বাংলা সংস্কৃতি জগতে বহু বছর ধরে নিজস্ব কণ্ঠ ও অভিনয়ের ছাপ রেখে চলেছেন সুজয় প্রসাদ চ্যাটার্জী। মঞ্চ থেকে শুরু করে সিনেমা, কবিতা থেকে সংগীত—সব ক্ষেত্রেই তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে দর্শকের মন জয় করেছেন। তবে শুধুমাত্র অভিনয়ে থেমে থাকতে চান না তিনি, কারণ শিল্পের অনিশ্চিত জগতে একটি স্থায়ী ভবিষ্যতের পথ খুঁজে পাওয়াও তাঁর কাছে সমান জরুরি। আর তাই অভিনয়ের পাশাপাশি নানা নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন সুজয়।
অভিনয়ের পাশাপাশি সম্প্রতি পরিচালনায়ও হাত পাকিয়েছেন এই শিল্পী। ইংরেজি নাটক ‘What I mean is…’ দিয়ে তাঁর মঞ্চ নির্দেশনায় অভিষেক হয়েছে। নারী-পুরুষ সমতার প্রশ্ন এবং গৃহস্থালির হিংসার মতো জটিল সামাজিক বাস্তবতাকে তিনি নাটকের ভেতর তুলে ধরেছেন। ৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে কেন্দ্র করে এই নাটকের বিশেষ প্রদর্শনী হয়। দর্শকের প্রতিক্রিয়াও ইতিবাচক, যা সুজয়ের আগামী পথচলার আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
শুধু মঞ্চেই নয়, ক্যামেরার পেছনেও কাজ শুরু করেছেন সুজয়। তাঁর পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘HOME’ ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক স্তরে সাড়া ফেলেছে। এই ছবিটি পরিচয়, বিচ্ছিন্নতা এবং নিরাপদ আশ্রয়ের প্রশ্নকে ঘিরে তৈরি। আগামী ২৩ জুন, ২০২৫-এ ছবিটি প্রদর্শিত হবে লন্ডনের House of Commons-এ—যা নিঃসন্দেহে বাংলা থেকে উঠে আসা এক শিল্পীর জন্য বিরল সম্মান।
সুজয়ের শিল্পীসত্তা কেবল বাংলা কিংবা ভারতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে ‘Voices of Rebellion and Harmony’ শীর্ষক এক বিশেষ শিল্প সন্ধ্যায় অংশ নেন। সেখানে কবিতা, কথন আর পারফরম্যান্সের মাধ্যমে তুলে ধরেন শিল্পের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পরিচয়ের রাজনীতি। এক কথায়, শিল্পের সীমানা ভেঙে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজের অবস্থান দৃঢ় করছেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ ‘কেউ আর ডাকে না, এখন তেমন কাজের অফারই আসে না’, শারীরিক অসুস্থতাকে সঙ্গী করে তাই কি চিরতরে পর্দা ছাড়লেন অভিনেতা তমাল রায় চৌধুরী?
যদিও এই সাফল্যের ভেতর দিয়ে এগোচ্ছেন সুজয়, তবুও তিনি বাংলা চলচ্চিত্র জগতের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এমনকি শকুন্তলা বড়ুয়াকে নিয়ে তিনি বলেছেন যে ‘বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে রাঘব বোয়ালরাও এখন খেতে পায় না।’কাজের সুযোগের সীমাবদ্ধতা এবং স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে তাঁর খোলামেলা মন্তব্য ইতিমধ্যেই আলোচনায় এসেছে। তাই অভিনয়ের পাশাপাশি নাটক, পরিচালনা এবং আন্তর্জাতিক প্রকল্পে যুক্ত হয়ে তিনি নিজের ভবিষ্যৎকে আরও নিশ্চিত করতে চাইছেন। সুজয়ের কথায়—শিল্পের পথে চলতে গেলে শুধু মঞ্চ বা ক্যামেরার আলো নয়, দরকার দূরদর্শী পরিকল্পনারও।