গর্ভেই শেষ হয়ে গেল উত্তম-সুপ্রিয়ার অমূল্য স্বপ্ন, জন্ম নিল না ‘ভ্রমর’! যে সন্তানকে ঘিরে স্বপ্ন দেখেছিলেন মহানায়ক, তাকে কখনও দেখতেই পেলেন না সুপ্রিয়া! অশ্রুজলে ভেসে গিয়েছিল কিংবদন্তির সম্পর্ক! কেন হল এমন পরিণতি?

মহানায়ক উত্তম কুমার (Mahanayak Uttam Kumar) এবং কিংবদন্তি অভিনেত্রী ‘সুপ্রিয়া চৌধুরী’র (Supriya Devi) প্রেমের গল্প বাংলার চলচ্চিত্রের ইতিহাসের এক অমূল্য অধ্যায়। এই সম্পর্ককে ঘিরে যেমন ছিল সীমাহীন ভালোবাসা, তেমনই ছিল বিতর্ক ও কটূক্তির ঝড়। সমাজের চোখে তাঁদের সম্পর্ক তেমন গ্রহণযোগ্য ছিল না। নিন্দুকরা অনেক সময় সুপ্রিয়াকে অপমান করে কঠিন শব্দ ব্যবহার করলেও, তিনি কখনও পাল্টা জবাব দেননি। কারণ উত্তমের প্রতি তাঁর অনুরাগ ও ভরসা ছিল জীবনের অন্য সবকিছুর চেয়ে বড়।

এই ভালোবাসার গভীরতা এক সময় এতটাই তীব্র হয়ে ওঠে যে, মহানায়ক নিজের সংসার ছেড়ে একরাতে সুপ্রিয়ার দোরগোড়ায় এসে দাঁড়ান। স্ত্রীর ঘর ছেড়ে এক নতুন সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যাওয়া সহজ ছিল না, কিন্তু সুপ্রিয়া তাঁকে গ্রহণ করেছিলেন বিনা প্রশ্নে। তিনি জানতেন, সামনে আরও অনেক তীর্যক মন্তব্য আসবে, তবুও সেই প্রেমকে আটকে রাখেননি। উত্তমও তাঁর ভরসার প্রতীক হিসেবে সমস্ত সুখ-দুঃখের কেন্দ্রবিন্দু বানিয়েছিলেন সুপ্রিয়াকে।

তবে জীবনের সুখ শুধু ইচ্ছেমতো আসে না, দুঃখকেও সমানভাবেই গ্রহণ করতে হয়। অনেক চেষ্টার পর, সুপ্রিয়ার গর্ভে একবার নতুন জীবনের সঞ্চার হয়েছিল। উত্তম নাকি সেই সন্তানের নামও ভেবে রেখেছিলেন— যদি কন্যা হয় তবে নাম হবে ‘ভ্রমর’। কিন্তু নিয়তির নির্মম লিখনে সেই সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার আগেই ঝরে যায়। এই ক্ষতি শুধু একজন মায়ের নয়, একজন বাবার স্বপ্নকেও ভেঙে চুরমার করে দেয়। তাঁদের জীবনে এই অধ্যায় হয়ে ওঠে গভীর দুঃখের প্রতীক।

প্রসঙ্গত, বহু বছর এই কাহিনি রয়ে গিয়েছিল আড়ালে। সুপ্রিয়া খুব একটা প্রকাশ্যে আনেননি এই দুঃসহ স্মৃতি। কিন্তু এক বিশেষ অনুষ্ঠানে, পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ এবং অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের সামনে আবেগে ভেসে হঠাৎই তিনি স্বীকার করেছিলেন সেই হারানো সন্তানের কথা। ক্যামেরার আলোয় তাঁর চোখে জল, কণ্ঠে কাঁপন— যেন এক মুহূর্তে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিল অতীতের যন্ত্রণা। তাঁর এই স্বীকারোক্তি শুনে উপস্থিত সকলে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।

আরও পড়ুনঃ “সিনেমা ডাকে না, সিরিয়ালই বাঁচিয়ে রেখেছে!” “চরিত্র বাছাইয়ের মতো আর্থিক অবস্থা নেই এখন!”— বড় পর্দায় অনুপস্থিতি নিয়ে অকপট চন্দন সেন! টলিউডের বর্তমান পরিস্থিতিতে, শিল্পীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা অভিনেতার!

উল্লেখ্য, উত্তম-সুপ্রিয়ার সম্পর্ক ছিল সমাজের নিয়মের বাইরে, কিন্তু আবেগে ভরপুর। ভালোবাসার পাশাপাশি তাঁরা ভাগ করে নিয়েছিলেন দুঃখ ও ক্ষতিও। এক অসমাপ্ত সন্তানের গল্প তাঁদের প্রেমকে এক ভিন্ন মাত্রায় স্থাপন করে। হয়তো তাঁদের জীবনে অনেক সুখ এসেছিল, আবার সেই সুখের মাঝেই ছিল অগণিত শূন্যতা। তবুও আজও এই জুটির নাম উচ্চারণ করলে মনে ভেসে ওঠে প্রেম, ত্যাগ, নির্ভরতা আর এক গভীর বেদনার সুর, যা বাংলা চলচ্চিত্র জগতের ইতিহাসে চিরকাল অমলিন থাকবে।

Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।