তিনি অভিনেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়। সম্পর্কে তিনি বাংলার ইন্ডাস্ট্রি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বাবা। অল্প বয়সে অত্যন্ত সুদর্শন দেখতে ছিলেন বিশ্বজিৎ। সুদর্শন, সুঠাম নায়ক সুলভ চেহারা, সেইসঙ্গে দারুণ অভিনয় ক্ষমতা। বলা যায় নায়ক হিসেবে আদর্শ ছিলেন অভিনেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য, বলা হয়ে থাকে একটা সময় নাকি টলিউডে মহানায়ক উত্তম কুমারকে টেক্কা দেওয়ার ক্ষমতা রাখতেন বিশ্বজিৎ চ্যাটার্জী। যদিও বলাবাহুল্য ততটা কিছুই করে দেখাতে পারেননি তিনি। তবে বাংলার পাশাপাশি হিন্দি সিনে জগতেও দাপট দেখিয়েছিলেন এই অভিনেতা। টলিউড এবং বলিউড সমান দুই জায়গাতেই অভিনয় করতেন বিশ্বজিৎ চ্যাটার্জী। বেশ স্ট্রাগল করেই অভিনেতা হতে হয়েছিল এই অভিনেতাকে।
উল্লেখ্য, অভিনেতা বিশ্বজিৎ চ্যাটার্জীর বাবা অর্থাৎ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের দাদু রণজিৎ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন একজন চিকিৎসক। তিনি চাইতেন ছেলেও পড়াশোনা করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু বিশ্বজিতের স্বপ্ন ছিল কিছু আলাদা। অভিনয়ের প্রতি ছোটবেলা থেকেই দুর্নিবার টান অনুভব করতেন তিনি। ছোটবেলায় বড় হওয়া মামার বাড়িতে। আর সেখান থেকেই লুকিয়ে লুকিয়ে থিয়েটার অভিনয় এইসব করতেন বিশ্বজিৎ। আসলে তাঁর পরিবার একেবারেই সায় দিত না তাঁর এইসব কাজে।
অবশেষে একদিন এই নাটক করতে গিয়েই ধরা পড়ে যান পরিবারের লোকের হাতে। বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। কোথায় যাবেন? অগত্যা গিয়ে ওঠেন এক বন্ধুর বাড়িতে। কংস – কৃষ্ণ, ডাক হরকরা, নতুন ফসল, বঁধু – বসন্ত চৌধুরীর ছোট ভাই, মায়ামৃগ, কঠিন মায়া, দুই ভাই, নব দিগন্ত, শেষ পর্যন্ত, ধুপ ছায়া, দাদা ঠাকুর, প্রভাতের রঙ প্রকৃতির বহু সিনেমায় সাফল্যের সঙ্গে অভিনয় করেছেন তিনি।
একইসঙ্গে তাঁর দৃপ্ত পদচারণা হয়েছে বলিউডেও। মুম্বাই শহরে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বক্সিং থেকে ঘোড়ায় চড়া সবকিছুই শেখেন বিশ্বজিৎ। উল্লেখ্য, ১৯৬২ সালে তিনি হিন্দি সিনেমা ‘বিশ সাল বাদ’-এ অভিনয় করেন।বিন বাদল বারসাত, সেহনাই, মজবুর, কোহরা, ক্যায়সে কাহু একের পর এক সফল সব ছবি।
যে সময় বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলিউডে পা রাখেন তখন তিনি বিবাহিত। রত্না চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ তিনি। প্রসেনজিৎ ও পল্লবী তাঁর দুই ছোট ছোট সন্তানও রয়েছে। কলকাতায় মায়ের সঙ্গে থাকতে বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সন্তানেরা। বাবার জন্মদিনের সপরিবারে মুম্বাই যেতেন সবাই। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন সাংসারিক জীবনে ছন্দপতন ঘটল।
বিবাহিত বিশ্বজিৎ প্রেমে পড়লেন ইরা দেবীর। রীতিমতো ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আবদ্ধ হন তাঁরা। নিজের প্রথম বিয়ের কথা ভুলে গিয়ে বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় দ্বিতীয়বারের মতো বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হলেন ইরা দেবীর সঙ্গে। ছোট ছোট দুই সন্তানকে নিয়ে রীতিমতো অথৈ জলে পড়লেন রত্না দেবী। বিশ্বজিতের এই দ্বিতীয় বিয়েকে তাঁর পরিবার থেকে শহর কলকাতা কেউ মেনে নেয়নি। বিস্তর সমালোচনা হয়েছিল। এরপর আর কখনই কলকাতা ফিরে আসেননি বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়। পাকাপাকিভাবে মুম্বাইয়ের বাসিন্দা হয়ে যান।
অভাব অনটনকে সঙ্গী করে দুই ছেলে মেয়েকে নিজের সাধ্যমত বড় করে তোলেন রত্না দেবী। আর তাই আজও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সাফল্যের প্রতিটা মুহূর্তে স্মরণ করেন নিজের মাকে। কারণ প্রসেনজিৎ-পল্লবী জীবনে যা পেয়েছেন বা যা হয়েছেন তার সবটুকু কৃতিত্বই তাঁরা দিয়ে থাকেন তাঁদের মাকে। বাবার অভাব কোনদিনই দুই ছেলে মেয়েকে বুঝতে দেয়নি রত্না দেবী। বলা যায় ছায়ার মতো আগলে ছিলেন তাঁদের দুজনকে। যদিও দূরে থেকে বাবার ভালোবাসা দিয়েছেন বিশ্বজিৎ।
উল্লেখ্য, বর্তমানে ৮৬ বছর বয়সী অভিনেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী ইরা চট্টোপাধ্যায় ও দ্বিতীয় পক্ষের কন্যা সম্ভাবী চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে মুম্বাইতেই থাকেন। আজ আর বাবার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী এবং সন্তানের সঙ্গে কোন রকম বিবাদ নেই প্রসেনজিৎ- পল্লবীর। এই বিষয়ে একবার অভিনেতার প্রথম পক্ষের মেয়ে পল্লবী জানিয়েছিলেন ছোট বোনকে নিয়ে বা বাবার দ্বিতীয় বিয়েকে নিয়ে এখন তাঁর মনে আর কোনও মান-অভিমান নেই। তিনি খুশি এই জন্য যে বিশ্বজিত চ্যাটার্জীকে আজও সেদিনের মতো সমানভাবে ভালবাসেন ইরা দেবী। নিজের প্রথম পক্ষের দুই ছেলে মেয়ের সঙ্গে আজও সমান সদ্ভাব বিশ্বজিতের