত্র ছিলেন ফণীন্দ্রনাথ দাস। সুখেন দাসের পিতা। নাট্য-প্রযোজনার সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজের ঘটি-বাটি বেচে সর্বসান্ত হয়ে পড়েন ফনীন্দ্রনাথ। ‌

এই ধাক্কা সামলাতে না পেরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সুখেন দাসের বাবা। কিছুদিনের মধ্যেই মৃত্যু হয় তাঁদের মায়ের‌ও। সেই সময় সুখেন দাস এবং তাঁর বাকি পাঁচ ভাই বোনেরা কার্যত বালক বালিকা ছিলেন। সবারই ঠাঁই হয় অনাথ আশ্রমে। আর সেখান থেকেই লড়াই শুরু হয় সুখেন দাসের। পরবর্তীতে এক ডাক্তারের বাড়িতে ফাইফরমাশের কাজ করতেন সুখেন দাস। তাঁর ডিসপেনসারি পরিস্কার করা থেকে শুরু করে বাড়ির সব কাজ। তবে পেয়েছিলেন এক নিশ্চিন্ত আশ্রয়। তবে সিনেমার প্রতি তাঁর ছিল অগাধ টান। উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি পেয়েছিলেন সিনেমার প্রতি ভালোবাসা।

আর ব্যাস তারপর‌ই স্টুডিও পাড়ায় চক্কর কাটা শুরু। কিন্তু আনকোরা সুখেনকে স্টুডিও পাড়ায় ঢুকতেই দেয় না কেউ! ব্যাস বাঁধিয়ে দিলেন হট্টগোল। আর সেই সময় বিখ্যাত শব্দযন্ত্রী জে. ডি ইরানি স্টুডিওতে ঢুকছিলেন। তিনি নিজে সুখেনকে ফ্লোরে নিয়ে এলেন। দেখলেন তাঁর অভিনয়। সেই সময় কাজের সুযোগ না পেলেও টলি পাড়ায় রোজ যাতায়াতের অনুমতি পেয়ে গেলেন সুখেন দাস। তাঁর প্রতিভা প্রথম চোখে পড়ে প্রখ্যাত নাট্যকার ও সিনেমা পরিচালক দেবনারায়ণ গুপ্তের। তিনি সুখেন দাসকে প্রথম কাজ দেন। মাত্র ১১ বছর বয়সী সুখেনকে ‘দাসীপুত্র’ নামক একটি ছবিতে প্রথম কাজ দিলেন তিনি। এরপর কবি-সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র পরিচালিত ‘কুয়াশা’ ছবিতে কাজ পান সুখেন দাস।

সুখেন দাস একটি ঘরানার নাম। তাঁর ছবিতে ফুটে উঠত পারিবারিক গল্প, মূল্যবোধ। বাস্তব জীবন। তাঁর ‘সিংহ দুয়ার’, ‘সোনা বৌদি’, ‘জীবন মরণ’, ‘দাদামণি’, ‘স্বর্ণমহল’, ‘পান্না হীরে চুনী’, ‘প্রতিশোধ’ প্রভৃতি ছায়াছবি আজ‌ও দর্শকদের মনে রয়ে গেছে। অঞ্জন চৌধুরীর পাশাপাশি সুখেন দাস‌ও বাংলা চলচ্চিত্রকে বাঁচাতে প্রাণ সঁপে দিয়েছিলেন। যেহেতু নিজে ভীষণ কষ্ট করে উঠে এসেছিলেন তাই ইউনিটের সবার ভালো মন্দের দিকে ছিল তাঁর সুনজর।

শোনা যায়, স্বয়ং সত‍্যজিৎ রায়ও সুখেনের ছবি হিট করানোর অসীম ক্ষমতার তারিফ করতেন। আজ বাংলা ইন্ডাস্ট্রি তাঁকে কতটুকু মনে রেখেছে তা জানা না থাকলেও বাংলা সিনেমার ইতিহাসে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। আজ‌ও তাঁর বংশধারা কিন্তু এই ইন্ডাস্ট্রিতে বয়ে চলেছে। অভিনেতা বনি সেনগুপ্ত সম্পর্কে লেজেন্ডারি সুখেন দাসের নাতি। সুখেন দাসের মেয়ে বনির মা পিয়া সেনগুপ্ত। যদিও কিছুদিন আগেই তাঁদের নিয়ে কটাক্ষের ঝড় বয়ে গেছে।