উনিশের দশকের টলিপাড়ার জনপ্রিয় অভিনেত্রী তিনি। বাংলা ছবির জগতে নায়িকা হিসেবে প্রবেশ করলেও পরবর্তী সময়ে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মায়ের ভূমিকায় বারবার দর্শকদের মন জয় করেছেন তিনি। দীর্ঘ চার দশক ধরে ৩০০ বেশি ছবিতে সাবলীলভাবে অভিনয় করেছেন তিনি। তবে অভিনয় জগতে আসার পথটা ছিল অতি দুর্গ’ম। সংসারের বাঁ’ধ’ন ভে’ঙে অনেক ক’ষ্টে স্বেচ্ছায় গ্ল্যা’মা’র জগতে পা রেখেছিলেন অভিনেত্রী শকুন্তলা বড়ুয়া (Shakuntala Barua)।
১৯৪৭ সালের ২২শে এপ্রিল কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই তাঁর অদ্ভু’ত টান ছিল গানের প্রতি। পরিবারের সহযোগিতায় ছোটবেলা থেকেই তিনি গান গেয়েছেন রেডিওতে। অভিনেত্রী বাবা সুবোধ ভট্টাচার্য এবং মা দীপ্তি ভট্টাচার্য সর্বদাই গর্ববোধ করতেন মেয়ের কাজে। তবে গানের জগতের একজন নক্ষত্র হয়ে ওঠার আগেই তাঁর বিয়ে হয়ে যায় কলকাতার এক র’ক্ষ’ণশীল পরিবারে। শকুন্তলা ভট্টাচার্য হয়ে যান শকুন্তলা বড়ুয়া। অভিনেত্রীর স্বামী ছিলেন কলিএন্ডিয়ারের জেনারেল ম্যানেজার, নন্দাইরা ছিলেন আ’ইএ’এস অফিসার। বাড়িতে আমলা বেষ্টি’ত পরিবেশ। তাই এই ধরনের পরিবার থেকে অভিনয় জগতের সঙ্গে যুক্তি হওয়া তাঁর প’ক্ষে হয়ে ওঠে কষ্টদায়ী।
যদিও শ্বশুরবাড়িতে গান গাওয়া নিয়ে ছিল না আপত্তি। ফলেই গানের চর্চা ক্রমাগত চালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু অভিনেত্রী হয়ে ওঠার সুপ্ত বাসনা সংসারের চাপে চার দেওয়ালের মধ্যেই বন্দী হয়ে যায়। সেইসময় উচ্চ বংশের পুত্রবধূ অভিনয় করতে, এটা মেনে নেয়নি কেউই। তবে কথায় বলে, মন থেকে কিছু চাইলে স্বয়ং ভগবান পথ দেখান। অভিনেত্রীর ক্ষেত্রেও হল তাই। তখন তিনি দুই সন্তানের জননী। গানের সুত্রেই তাঁর জগাজগ হয় বিখ্যাত গায়ক উপেন হাজারিকার সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে আগেও অনেক গান গেয়েছিলেন শকুন্তলা দেবী।
এদিন শুটিং দেখতে গিয়ে পরিচালকের নজর পরে শকুন্তলা দেবীর ওপর। তাঁর অসাধারণ চোখ দেখে একদেখাতেই তাঁকে পছন্দ করেছিল অনেকেই। বহু পরিচালক তাঁকে প্রস্তাব দেন অভিনয়ের। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে অভিনেত্রী হওয়ার সাহস তিনি দেখাতে পারেননি। পরে সচিন অধিকারী তাঁর সিনেমা গান্ধারে অভিনয়ের সুযোগ দেন তাঁকে। তবে স্বামী অ’নুম’তি দেননি কিছুতেই। পরে অনেক অনুরোধ করে একটি সিনেমায় অভিনয় করার অ’নুম’তি পান তিনি। যদিও পরে সিনেমার পরিচালক হয়ে যায় সুখেন দাস। ছবির নাম গান্ধারের পরিবর্তে হয়ে যায় সুনয়নী। পরিবর্তন হয়ে যায় একাধিক কাস্ট। সিনেমার নায়ক ছিলেন উত্তম কুমার। তবে মহানায়কের নাম নানা রটনা শুনেই আবার বেঁকে বলেন অভিনেত্রীর স্বামী। তবে পরে তিনি রাজি হয়ে যান। ব্যাপক হিট করে সিনেমাটি।
আরও পড়ুন: জলসায় ধু’ন্ধু’মার! স্টার জলসার আসন্ন ধারাবাহিকের অফার রি’জেক্ট করলেন এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী! নাম জানলে চম’কাবেন আপনিও!
এরপরই একের পর এক সিনেমায় নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। কিন্তু সন্তান প্রতিপালনে সমস্যা হওয়ায় বেশ কিছু বছরের জন্য সিনেমার জগৎ থেকে সরে আসেন তিনি। পরে কামব্যাক করে অঞ্জন চৌধুরীর শত্রু সিনেমার মাধ্যমে। তারপর থেকে আর অভিনেত্রীকে দেখা যায়নি নায়িকার ভূমিকায়। যদিও মায়ের চরিত্রে তাঁর অভিনয় দারুণ পছন্দ করেছেন দর্শকরা। শেষবার তাঁকে দেখা গেছিল দেবের টনিক সিনেমায়। অভিনেত্রীর মেয়েরা কেউই যুক্ত নন সিনেমা জগতের সঙ্গে। তবে অভিনেত্রীর বড় জামাই আশিস বিদ্যার্থী ভারতের অতি জনপ্রিয় অভিনেতা। অভিনেত্রীর কঠিন লড়াইকে আমরা জানায় কুর্নিশ।