রূপালি পর্দার পেছনে তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে এক সময়ে জল্পনা ছিল তুঙ্গে। তাঁরা আর কেউ নন, কিংবদন্তি ‘উত্তম কুমার’ (Uttam Kumar) এবং ‘সুচিত্রা সেন’ (Suchitra Sen)। বাংলা চলচ্চিত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় এই জুটির পর্দায় একসঙ্গে কাজ যেমন দর্শকদের মুগ্ধ করত, তেমনই পর্দার বাইরের ঘনিষ্ঠতা নিয়েও বহু চর্চা চলত। সেই সময়কার বিনোদন পত্রিকায় বারবার উঠে আসত তাঁদের রসায়ন। আর এই আলোচনায় মাঝেমধ্যেই জায়গা পেতেন উত্তমপত্নী ‘সুপ্রিয়া দেবী’ (Supriya Devi) ও।
কিন্তু তিক্ততার ছায়া সরিয়ে দিয়ে, নিজের আত্মজীবনীতে এক অন্য সুচিত্রার গল্প শুনিয়েছেন সুপ্রিয়া। ইন্ডাস্ট্রিতে যে দাম্ভিক সুচিত্রাকে সবাই চিনত, এই সুচিত্রা একদমই আলাদা। সুপ্রিয়া দেবীর লেখা থেকে স্পষ্ট যে মহানায়িকার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল গভীর বন্ধুত্বের। আর এই বন্ধুত্বের শুরুটায় ভূমিকায় ছিলেন স্বয়ং মহানায়ক উত্তম কুমার। ইন্ডাস্ট্রিতে ‘গম্ভীর’ নামে খ্যাত সুচিত্রাকে সুপ্রিয়া চিনেছিলেন একদম অন্যরকমভাবে—হাসিখুশি, রসিক, প্রাণোচ্ছ্বল এক মানুষ হিসেবে।
উত্তম-সুচিত্রার সম্পর্ক নিয়েও তাঁর চোখে ছিল শুধুই নিখাদ বন্ধুত্বের ছবি। শুটিং ফ্লোরে যতই গাম্ভীর্য থাকুক, ব্যক্তিগত পরিসরে তিনি ছিলেন প্রাণখোলা। তাঁর বায়োগ্রাফিতে সুপ্রিয়া উল্লেখ করেন, সুচিত্রা সেন প্রায়শই তাঁদের ময়রাস্ট্রিটের বাড়িতে এসে আড্ডা দিতেন। সুপ্রিয়া নিজে রান্না করতেন সুচিত্রার প্রিয় খাবার, আর সেই খাবার খেতে খেতে চলত টানা আড্ডা। শুধু তাই নয়, সুচিত্রার তরফ থেকেও বহুবার নিমন্ত্রণ আসত তাঁদের দু’জনকে—উত্তম ও সুপ্রিয়াকে।
সেইসব মুহূর্তগুলোই হয়তো অনেকেরই চোখে হয়ে দাঁড়িয়েছিল এক ত্রিমাত্রিক সম্পর্ক, কিন্তু তাঁদের কাছে প্রেমের চেয়ে অনেক বেশি জায়গা পেয়েছে বিশ্বাস ও বন্ধুত্ব। একদিনের একটি ঘটনার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন সুপ্রিয়া। এক সকালে সুচিত্রার ফোন আসে তখন উত্তম কুমার বাড়িতে ছিলেন না, সেটা জানার পর সুচিত্রা রসিকতার ছলে বলেন, “উতুকে খুব চুমু খেতে ইচ্ছা করছে তো!” উত্তম কুমারকে ‘উতু’ বলেই ডাকতেন তিনি। সুপ্রিয়া হেসে জবাব দেন, “বেশ তো, শুটিং ফ্লোরে ফোন করে বলে দিচ্ছি, শুটিং শেষে তোমার বাড়ি চলে যাবে, তুমি চুমু খেয়ে নিও!”
আরও পড়ুনঃ অঞ্জন চৌধুরীর ‘আব্বাজান’-এর সিক্যুয়েল! এবার কি টলিউডের হারানো মেজাজ ফেরাতে আসছেন অভিনেত্রী রিনা চৌধুরী?
সুচিত্রা রীতিমতো হকচকিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, “একী, তুই কেমন, হিংসে হচ্ছে না?” উত্তরে সুপ্রিয়া বলেন, “না, কারণ তোমাকে আমি খুব ভালো করে চিনি।” কথাগুলোতে ছিল বিশ্বাস, বোঝাপড়া আর বন্ধুত্বের স্পর্শ। পর্দার আড়ালে এই তিন কিংবদন্তি শিল্পী মধুর সম্পর্ক এখনও রয়ে গিয়েছে লোক চক্ষুর আড়ালে। সুচিত্রার বিশ্বাস ছিল, তারকার ব্যক্তিগত জীবন যত গোপন থাকবে, তাঁদের পর্দার ম্যাজিক তত উজ্জ্বল থাকবে। সেই বিশ্বাস রক্ষা করেই তাঁরা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন এক অদ্ভুত আন্তরিক বন্ধন।