বাংলা থিয়েটার ও টেলিভিশনের এক অবিচ্ছেদ্য নাম, বর্ষীয়ান অভিনেত্রী ‘চিত্রা সেন’ (Chitra Sen)। কঠোর চরিত্রে যেমন সাবলীল ছিলেন, তেমনি কোমল রূপেও নিজের অভিনয় দক্ষতার ছাপ রেখেছেন সমানভাবে। বাংলা মঞ্চনাটক ও অভিনয় জগতে যে কয়েকটি পরিবার নিজেদের উত্তরাধিকার ধরে রেখেছে, সেন পরিবার তাদের মধ্যে অন্যতম। নাট্যকার ‘শ্যামল সেন’ (Shyamal Sen) এর সঙ্গে চিত্রা সেনের (চিত্রা মণ্ডল) দাম্পত্য জীবন শুরু করেন, এমনকি তাঁদের পথচলাও বাংলা নাট্যজগতের অন্যতম অধ্যায় হয়ে উঠেছে।
শ্যামল সেন এবং চিত্রা সেনের পুত্র ‘কৌশিক সেন’ (Kaushik Sen) এবং পুত্রবধূ রেশমী সেনও একই ভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আর তাঁদের উত্তরসূরি ‘ঋদ্ধি সেন’ (Riddhi Sen) , সবচেয়ে ক্ষুদে অভিনেতা হিসেবে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত করে শুরুতেই অল্প বয়সেই বড় পর্দায় নিজের জাত চিনিয়েছেন। চিত্রা সেন শুধুমাত্র একজন অভিনেত্রী নন, বরং এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে শিল্পীসত্তাকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার এক অনন্য নাম।
তিনি বহু নবীন অভিনেতা-অভিনেত্রীর অনুপ্রেরণা। তাঁর হাত ধরেই রেশমীর মতো অভিনেত্রী অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ করেছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তাঁকে আর পর্দায় দেখা যায় না। দর্শকমনে প্রশ্ন—কোথায় গেলেন তিনি? এবার সেই কৌতূহলের জবাব মিলল। চিত্রা সেন এখন শয্যাশায়ী, ভীষণ অসুস্থ। হঠাৎ পড়ে গিয়ে আংশিক সেরিব্রাল অ্যাটাক হয়েছে তাঁর। বর্তমানে তিনি ঠিকভাবে কথাও বলতে পারছেন না। তাঁর কণ্ঠে ধরা পড়েছে অসহায় যন্ত্রণা।
বর্তমানে চিত্রা সেন এতটাই অসুস্থ যে তাঁর সঙ্গে স্বাভাবিক কথাবার্তাও প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। সংবাদমাধ্যমে ফোনে এক অস্পষ্ট কণ্ঠে তিনি বলেন, “আমি তো শুয়ে আছি গো… পড়ে গিয়েছিলাম… এখন আর কথা বলতেই পারি না।” এই কণ্ঠে সেই চেনা দাপুটে অভিনেত্রীর স্পর্শ মেলে না, যা শুনে আবেগে ভাসছেন অসংখ্য অনুরাগী।যাঁদের কাছে তিনি শুধুমাত্র অভিনেত্রী নন, এক জীবন্ত অধ্যায়।
আরও পড়ুনঃ “আমি খুব বোরিং, পার্টি করিনা, মদ খাই না!”— নায়িকা হয়েও জৌলুস থেকে শতহস্ত দূরে পল্লবী! একাকীত্বকেই সঙ্গী করে শান্তির জীবনের কথা শোনালেন পর্ণা!
এই মুহূর্তে চিত্রা সেনের স্বাস্থ্যের অবস্থা উদ্বেগজনক হলেও, তাঁর প্রতি দর্শকের ভালবাসা ও প্রার্থনার কোনও কমতি নেই। বাংলার সংস্কৃতি জগতের এক উজ্জ্বল নাম যেন আবার সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন, এটাই সকলের প্রার্থনা। আর যদি পর্দায় না-ও দেখা যায়, তবু চিত্রা সেন থাকবেন বাংলা নাট্য ও টেলিভিশনের হৃদয়ে, তাঁর অবদানে, তাঁর ছোঁয়ায়। আমাদের পার্থনা রইলো, বর্ষীয়ান অভিনেত্রী হয়ে দ্রুত আরোগ্য লাভ করেন!
