বাংলা সংগীতের জগতে ‘লোপামুদ্রা মিত্র’ (Lopamudra Mitra) নামটা শুধুই একজন গায়িকার পরিচয় বহন করে না। বরং এই নামের পেছনে আছে এক শক্তিশালী, স্বাধীনচেতা এবং গভীরভাবে চিন্তাশীল নারীর কণ্ঠ। তাঁর গলায় যেমন রয়েছে জাদু, তেমনি তাঁর চিন্তাভাবনায় আছে তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণ ও স্পষ্টতা। মঞ্চে দাঁড়িয়ে গান গাওয়া যেমন তাঁর সহজাত, তেমনই ক্যামেরার সামনে বসে নিজের ভাবনা অকপটে প্রকাশ করতেও তিনি সমান স্বচ্ছন্দ। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি সমকালীন শিল্পী সমাজ ও রাজনীতি ঘিরে নিজের অবস্থান তুলে ধরলেন।
একজন সত্যিকারের শিল্পীর নৈতিক অবস্থানকে সামনে এনে দেয় এই কথাগুলি। এদিন তাঁর কথায় যেমন উঠে এলো– অনেক শিল্পী যেখানে সরাসরি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হন, লোপামুদ্রা সেখান থেকে নিজেকে আলাদা রেখেছেন। তাঁর মতে, একজন শিল্পীর কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক রঙ থাকা উচিত নয়। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে সেই প্রাচীন দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে শাসকশ্রেণি সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দিত, শিল্পকে স্বাধীনভাবে বিকশিত হতে দিত। লোপামুদ্রাও বিভিন্ন সরকারের আমলে নিজের মতো কাজ করেছেন।
কিন্তু কোনও পক্ষের হয়ে অবস্থান নেওয়াতে তাঁর আপত্তি রয়েছে। সরকারি কোনও অনুষ্ঠানে গান গাওয়া মানেই যেন তাঁকে বিশেষ রাজনৈতিক ছাঁচে ফেলা হবে—এমন ভাবনা তাঁর কাছে অযৌক্তিক। এই স্পষ্ট বক্তব্য একজন মুক্তচিন্তার শিল্পীর আত্মপরিচয়কেই প্রতিষ্ঠা করে। তাঁর দীর্ঘ ত্রিশ বছরের সঙ্গীতজীবনে কতটা বৈচিত্র্য রয়েছে, সে কথা নিজেই স্মরণ করলেন তিনি। কখনও গেয়েছেন গভীর ভাবগম্ভীর গান, আবার কখনও একদম স্বতঃস্ফূর্ত প্রেমের সুরে মন কেড়েছেন শ্রোতাদের।
লোকগীতি, আধুনিক গান, রবীন্দ্রসঙ্গীত—সব ধরনের গানেই তিনি নিজের স্বকীয়তা বজায় রেখেছেন। জয় সরকার থেকে শুরু করে কবীর সুমনের মতো গীতিকারদের সঙ্গেও কাজ করেছেন। তাঁর মতে, তাঁকে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা কম হয়েছে, এমনটা একেবারেই নয়। তবে চলচ্চিত্র জগতে তাঁকে খুব বেশি ব্যবহার করা হয়নি, এবং সেটাই হয়তো তাঁর একমাত্র আক্ষেপ। বিশেষ করে ‘হেমলক সোসাইটি’ সিনেমার পর তাঁর গলা আর টালিগঞ্জের কোনও নায়িকার মুখে শোনা যায়নি।
এই বক্তব্যেই যেন স্পষ্ট হয়ে ওঠে, তাঁর ভিতরে জমে থাকা একান্ত হতাশা। তবে এই আক্ষেপই তাঁর সৃষ্টিশীলতাকে দমাতে পারেনি। বরং তাঁর অনন্য কণ্ঠ আজও অপ্রতিদ্বন্দ্বী। বাংলা গানের আকাশে যেভাবে তিনি নিজের আলাদা ছাপ রেখে গেছেন, তা সত্যিই অনন্যসাধারণ। তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কি পারবে তাঁর মতো গায়কীর ধারাকে টিকিয়ে রাখতে? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি আশাবাদী হলেও যথেষ্ট বাস্তববাদী। তাঁর মতে, ইমন ও সোমলতা—এই দুই গায়িকার কাঁধেই এখন বাংলা গানের ভবিষ্যতের ভার।
আরও পড়ুনঃ শাহরুখ-কাজলের ম্যাজিক এবার ছোটপর্দায়! নব্বইয়ের রোম্যান্সের ছোঁয়ায় স্টার জলসার নতুন মেগা ‘কম্পাস’! কুছ কুছ হোতা হ্যায়-এর আদলে তৈরি, প্রেম-বন্ধুত্বে মোড়া এই নতুন ধারাবাহিক! ফিরলেন অর্কপ্রভ
তারা যদি আন্তরিকভাবে বাংলা গানের প্রতি ভালোবাসা দেখায়, তবে তাঁদের প্রতিভা সত্যিই বাংলা সংগীতের ঐতিহ্য বহন করতে পারবে। একজন শিল্পী হিসেবে নয়, একজন মানুষ হিসেবে লোপামুদ্রা যে সততা, স্পষ্টতা ও দায়িত্ববোধ দেখান, তা প্রশংসনীয়। তিনি কোনও ‘আড়াল’ রেখে কথা বলেন না। তাঁর কথায় উঠে আসে একজন স্বাধীন কণ্ঠস্বরের আত্মবিশ্বাস, অভিজ্ঞতা এবং শিল্পভাবনার নির্ভেজাল রূপ। তাঁর ব্যক্তিত্ব, তাঁর গানে যেমন গভীরতা তৈরি করে, তেমনি সমাজের প্রতিও রেখে যায় এক স্পষ্ট বার্তা।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।