একটা সময় টলিউডের (Tollywood) অন্যতম জনপ্রিয় হিরোদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। একটা সময় টলিপাড়া কাঁপালেও এখন আর সেই অর্থে দেখা যায় না তাকে। টলিপাড়ায় একাধিক ছবিতে কাজ করলেও হঠাৎই যেন উবে যান তিনি। তবে ফিরে এসেও বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের (Prosenjit Chatterjee) সমসাময়িক এই অভিনেতা আজ লড়াইয়ে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছেন। যদিও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, অভিনেতার কথা অনুযায়ী ৯৭ সাল থেকে ২০০৪ পর্যন্ত টানা কাজ করেছেন এই অভিনেতা। কিন্তু ২০০৪ সালের ২১ শে জুলাই তার বাবার মৃত্যুর পর তিনি মুম্বাই চলে যান এবং সেখানেই কাটান চারটে বছর। আর যার ফলে অনেকটাই নড়বড়ে হয়ে যায় তার বাংলায় গড়ে ওঠা ক্যারিয়ার। প্রসঙ্গত, লোকেশ ঘোষের বাবা ছিলেন একজন নামী পরিচালক এবং প্রযোজক। বাংলা থেকে হিন্দি সিনেমা প্রযোজনা করেছেন তিনি।
তবে নামী পরিচালক-প্রযোজকের ছেলে হিসেবে সেই অর্থে দারুণ কিছু করে দেখাতে পারেননি লোকেশ ঘোষ। কমার্শিয়াল বাংলা ছবিতে বেশ কিছু ক্ষেত্রে সুযোগ পেয়েছেন লোকেশ। বলা যায় তার অভিনয়ের কেরিয়ার ছিল ভীষণই সীমিত। যে কয়েকটি ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন সেখানে সিকিভাগ ছবিতে প্রধান নায়ক হতে পেরেছেন। বেশিরভাগ সময়েই তাকে প্রধান নায়কের পাশে সেকেন্ড লিড চরিত্রে দেখা গিয়েছে। হয় নায়কের বন্ধু, বা নায়কের ভাই।
অভিনেতা নিজে একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারের জানিয়েছেন, তার বাবা নাকি টলিউডের বেশিরভাগ পরিচালক-প্রযোজককে বলে দিয়েছিলেন তার ছেলেকে কাজ না দেওয়ার জন্য। কারণ নিজের বাবাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে লোকেশ ঘোষ বলেছিলেন তিনি নিজের দমে কেরিয়ার গড়বেন যা তার বাবার ইগোতে লেগেছিল। এমনকি অভিনেতা জানিয়েছেন তার বড়লোক বাবা কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক ছিলেন। কিন্তু তার দিদি ছলে বলে কৌশলে বাবাকে দিয়ে সমস্ত টাকা নিজের নামে করিয়ে নিয়েছিলেন। আর তাই বাবার সম্পত্তির এক কানাকড়িও পাননি অভিনেতা।
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের চিকেন পক্স হওয়ার কারণে প্রথমবার সিনেমায় অভিনয় করার সুযোগ পান লোকেশ ঘোষ। তার আগে অবশ্য লরির দালালি করতেন তিনি বলে জানিয়েছেন। ১৯৯৫ সালে অঞ্জন চৌধুরীর ‘নাচ নাগিনী নাচ’ ছবির হাত ধরে অভিনয় জগতে প্রবেশ করেন তিনি। পরে অবশ্য এই অঞ্জন চৌধুরীর বড় কন্যা চুমকি চৌধুরীকে বিয়েও করেছিলেন তিনি কিন্তু সেই বিয়ে বেশিদিন টেকেনি। এরপর অঞ্জন চৌধুরীর ক্যাম্প ছেড়ে তিনি যে অন্য পরিচালকের ক্যাম্পে ঢুকেছিলেন সেই পরিচালক টানা তার পিঠে ছুরি মেরে গেছেন। আর যার ফলস্বরূপ অনেকটাই পিছিয়ে পড়েন তিনি বলে জানিয়েছেন।
অভিনেতার কথায় কিছুটা ভাগ্য এবং কিছুটা লোকজনের ষড়যন্ত্র তাকে লড়াই থেকে অনেকটা দূরে ছিটকে দিয়েছিল। সেই সঙ্গে আবার কিছুটা তার খামখেয়ালিপনাও রয়েছে। মাঝে অভিনয় ছেড়ে দিয়ে দার্জিলিং গিয়ে হোটেলের ব্যবসা করছিলেন তিনি। সেখানেও বেশ খানিকটা লোকসান হয় তার। আবার ফিরে আসেন কলকাতায় অভিনয়ের টানে। টুকটাক টুকটাক কাজ করেছেন। মাচা শোও করেন। আসন্ন দিনে তার বয়স কয়েকটি কাজ মুক্তি পাবে। অভিনেতার কথায় সেই কাজগুলো মুক্তি পেলে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিকে কিন্তু আবারও লোকেশ ঘোষকে নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হবে।