বাংলা সিনেমার ইতিহাসে এমন কিছু মুখ আছে, যাঁরা খুব অল্প সময়ে নিজের প্রতিভা দিয়ে দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যেই অন্যতম ছিলেন মহুয়া রায়চৌধুরী। একদিকে সৌন্দর্যে মোহময়ী, অন্যদিকে অভিনয়ে দক্ষ—এই দুইয়ের মিশেলে টলিউডের এক উজ্জ্বল নাম হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তবে, উজ্জ্বলতার আড়ালে ছিল অনেক অন্ধকার অধ্যায়ও। ঠিক যেমন তাঁর মৃত্যু ঘিরে রহস্য, যেটা আজও টলিউডের বুকে একটা অমোচনীয় দাগ হয়ে রয়েছে।
চলতি বছরের ২২ জুলাই, রবিবার ছিল অভিনেত্রী মহুয়ার ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। সেই দিনটিতে আড্ডা স্টেশন-এ মুখ খুললেন অভিনেত্রী অনামিকা সাহা। স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে তিনি জানান, “মহুয়া ছিলেন দারুণ ট্যালেন্টেড। তবে তাঁর জীবনযাপন ছিল বেশ বেপরোয়া।” একসঙ্গে বহু ছবিতে অভিনয় করার স্মৃতি ঝালিয়ে নিতে নিতে অনামিকা বলেন, “মহুয়া আমাকে সবসময় বলত বিয়ে করো, একজন গার্জিয়ান থাকা দরকার। যেমন ও নিজে তিলক চক্রবর্তীর সঙ্গে বিয়ে করেছিল।”
অনামিকার বক্তব্যে উঠে আসে মহুয়ার উগ্র জীবনযাপন। তিনি বলেন, “মহুয়া মাঝে মাঝে ড্রিঙ্ক করত, একটু ঝুঁকিপূর্ণ জীবন ছিল ওর। কিন্তু ওর মত অভিনেত্রী পাওয়াটা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার ছিল। অভিনয়ে ও ছিল নিখুঁত, ডেডিকেটেড। এমন প্রতিভা সহজে আসে না।” তবুও পারিপার্শ্বিক চাপ, সম্পর্কের টানাপোড়েন আর মানসিক অবসাদ তাঁকে যেন এক ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছিল।
১৯৮৫ সালের ২২ জুলাই। সকালটা যেন টলিউডের ইতিহাসে অভিশপ্ত দিন হয়ে ওঠে। আগুনে ঝলসে যাওয়া প্রায় ৮০ শতাংশ দগ্ধ দেহ, নিথর হয়ে পড়ে স্টুডিয়োপাড়ায়। তাঁর মৃত্যুকে ঘিরে তৈরি হয় বহু জল্পনা। নিছক দুর্ঘটনা, না কি পরিকল্পিত কিছু—তা নিয়ে আজও রহস্য রয়েই গেছে। শোনা যায়, মৃত্যু অবধি তাঁর হাতে ছিল ২২টি ছবির কাজ। সবে মাত্র ২৭ বছর বয়সে এমন পরিণতি—ভাবলে আজও শিউরে ওঠেন টলিপাড়ার প্রবীণরা।
আরও পড়ুনঃ “একই পরিবারে বড় হচ্ছে, তবুও কত আলাদা!”— ইউভান-ইয়ালিনিকে নিয়ে ব্যক্তিগত অনুভব জানালেন শুভশ্রী! একসঙ্গে বড় হলেও মনের গঠন আলাদা, সন্তানের স্বভাব নিয়ে কি বললেন অভিনেত্রী? দুই সন্তানের কোনটা দুষ্টু কোনটা শান্ত জানেন?
অভিনেত্রী অনামিকা সাহা বলেন, “মহুয়া শুধু বড় মাপের অভিনেত্রীই ছিলেন না, একজন বড় মনের মানুষও ছিলেন। কিন্তু সমাজ, সম্পর্ক আর চারপাশের জটিলতা হয়তো তাঁর পক্ষে সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়েছিল।” আজও দর্শকদের মনে তাঁর অভিনয়, সৌন্দর্য এবং হঠাৎ চলে যাওয়া নিয়ে রয়ে গেছে অসংখ্য প্রশ্ন, কিছু উত্তরহীন রহস্য আর একরাশ হাহাকার। মহুয়ার জীবন যেন এক অসমাপ্ত উপন্যাস—যার প্রতিটি পাতায় লেখা রয়েছে যন্ত্রণা আর অতুলনীয় প্রতিভার কাহিনি।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।