‘সৌমীতৃষার ক্যারিশমাই বেশি কারণ সৌমীতৃষাই তো মিঠাইকে প্রাণ দিয়েছে’! EXCLUSIVE আড্ডায় আপনাদের ‘মিঠাই’

বাংলা টেলিভিশনকে বদলে দিয়ে গেছে একটি ধারাবাহিক যার নাম মিঠাই। আর এই ধারাবাহিকে মিঠাই নামক মূল নারী চরিত্রে ছিলেন অভিনেত্রী সৌমীতৃষা কুণ্ডু। তাঁর দুষ্টু মিষ্টি অভিনয়ে বুঁদ হয়েছে বাঙালি দর্শক। দর্শকদের কাছ থেকে তিনি পেয়েছেন বিপুল ভালোবাসা, পেয়েছেন সম্মান। আবার মেনে নিয়েছেন সব কটাক্ষ। কিন্তু সবকিছু সামলে আজ বাংলা টেলিভিশনের সফল তারকা তিনি। টেলিভিশনের গণ্ডি পেরিয়ে পা রাখবেন বড় পর্দাতেও। তাঁর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় আমাদের প্রতিনিধি অনুস্মিতা ভট্টাচার্য।

প্রশ্ন: শুটিংয়ের তাড়া নেই, সকাল সকাল উঠে মেকআপ করতে হচ্ছে না, হুরহুর ইংলিশ বলতে হচ্ছে না। কীভাবে শুরু হচ্ছে এখন সকালগুলো?
সৌমীতৃষা: এখন আর মা সকাল সকাল ডেকে দিচ্ছে না, বাবা ফলের রস বানিয়ে দিচ্ছে না। সেই স্কুলে যাওয়ার মতো করে এখন আর ওঁরা আমাকে পাঠাচ্ছে না। সবটাই হচ্ছে দেরিতে‌। আসলে দীর্ঘ আড়াই বছর একটা জীবনে অভ্যস্ত ছিলাম। এখন একটা নতুন জীবন। মাঝেমধ্যেই মিস করছি নিজের ফ্লোরটাকে। আবার এই সময়টাকেও উপভোগ করার চেষ্টা করছি।

প্রশ্ন: মিঠাই একটা ইতিহাস হয়ে রয়ে গেল। গত পরশু ছিল শেষ টিআরপি। কেমন লাগছে?
সৌমীতৃষা: বলতে পারো পরশু আমাদের সমগ্র জার্নিটার ইতি হল। অফিসিয়ালি শেষ হলো মিঠাই। যেদিন শেষ শুটিং করেছিলাম সেদিন আমাদের জন্য জার্নিটা শেষ হয়েছিল। যেদিন লাস্ট মিঠাই টেলিকাস্ট হলো সেদিন দর্শকদের জন্য শেষ হয় মিঠাই। আর পরশু শেষবারের মতো টিআরপি বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে একেবারের জন্য শেষ হলো মিঠাই।

প্রশ্ন: মিঠাইকে সফল করতে কার ক্যারিশমা বেশি? মিঠাই না সৌমীতৃষার?
সৌমীতৃষা: আসলে মিঠাইয়ের সফলতার জন্য মিঠাই বা সৌমীতৃষা কারুর ক্যারিশমা‌ই বেশি বলা যাবে না। আসলে এই সফলতা পুরো টিমের। আসলে কোনও সফল জিনিস কখনই কারুর একার জন্য হয় না, জড়িত থাকেন প্রত্যেকটা মানুষ। আমাদের টিমের সবার চেষ্টাতেই সফল হয়েছিল মিঠাই। ‌‌আর যদি সৌমীতৃষা এবং মিঠাইয়ের মধ্যে তুলনা করতে বল তাহলে আমি বলব সৌমীতৃষার ক্যারিশমাই বেশি। কারণ সৌমীতৃষাই তো মিঠাইকে প্রাণ দিয়েছে।

প্রশ্ন: কখন‌ও স্ক্রিপ্টের বাইরে গিয়ে নিজে ডায়লগ দিয়েছ? চরিত্রকে বুঝে নিজে থেকে কখনও আলাদা কিছু যোগ করেছ?
সৌমীতৃষা: হ্যাঁ হ্যাঁ নিজে থেকে প্রচুর ডায়লগ দিয়েছি। আর এই ক্ষেত্রে রাখিদি ভীষণ কোঅপারেটিভ ছিলেন। অনেক কিছু ইনপুট করতে দিতেন। থাঙ্কু গোপাল, গোপাল হেলেপ এগুলো রাখিদি দিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে বাদবাকিগুলো আমি যোগ করেছি। আসলে একটা চরিত্রের মধ্যে ঢুকে গেলে আস্তে আস্তেই এগুলো হয়ে যায়। আর রাখিদি সেই জায়গাটা দিয়েছিলেন। যেমন ‘গোপাল হেলেপ দিস কেরাইসিস’, এখানে কেরাইসিস আমার সংযোজন।

আর একটা ছিল যে ‘উচ্ছে বাবু যা বলবে আমি উচ্ছে বাবুর কথায় রাজি’। আমি ওটা করেছিলাম ‘উচ্ছে বাবু সেইং সামথিং মিঠাই ডান্সিং উইথ বিট’।

প্রশ্ন: মাঝে যখন মিঠাই সরে গিয়ে মিঠি এলো তখন সবাই ভেবেছিল মিঠাই মৃত। যদিও আসল সত্যিটা তুমি জানতে। ওই সময় নিজের ভক্ত, অনুরাগীদের থেকে অনেক কষ্টে ভরা মেসেজ পেয়েছ। কীভাবে সামলাতে সবটা?
সৌমীতৃষা: সেই সময় বেশিরভাগ ইন্টারভিউতেই আমি বলেছিলাম মিঠাই এই ধারাবাহিকের নাম। মিঠাই কোথাও যেতে পারে না। গল্পে টুইস্ট তো রাখতেই হবে। নাহলে দর্শকরা নিজেরাই বলবেন এখন তো সবই ঠিক হয়ে গেছে। সিদ্ধার্থ মিঠাইয়ের মধ্যে ভালোবাসাও হয়ে গেছে। আর কী দেখব? তাহলে তো ধারাবাহিক বন্ধ করে দিতে হতো।

আসলে প্রথম এক সপ্তাহ সবাই মিঠাইয়ের নাম করলেও মিঠির চরিত্রটাকেও খুব অল্প সময়েই ভালবেসে ফেলেছিলেন দর্শকরা। আর তাই মিঠাই ফিরতেই মিঠির বিয়ে হয়ে গেছে এখন ওর কী হবে ভেবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। আর ভক্তদের কষ্টের মেসেজের কথা যদি বলো তাহলে একটা সময় আমার মনে হয়েছিল যে আমিই হয়তো মরে গেছি। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে এত দুঃখের পোস্ট। আসলে এটা দেখলেই বোঝা যায় মানুষ একটা চরিত্রের মধ্যে কতটা ঢুকে আছে। কতটা ভালোবাসে সেই চরিত্রটাকে।

প্রশ্ন: মিঠাই সৌমীতৃষাকে কতটা বদলে দিয়েছে ব্যক্তিগতভাবে?
সৌমীতৃষা: মিঠাইয়ের চরিত্রটা হচ্ছে লার্জার দ্যান লাইফ। ওকে কেউ হাত বেঁধে কিডন্যাপ করে মুখ বন্ধ করে রেখে দিলেও ও তাঁর ক্ষতি চাইবে না বরং চাইবে ভালো হোক। কিন্তু এটা বাস্তব জীবনে হয় না। কিন্তু এই চরিত্রটা থেকে শিখেছি জীবনে সৎ থাকার, পজিটিভ থাকার। আর শিখেছি কীভাবে গোপালের ভরসায় সব কিছু ওভারকাম করা যায়। আমি ঠাকুর ভক্ত ছিলাম। কিন্তু আলাদা করে গোপাল ভক্ত নই। কিন্তু মিঠাই আমাকে গোপাল ভক্ত করেছে। এখন জয় কৃষ্ণ বলার সাথে সাথে জয় গোপাল বলি।

প্রশ্ন: তোমার কী মনে হয় সিনেমা না সিরিয়াল কোনটা একজন অভিনেতা বা অভিনেত্রীকে দর্শকের কাছে আরও বেশি করে পৌঁছে দিতে সক্ষম?
সৌমীতৃষা: এটা নির্ভর করে তোমার কাজের প্রসার, চরিত্র এবং গল্পের ওপর। একটা সিরিয়াল হঠাৎ করে হিট হতে পারে। আবার একটা সিরিয়াল বছরের পর বছর চললেও দর্শকরা তা মনে রাখে না। কিন্তু একটা সিনেমা আগামী পাঁচ বছর দর্শকদের মনে থেকে যায়। এটা আসলে অনেকাংশই নির্ভর করে গল্পের উপস্থাপনার ওপর। আসলে আলাদা করে কোন‌ও প্ল্যাটফর্ম অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কিছু দেয় না। নিঃসন্দেহে সিরিয়াল মানুষের অন্দরমহলে ঢুকে যায়। আবার একটা ভালো সিনেমাও কিন্তু পাঁচ বছর দর্শকরা মনে রেখে দেন। মন খারাপ হলে আমরা পুরনো সিনেমা চালিয়ে দেখি। কিন্তু পুরনো সিরিয়াল কি দেখি?

কিন্তু মিঠাইয়ের ক্ষেত্রে কী হবে? আগামী ১০-১৫ বছর পরেও কি দর্শকরা মনে রাখবে মিঠাইয়ের হুরহুর ইংলিশ? উত্তর দিয়েছেন নায়িকা। তবে সেটা জানতে হলে চোখ রাখুন ইন্টারভিউর দ্বিতীয় পর্বে।

You cannot copy content of this page